×

খেলা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হেরে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

Icon

শামসুজ্জামান শামস

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২২, ০৩:০৪ এএম

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হেরে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

সোমবার সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়দের কাছে হেরে যান টাইগাররা

অ্যান্টিগায় টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা। সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল সাকিব বাহিনী সেন্ট লুসিয়ায় ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতা আনবে। সাদা পোশাকে টাইগাররা যে বরাবরই ব্যর্থ তা এবার উইন্ডিজ সফরে ফের প্রমাণ দিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেন্ট লুসিয়ায় টাইগারদের ১০ উইকেটের হারিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। সিরিজ হারার সঙ্গে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে সাকিব বাহিনী।

সেন্ট লুসিয়ায় প্রথম দিন থেকেই দ্বিতীয় টেস্টের লাগাম নিজের দখলে নেয় স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৩৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪০৮ রানে গুটিয়ে যায় উইন্ডিজের ইনিংস। ফলে ১৭৪ রানের লিড পায় ক্যারিবিয়ানরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ ওভারে ১৮৬ রানে গুটিয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের দ্বিতীয় ইংনিস।ফলে ১২ রান বেশি করায় ইনিংস হার এড়াতে সক্ষম হয়েছে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবিয়ানরা কোন উইকেট না হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। ১০ উইকেটের সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে উইন্ডিজের খেলোয়াড়রা। দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগার ব্যাটররা নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এই উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটার। মঙ্গলবার সেন্ট লুসিয়ায় ৫০ বলে ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। প্রথমে ইনিংসে কোন টাইগার ব্যাটার শূন্য রানে আউট না হলে ও দ্বিতীয় ইনিংসে তিন টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন এবং খালিদ আহমেদ শূন্য রানে আউট হয়েছেন। প্রথম টেস্টে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্যাক-টু-ব্যাক হাফ সেঞ্চুরি হাঁকালেও দ্বিতীয় টেস্টে তিনি ছিলেন সুপার ফ্লপ। সোহানের পর ব্যাট হাতে সফল ছিলেন নাজমুল হোসাইন শান্ত। তিনি ৪২ রানের ইনিংস খেলেন। অপর টাইগার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম ইকবাল ৪,মাহমুদ হাসান জয় ১৩, এনামুল হক বিজয় ৪, রান লিটন কুমার দাস ১৯, সাকিব আল হাসান ১৬ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ রান করেন। ক্যারিবিয়ান বোলারদের মধ্যে কেমার রোচ ৫৩ রানে ৩,জোসেফ ৫৭ রানে ৩,সিলেস ২১ রানে ৩ উইকেট লাভ করেন। এই তিন ক্যারিবিয়ান পেসার টাইগারদের ৯ উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। অপর উইকেটটি রান আউট হয়।

এর আগে টাইগার পেসার খালেদ আহমেদের কারণে সেন্ট লুসিয়া টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২৩৪ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস থেমেছে ৪০৮ রানে। টাইগার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট শিকার করে স্বাগতিকদের লাগাম টেনে ধরেন পেসার খালেদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন খালেদ আহমেদ। তার বোলিং তোপে হঠাৎই ৩ উইকেট হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল ক্যারিবীয়রা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জন ক্যাম্পবেল আর জার্মেই ব্ল্যাকউডের ব্যাটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্যারিবীয়রা।

মাত্র কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন খালেদ। প্রথম ম্যাচে এক ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। কাক্সিক্ষত ফাইফারের কাছাকাছি গিয়েও তার আর দেখা পাননি। পরের ম্যাচে এক ইনিংসে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে দমে যাননি তিনি। ক্যারিবীয়দের পেসবান্ধব উইকেটে নিজেকে মেলে ধরলেন। প্রথম টেস্টে না পারলেও দ্বিতীয় টেস্টে এসে রবিবার পেয়েছেন সেই ফাইফারের দেখা। ক্যারিয়ারে ৯ম টেস্টে এসে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে নেন ৫ উইকেট। ক্যারিবীয় ব্যাটিংয়ের ১২৭তম ওভারে বল করতে এসে তৃতীয় বলটিতেই ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন জাইডেন সিলসকে। সে সঙ্গে পূরণ হয় প্রথম ৫উইকেট নেয়ার গৌরব।

রবিবার তৃতীয় দিনের খেলা মাঠে গড়ানোর কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি শুরু হলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে খেলা বিলম্বিত হওয়ায় এদিন নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যাহ্ন বিরতি দেয়া হয়। এরপর বৃষ্টি থামলে আবার খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারও করেন খালেদ আহমেদ।

