×

সম্পাদকীয়

পদ্মা বহুমুখী সেতু : আত্মমর্যাদা ও অর্থনীতির ভিত রচনার স্মারক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২২, ১২:১০ এএম

পদ্মা বহুমুখী সেতু : আত্মমর্যাদা ও অর্থনীতির ভিত রচনার স্মারক
আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঐতিহাসিক দিন। দ্বার খুলছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর। এই আনন্দ ছড়িয়েছে সব প্রান্তে। উৎসবের আমেজ সর্বত্র। পদ্মা সেতু স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন। স্বাধীনতা-উত্তর সেরা মাইলফলক। যা চমকে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। এ গৌরবের অংশীদার আমরাও। পৃথিবীতে অনেক সেতু হয়েছে, সামনেও হবে, কিন্তু পদ্মা সেতু আলাদা কেন? প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু পশ্চিমা সভ্য দেশগুলোর মুখে থাপ্পড়। কারণ তারা পদ্মা সেতুকে রুখতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্র করে। ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরেও যায় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সরকারও বিশ্বব্যাংককে আর এ নিয়ে কোনো অনুরোধ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন আমাদের টাকায় হবে পদ্মা সেতু। সমালোচনায় জল ঢেলে হাসিনা শক্ত হাতে হাল ধরলেন পদ্মা সেতুর। সফলও হলেন। একজন সুযোগ্য নেতা দেশকে, জনগণকে কতখানি সামনে নিয়ে যেতে পারেন তার উদাহরণ শেখ হাসিনা। ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া এবং অপর অংশ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। নির্মাণে মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মাতে এ সেতু নির্মাণে অনেক আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এ সেতু বিশ্বের বিস্ময়। একই সঙ্গে রেল ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে একে একে সেতু হয়েছে। মানুষের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। পণ্য পরিবহন গতি পেয়েছে। বড় বাধা ছিল পদ্মা পারাপার। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সে দুঃখ ঘুচে গেল। সেতুটি দিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রধান ১০টি মহাসড়কের ৯টিই ফেরি পারাপারের ভোগান্তিমুক্ত হবে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত নিয়ে আসবে পদ্মা সেতু। এই সেতু চালু হলে তা দেশের পর্যটন খাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এতে করে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা কিংবা সুন্দরবন ভ্রমণের সময় অনেকটা কমে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, সেতুটি দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। কারণ পদ্মা সেতুতে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াবে। সরবরাহ ব্যবস্থাতেও উন্নতি আসবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি হিসেবে তার বিকাশে পদ্মা সেতু হবে আত্মমর্যাদা ও অর্থনীতির ভিত রচনার প্রতীক। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের অনাগত স্বপ্ন পূরণের স্বপ্নসারথি। এ দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে ও জাতীয় একতা বৃদ্ধিতে এই সেতু মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App