×

মুক্তচিন্তা

পরিবেশ সূচকে ডেনমার্ক অনুসরণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২২, ০১:২২ এএম

পরিবেশ সূচকে ডেনমার্ক অনুসরণীয়
সম্প্রতি পরিবেশগত পারফরমেন্স সূচকের (ইপিআই) দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের ১৮০টি দেশের পরিবেশগত পারফরমেন্স তুলনা ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ইপিআই-২০২২। এবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে পরিবেশগত পারফরমেন্সে সবার শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্ক। তাদের ইপিআই স্কোর ৭৭ দশমিক ৯০। গত এক দশকে দেশটির ইপিআই স্কোর বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯০। ডেনমার্ক উত্তর ইউরোপের একটি নর্ডিক দেশ। এটি সাংবিধানিকভাবে একক রাষ্ট্র, যা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। ইউরোপীয় ডেনমার্ক হলো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর সবচেয়ে দক্ষিণে, সুইডেনের দক্ষিণ-পশ্চিমে, নরওয়ের দক্ষিণে এবং জার্মানির উত্তরে অবস্থিত। এটি একটি উপদ্বীপ এবং ৪৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ২০২০ সালে যার জনসংখ্যা ছিল ৫.৮ মিলিয়ন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) প্রস্তাবিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ডেনমার্কের বায়ুর গুণমান সূচক বায়ুর গুণমানকে ‘ভালো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ২০১৯ সালে সবচেয়ে নোংরা শহরের বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে, ডেনমার্ক মোট ৯৮টি দেশের মধ্যে ৮৪তম স্থানে ছিল। অনুরূপভাবে পরিবেশ পারফরমেন্স সূচক ২০২২ অনুসারে, ডেনমার্ক ৮০.৫ স্কোর নিয়ে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ১২তম অবস্থানে রয়েছে। ডেনমার্ক ইউরোপের সেরা পানীয় জলের গর্বিত মালিক এবং ভাগ্যক্রমে কয়েক দশক ধরে পরিষ্কার পানির অ্যাক্সেস করার জন্য কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি। ডেনমার্কে পানির দাম ঐতিহাসিকভাবে বেশি। পানির উচ্চমূল্য অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারকে বাধা দেয়, পানি সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং গত ২০ বছরে পানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। ১৯৮৯ সালে, পানির ব্যবহার গড়ে প্রতিদিন ১৭০ লিটার ছিল, যেখানে ২০১২ সালে এই সংখ্যাটি ১৪৪-এ নেমে আসে। পরিবেশ পারফরমেন্স সূচক ২০২২ অনুসারে, পানি সম্পদেও ডেনমার্ক প্রথম স্থানে অবস্থান করছে যেখানে এর স্কোর ১০০.০ এবং স্যানিটেশন এবং পানীয় জলে ১৩তম যেখানে ডেনমার্কের স্কোর ৯৭.৫। বর্জ্য ছাড়া ডেনমার্ক হলো সরকারের বর্জ্য নিয়ে একটি নতুন পদ্ধতির উপস্থাপনা। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে, ডেনমার্কে এটি প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবারের বর্জ্য পোড়াচ্ছে। এখন ডেনমার্ক এটি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। সরকার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যে ২০২২ সালে তারা সেখানে গৃহস্থালির ৫০ শতাংশ বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করবে। এর অর্থ হলো ১০ বছরেরও কম সময়ে ডেনমার্কে গৃহস্থালির বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহার করার হার তাদের দ্বিগুণ করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশগত পারফরমেন্স সূচকে ডেনমার্ক ৬৮.৩ স্কোর নিয়ে ১৩তম স্থানে অবস্থান করছে। অন্যদিকে পরিবেশগত পারফরমেন্স সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৭তম হয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৩ দশমিক ১০। গত এক দশকে বাংলাদেশের পয়েন্ট কমেছে ১ দশমিক ৯০। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান পেয়েছে ২৪ দশমিক ৬০। এক দশকে তাদের পয়েন্ট বেড়েছে ১ দশমিক ৪০। তবে প্রতিবেশী ভারতের পয়েন্ট ০.