×

জাতীয়

প্রবাসীদের গলার কাঁটা পুরনো পাসপোর্ট!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২, ০৮:৩৬ এএম

প্রবাসীদের গলার কাঁটা পুরনো পাসপোর্ট!

পুরনো পাসপোর্ট

নতুন তথ্যে ই-পাসপোর্ট ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরে এক নিয়ম হলেও প্রবাসীদের ক্ষেত্রে আরেক নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। ফলে এনআইডি ও বিআরসির তথ্যে নতুনভাবে পাসপোর্ট করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি বা রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। আগের পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে বর্তমান এনআইডি ও বিআরসির তথ্যে গরমিল থাকাই মূল গলদ বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। অথচ দেশের অভ্যন্তরে এনআইডি, বিআরসি ও যৌক্তিক প্রমাণাদি দিয়ে এমআরপি রি-ইস্যু করতে পারছেন সবাই।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এ দ্বৈতনীতি ভোগান্তিতে ফেলেছে হাজার হাজার প্রবাসীকে। এই সমস্যার সমাধান সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারছে না পাসপোর্ট অধিদপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি হওয়া পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, তথ্য সংশোধনপূর্বক দেশে ও বিদেশে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর আবেদনে নাম (নিজ, বাবা, মা) পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এনআইডি, বিআরসি কিংবা সনদপত্র বিবেচনা করতে হবে এবং বয়স পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছরের ব্যবধান পর্যন্ত বিবেচনা করা যাবে। এরপরে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা আরেকটি পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীরা এনআইডি ও পাসপোর্টের মধ্যে তথ্যের গরমিল হলে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত তথ্য (নাম, বাবা-মায়ের নাম, বয়স ইত্যাদি) অনুযায়ী পাসপোর্ট দেয়া যাবে। এই পরিপত্র জারি হওয়ার পর থেকে দেশের অভ্যন্তরে যারা আবেদন করছেন, তারা ৫ বছরের কয়েক গুণ বেশি সময় ব্যবধান থাকলেও এমআরপি রি-ইস্যু করা হচ্ছে। অথচ ওই পরিপত্রে প্রবাসীদের কথা উল্লেখ না থাকায় একই সমস্যায় যখন প্রবাসীরা পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে যাচ্ছেন, তখন পুরনো পাসপোর্টের সঙ্গে তথ্য না মেলায় পড়ছেন বিপাকে। দেশের অভ্যন্তরে ও প্রবাসীদের জন্য এমন দ্বৈতনীতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। তারা অচিরেই এ সমস্যার সমাধান চান। অন্যথায় দেশে ফেরত আসতে হবে অনেক প্রবাসীকে। এতে একদিকে ক্ষতির মুখে পড়বে ওই প্রবাসীর পরিবার, অন্যদিকে প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রবাসে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ কাজের ভিসা নিয়ে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে গিয়েছেন। আবার অনেকে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। আবার অনেকের ভিসার মেয়াদ থাকলেও পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় আছেন সমস্যায়। এসব জটিলতার কারণে দ্বারস্থ হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে। তাদের আবেদন করা পাসপোর্টের কোনো কূলকিনারা না পেয়ে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করা ছাড়াও আতঙ্কে দিন পার করেছেন।

এই পরিপত্রের গ্যাড়াকলে পড়ে অসংখ্য প্রবাসী চোখে অন্ধকার দেখছেন। আবার অনেকেই এই আইনের সংশোধন করার জোর দাবি তুলছেন। এদিকে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এ আইনটি সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, যারা আমাদের দেশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তাদের জন্য আইনটি অবশ্যই সহজ হওয়া উচিত। এমনকি যদি এ আইনটি সংশোধন করে পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে সহজলভ্যতা না আসে, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের দেশে রেমিট্যান্স কমতে থাকবে, অন্যদিকে অনেক পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রবাসীদের এ সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আইয়ূব চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, যারা যে তথ্যে পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাসে অবস্থান করছেন, তারা শুধু তাদের তথ্য সংশোধন করতে পারবেন কিন্তু পরিবর্তন নয়। আমরা দেখেছি অনেকে বিদেশে গিয়ে রাতারাতি তথ্য পরিবর্তন করে আবেদন করছেন তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ আমাদের তথ্য ভাণ্ডারে আগের তথ্যের সঙ্গে বর্তমান দেয়া তথ্যের কোনো মিল নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App