×

সারাদেশ

ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২, ০৪:০৪ পিএম

ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর কলোনী সড়কে বন্যার পানি। দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। ছবি: ভোরের কাগজ

প্রায় দুই সপ্তাহ বিদ্যুৎ, পানি, মোবাইল যোগাযোগবিহীন, খেয়ে না খেয়ে, অনাহারে অর্ধ্বাহারে, বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে হাঁটু পানি কোমড় পানির সঙ্গে প্রাণপণ যুদ্ধ করে কোন রকমে বাড়ি ফিরতে, না ফিরতেই তৃতীয় দফায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

বুধবার দিনে ও রাতে এবং বৃহস্পতিবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির কারণে সুনামগঞ্জবাসী ফের বন্যার কবলে পড়েছেন। এ যেন হাওরবাসীর উপর অনেকটাই মরার উপর খাড়ার ঘাঁ এর মতো। একের পর এক এতো ভয়াবহ দুর্যোগ সুনামগঞ্জবাসী আর কোন দিন দেখেনি।

গত দুদিন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়ে গিয়ে নতুন করে মানুষের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, নতুনপাড়া, তেঘরিয়া, পশ্চিম হাজী পাড়া ও মরাটিলার নিচু এলাকাগুলোতে আবারো বন্যার পানি উঠেছে।

গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জ শহরসহ জেলার ১১ উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। মাঝখানে এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে ২৭ জুন থেকে আবারো শুরু হয় বৃষ্টি। একই সঙ্গে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে সুনামগঞ্জে। গত তিন দিনে সুনামগঞ্জ সুরমা নদীর পানি ৩২ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭.৭৫ সে.মি.। বুধবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ১৮৫ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও ছাতক উপজেলা শহরের কাছে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৮৩ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য উপজেলার নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সুনামগঞ্জবাসী আবারও বাড়িঘর ছেড়ে পানিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা অপর্না দেবী জানান, বন্যার পানি কমে যাওয়ায় গত চার দিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে আবার ঘরে পানি ঢুকেছে। এভাবে পানি বাড়লে আবার ঘর ছাড়তে হবে।

শহরের নতুনপাড়ার বাসিন্দা শিশির তালুকদার বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আবার বন্যার পানি ঘরের কাছে চলে এসেছে। গত দুুদন যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বাড়ি ছেড়ে আবারও আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হবে।

জেলায় মাঝখানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো জেলার বিভিন্ন উপজেলার রাস্তাঘাট, বাড়িঘরে পানি আছে। মানুষজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। কিছু কিছু পরিবার ঘরে ফিরলেও, যাদের বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারা এখনও বাড়ি ফিরতে পারছে না।

এখনো জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর উপজেলার নিচু এলাকার মানুষ রয়েছেন পানিবন্দী। এসব উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে এখনো আছে বন্যার পানি। জেলা ও উপজেলার মূল সড়কগুলো ভেসে উঠলেও প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রামীণ রাস্তাঘাট গুলো এখনো রয়েছে পানির নিচেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাসহ ১২ উপজেলাই বন্যাকবলিত। গত কয়েকদিন বৃষ্টিপাৎ না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। এখন আবার বৃষ্টি হওয়াতে পানি কিছুটা বাড়ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সুনামগঞ্জে আগের মতো ভয়াবহ বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App