×

অর্থনীতি

মৎস্য চাষীদের মাঝে প্রণোদনার টাকা বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২, ০৫:৫৮ পিএম

মৎস্য চাষীদের মাঝে প্রণোদনার টাকা বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট এর অধীনে মৎস্য চাষীদের মাঝে টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরা জেলার চার উপজেলায় টাকা বিতরণে অনিয়ম হয়েছে।

জানা গেছে, সাতক্ষীরার তালা, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও দেবঘাটা উপজেলায় মৎস্যচাষীদের মাঝে প্রজেক্টের টাকা বিতরণের তালিকায় ভুয়া নাম ও মোবাইল নাম্বার বসিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত প্রায় সাড়ে ৬০০ জন মৎস্যচাষীর তালিকা ধরে তাদের সাথে কথা বলা হয়। ‌‌ এ তালিকায় অনেকে জানিয়েছেন তাদের ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি থাকলেও তারা কোন টাকা পাননি। তালিকায় তাদের নাম উঠলেও তাদের ফোনে টাকা পৌঁছেনি। ‌‌তবে এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা প্রকৃত তালিকায় থাকা ব্যক্তি কিনা বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ‌শুধুমাত্র এই তালিকা ধরে মৎস্য চাষীদের ফোন নম্বরে কল করা হয়েছিল।

দেবহাটা উপজেলার চর গ্রামের সাফিয়া আক্তার মিরা নামে এক নারীর স্বামী মসজিদুল ইসলাম জানান, তার গ্রামের মেম্বার তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ও ছবি নিয়েছে। কিন্তু তিনি কোন টাকা পয়সা পাননি। তার মতই কাণ্ড ঘটেছে কার্তিক চন্দ্র সরকার ও চায়না খাতুনের কপালে। ‌তাদের অভিযোগ তারা কোন টাকা পাননি।

অন্যদিকে দেখা গেছে, একই গ্রামের সকলে টাকা পেয়েছেন কিন্তু পাশের গ্রামের কেউ টাকা পায়নি। কিন্তু তালিকা তাদের নাম উঠেছে। ‌‌

কালিগঞ্জ উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের মৎস্য চাষী আবু মুসা, নুর আলম, প্রশান্ত সরকার, রবীন্দ্রনাথ মৃধা, শ্রীকান্ত, গিয়াস উদ্দিন ছাড়াও নারায়ণপুরের রবিউল মিন্টু ও আবু সিদ্দিক টাকা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। ‌‌‌‌‌

এই উপজেলার মৎস্য চাষে মিন্টু সরকার জানান, তার গ্রামে যারা প্রকৃত মৎস্য চাষী তাদের অনেকে টাকা পেলেও তা পরিমাণে কম পেয়েছেন। ‌তিনি অন্যদের সাথে টাকার পাবার আশায় ভোটার আইডি কার্ড দিয়েছিলেন কিন্তু টাকা পাননি।

পলাশ কাজী নামে এক ব্যক্তিকে এই উপজেলায় মৌতলা এলাকার মৎস্যচাষী হিসেবে দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সেই এলাকার কেউ না।

শ্যামনগর উপজেলার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার যাওয়া খালি গ্রামের ৪ মৎস্য চাষীর নাম তালিকায় আসলেও তারা কেউ টাকা পাননি। তাদের মধ্যে একজন রবীন্দ্রনাথ মৃধা। তার মোবাইলে ফোন করা হলে ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যক্তি জানান তার নাম হৃদয়। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তিনি মৎস্যচাষী নন। এই গ্রামের মৎস্যচাষী রুহুল আমিন জানান, যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তারাই টাকা পেয়েছে কিন্তু যারা প্রকৃত মৎস্য চাষী তারা কেউ টাকা পাননি।

এই উপজেলার বেতাগী গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন হালদার জানান, তার গ্রামের মেম্বার তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ও ফটোকপি নিয়েছিল। তার মতো আসলাম হোসেনও কাগজপত্র জমা দেন কিন্তু টাকা পাননি। অন্যদিকে তাদের গ্রামে বসবাস করে আলমগীর নামে এক ব্যক্তি যিনি বর্তমানে ঢাকা বসবাস করেন। তাকে সেখানকার মৎস্য চাষী দেখিয়ে টাকা পাঠানোর দাবি করা হয়েছে। এছাড়াও মৎস্য চাষী না হয়েও রথীকান্ত মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন বলে তালিকায় নাম উঠেছে।

উপজেলের তালিকায় যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ রমিছা বেগম, সাবিনা আক্তারসহ অনেকের নাম ঠিকানার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এই তালিকা ধরে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলা হলে তাদের অনেকে জানিয়েছেন, মৎস্য কর্মকর্তারা তাদের নামের তালিকা নিয়ে গেছেন। সেই তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ‌কিন্তু ঢাকা থেকে টাকা পাঠানোর সময় তাদের মোবাইলে কোন টাকা পাঠানো হয়নি, অথচ তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর তালিকায় উঠেছে বলে তারাও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন‌।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান বিষয়টি কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত। এ কারণে প্রকৃত মৎস্য চাষীরা টাকা পেয়েছেন কিনা বিষয়টি যাচাই করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারা এও জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে টাকা পাঠানোর আগে তালিকা থেকে ব্যক্তিদের নাম মোবাইল নম্বর যাচাই করা হয়েছে। তারপর সেই টাকা পাঠানো হয়। এরপরও কেউ টাকা না পেলে অভিযোগ করতে পারেন কিন্তু এমন কেউ অভিযোগ করেনি। ‌

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App