৬০ কমে দাঁড়িয়েছে সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৯০। বাস্তুতন্ত্রের প্রাণশক্তিতে গত এক দশকে ৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট কমেছে বাংলাদেশের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৯ দশমিক ৪০ পয়েন্ট এবং অবস্থান ১৫৯তম। বাস্তুতন্ত্র পরিষেবায় গত এক দশকে বাংলাদেশ পয়েন্ট হারিয়েছে ১৮ দশমিক ৭০। এক্ষেত্রে দেশের সংগ্রহ ১৪ দশমিক ৯০ পয়েন্ট, অবস্থান ১৫৫তম। ফিশারিজে এক দশকে ১০ পয়েন্ট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৫ দশমিক ১০, অবস্থান ২০তম। স্বাস্থ্যে গত এক দশকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২ দশমিক ৬০ বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ১০, অবস্থান ১৬৬তম। বাতাসের মানের হিসাবে গত এক দশকে বাংলাদেশের পয়েন্ট বেড়েছে ০.২০। ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট নিয়ে এ ক্ষেত্রে অবস্থান ১৭৩তম। বিশুদ্ধ পানি পানের ক্ষেত্রে গত এক দশকে ৫ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়েছে বাংলাদেশের। ২৭ দশমিক ৪০ পয়েন্ট নিয়ে এ তালিকায় রয়েছে ১২৯তম স্থানে বাংলাদেশ। পরিবেশে ভারি ধাতুর উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত এক দশকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৯ দশমিক ৪০ বেড়ে ২২ দশমিক ৮০ হয়েছে, অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৭২তম। ডেনমার্ক এক্ষেত্রে ১০০.০ স্কোর নিয়ে প্রথম। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। এতে গত এক দশকে এক পয়েন্ট বেড়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০ দশমিক ৫০, অবস্থান ১৬০তম। জলবায়ু নীতির ক্ষেত্রে কিছুটা অবনতি হয়েছে। এ বিষয়ে গত এক দশকে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৬০ পয়েন্ট হারিয়েছে। ১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট নিয়ে অবস্থান এখন ১৭১তম যেখানে ডেনমার্ক ৯২.৪ স্কোর নিয়ে বিশ্বে প্রথম। এবারের পরিবেশগত পারফরমেন্স সূচকে যেহেতু ডেনমার্ক ভালো করেছে সেহেতু তাদের নেয়া কিছু পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। যেমন : ডেনমার্ক বায়ু প্রযুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এবং আরো ১০০টি বড় বায়ু টারবাইন নির্মাণের মাধ্যমে কোপেনহেগেনকে বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ রাজধানীতে পরিণত করা। ডেনমার্ক তাদের বায়ু ও জলজ সম্পদকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে। বাংলাদেশের কাপ্তাই এবং মহেশখালীতে জলবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ প্লান্ট থাকলেও এর পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেনমার্ককে ইউরোপের বৃহত্তম পৌর বর্জ্য উৎপাদনকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। ডেনমার্ক ২০২৪ সালের মধ্যে সমস্ত বর্জ্যরে ৭০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করার লক্ষ্য রেখেছে। বাংলাদেশ ঢাকাকে এমন একটি মডেল শহর প্রকল্প হিসেবে নিতে পারে যেখানে বর্জ্যকে বায়োগ্যাস এবং সারের বিকল্পে রূপান্তর করা যাবে। ডেনমার্ক ‘সবুজ কর সংস্কার’ গ্রহণ করেছে। পরিবেশের কল্যাণে বাংলাদেশ যা অনুসরণ করতে পারে। দূষণকারীদের তাদের দূষণের জন্য উচ্চ কর দিতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ড কর হ্রাস বা পুরস্কারের মতো প্রণোদনা পাবে। ডেনমার্ক ‘গ্রিন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট’ নিয়েছে যার লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি এবং চাকরি তৈরি করা। বাংলাদেশও এমন উদ্যোগ নিতে পারে। গবেষণা এই সম্পর্কিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যা উঠিয়ে নিয়ে আসবে এবং করণীয় দিকগুলো নির্ধারণ করে দেবে। ডেনমার্কে যাতায়াতের প্রধান বাহন দ্বিচক্রযান বা সাইকেল। বাংলাদেশে এটা সম্ভব না হলেও যানবাহনের দূষণ কমাতে এবং টেকসই সড়ক পরিবহন নিশ্চিত করতে একটি পরিবেশবান্ধব মোটরযান নীতি নিতে হবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ গ্রহণ করেছে। এর বাইরে বাংলাদেশে পরিবেশ সংক্রান্ত আলাদা আইন ও নীতি আছে। তবে আশা করি পরিবেশগত সূচকে প্রথমে থাকা ডেনমার্কের উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের পরিবেশের মানোন্নয়নে সহযোগী ভূমিকা পালন করবে। রকিবুল হুদা মজুমদার শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App