ড্যারেন সামি স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনের সকালে শুভসূচনা করে বাংলাদেশ। দিনের খেলা শুরু হওয়ার ঠিক পরের ওভারেই আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটার জশুয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। আগের দিনের ২৬ রানের সঙ্গে মাত্র ৩ রান যোগ করেই ফেরেন তিনি।

মিরাজের পর উইন্ডিজের ইনিংসে হানা দেন খালেদ। তার বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আলজেরি জোশেফ। তিনি করেন ৬ রান। দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ যখন প্রতিপক্ষের লেজ গুটানোর স্বপ্নে বিভোর, ঠিক তখনই বৃষ্টি বাগড়া দেয়।

বৃষ্টির বাধা কাটিয়ে মাঠে ফিরেই উইকেট তুলে নেন পেসার খালেদ আহমেদ। এবারের শিকার ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কাইল মার্য়াস। টাইগার পেসারের বলে সহজ ক্যাচ দেয়ার আগে ১৮ চার ও ২ ছয়ে ১৪৬ রান করেন।

মার্য়াসের বিদায়ের পরে কেমার রোচ অ্যান্ডারসন ফিলিপ ও সিলসকে নিয়ে দলকে আরো ২৪ রান এনে দেন। রোচ ১৮ রানে অপরাজিত থাকলে ৯ রান করা ফিলিপকে শরিফুল ও ৫ রান করা সিলসকে ফিরিয়ে খালেদ ক্যারিবীয়দের লম্বা ইনিংসের লাগাম টেনে ধরেন। বাংলাদেশের পক্ষে খালেদ আহমেদ ক্যারিয়ার সেরা ৫টি, মিরাজ ৩টি ও শরিফুল দুটি উইকেট নিয়েছেন তবে সাকিব আল হাসান ও এবাদত হোসেন কোনো উইকেটের দেখা পাননি।

সেন্ট লুসিয়ায় প্রথম দিন কোনোভাবেই সফরকারী বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। ব্যাটিং বিপর্যয়ের কবলে পরে দিনের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সময় ব্যাট করতে পারেনি। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১০ ওভার মোটামুটি সেট হয়ে গিয়েছিল দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়। তবে ১৩তম ওভারে মাহমুদুল হাসান জয় আউট হওয়ার পর নিয়মিত বিরতিতে সাজঘরে ফেরা শুরু করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথম সেশনে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসানকে হারিয়ে ৭৭ রান তোলে টাইগাররা। ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই অভিষিক্ত অ্যান্ডারসন ফিলিপের ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেটের শিকার হন মাহমুদুল হাসান জয়। এরপর মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ দিয়ে আলজারি জোসেফের বলে আলগা শটে আউট হওয়ার আগে দাপুটে ব্যাটিং-ই করছিলেন তামিম ইকবাল। ৯ চারে সাহায্যে ৪৬ রান সংগ্রহ করে ৪ রানের আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের ব্যাটিং ফেরে পুরনো চেহারায়। নাজমুল হোসেন ও আট বছর পর টেস্টে ফেরা এনামুল হক দুজনই আস্তে আস্তে থিতু হচ্ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত আম্পায়ার্স কলের কবলে পড়েন দুজনই। ফিলিপের বলে এনামুলের নেয়া রিভিউয়ে ইমপ্যাক্ট ছিল আম্পায়ার্স কল। কাইল মের্য়াসের বলে আউট হওয়া শান্তও আম্পায়ার্স কলেরই শিকার হয়েছিল। সাজঘরে ফেরার আগে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ রান ও মুমিনুল হকের বদলে আসা এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ২৩ রান। মাত্র ৮ বলের ব্যবধানে দলীয় ১০৫ রানে উপর্যুপরি দুই উইকেট পড়ার পর উইকেট ধরে রাখতে পারেনি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। স্কোর বোর্ডে ২০ রান যোগ হতেই সাজঘর পথ ধরেছেন তিনিও। সিলসের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে আনেন সাকিব। এরপর নুরুল হাসান সোহানও ফিরেছেন ব্যক্তিগত ৭ রানে। জোসেফের বাউন্সে পরাস্ত হয়ে জশুয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দেন সোহান। ১৩৮ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ এরপরও ২৩৪ পর্যন্ত যেতে পারে লিটন দাসের অর্ধশতক ও টেল-এন্ডে শরিফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনের ব্যাটিংয়ে ভর করে। ৬৬ বলে ক্যারিয়ারের ১৪তম অর্ধশতক পূর্ণ করা লিটন জোসেফের শর্ট লেংথে

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App