×

অর্থনীতি

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের এত টাকা গেল কীভাবে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২২, ০৮:৩৯ এএম

বৈধ বা অবৈধ অর্থ গচ্ছিত রাখতে পৃথিবীর অনেক দেশের বিত্তশালীরাই সুইস ব্যাংকগুলোকে পছন্দ করেন। বাংলাদেশের অনেক নাগরিকও সুইস ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন। ২০২০-২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে মাত্র এক বছরে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

২০২১ সাল শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (১ সুইস ফ্রাঁ =৯৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে সবার মনেই প্রশ্ন জেগেছে, দেশ থেকে বৈধভাবে এত টাকা নেয়া সম্ভব নয়। তাহলে সুইস ব্যাংকে এত টাকা গেল কীভাবে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের রাখা অধিকাংশ টাকাই অবৈধভাবে উপার্জিত। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারাও বলছেন, ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের অট্টালিকায় বসবাস করছেন। ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ নানা কৌশলে তারা বিদেশে পাচার করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন।

পাচারের বিষয়টি বাজেটেও স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সুবিধা দিয়েছেন তিনি। তবে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন না পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। দেশ থেকে টাকা বেরিয়ে গেলে তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় এবং এর আইনি প্রক্রিয়াও নেই। টাকা যাতে দেশ থেকে বেরোতে না পারে, সেই চেষ্টা করা উচিত বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) সম্প্রতি বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে তাদের দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ নামে এক প্রতিবেদনে ২০২১ সালের বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সে দেশের ২৩৯টি ব্যাংক। প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

বিএফআইইউ-এর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের কৌশলগত দুর্বলতা এবং উদার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে লন্ডারিংকৃত অর্থ সহজেই বিদেশি বিনিয়োগ হিসাবে ঢুকে পড়ে। বিএফআইইউ’র অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থপাচার সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থপাচার হয়ে থাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, সুইস ব্যাংকে যে টাকা রাখা আছে তার খুব সামান্যই হচ্ছে বিদেশে অবস্থান করা মানুষের বৈধ সম্পদ। নির্বাচনের আগে টাকা বেশি চলে যাচ্ছে কীভাবে জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এ টাকা অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে সোজসুজি যায় না। এটার একটি বড় অংশ যেমন- বাণিজ্য পুঁজি থেকে, অর্থাৎ যারা রপ্তানি করেছেন তারা পুরো টাকা দেশে আনছেন না। দ্বিতীয়ত, দেশের ভেতরে হুন্ডি একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে টাকা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App