×

জাতীয়

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি: উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উন্নতি. মধ্যাঞ্চলে অপরিবর্তিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২২, ১১:২২ পিএম

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি: উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উন্নতি. মধ্যাঞ্চলে অপরিবর্তিত

ফাইল ছবি

উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মধ্যাঞ্চলে রয়েছে অপরিবর্তিত। কুড়িগ্রামসহ উত্তরের সব নদনদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও নেত্রকোনায় পানি কমলেও এখনো প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার উপর দিয়ে। এসব এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দি। খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট- কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো চর ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ ঘরবাড়িতে কম-বেশি পানি রয়েছে। সামান্য কিছু বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও কর্দমাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থার কারণে সেখানে সহসাই মানুষজন যেতে পারছেন না। এসব বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও শিশুখাদ্যের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ মানুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য পরিবার খাদ্য সংকটে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে। গো-খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকে তাদের গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া ত্রাণসামগ্রী এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় অসংখ্য মানুষ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করছেন । অপ্রতুল ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। ক্ষুধার্ত অনেক মানুষ কোমর পানি ভেঙে ত্রাণ নিতে এসে ত্রাণ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গতকাল বিকাল ৩টায় চিলমারী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার, ধরলা কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ও তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। চলতি বন্যায় জেলায় কম-বেশি ৫০টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী পানিবন্দি হন সোয়া লাখ মানুষ। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিতদের জন্য ৫৩৮ টন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশুখাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গো-খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এসব বিতরণ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও পানিবন্দি লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যার্তদের অধিকাংশই এখনো কোনো সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে জেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বন্যার পানিতে ডুবে করিমগঞ্জে রফিক নামে তিন বছরের এক শিশু মারা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ির পাশেই বানের পানিতে পড়ে ওই শিশু মারা যায় বলে জানা গেছে। কিশোরগঞ্জের ১০ উপজেলা প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ভিটেমাটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় বেশির ভাগ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। সময় মতো ত্রাণ না আসায় বন্যার্তরা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ১৫৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৩ হাজার বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও চাল, ডাল, তেল পেলেও গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা। এদিকে কিশোরগঞ্জের ধনু ও কালনী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১০ ইঞ্চি পানি কমেছে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, বন্যার্তদের সেবায় ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া মেডিকেল টিম গঠন করে জরুরি ওষুধ প্রদানসহ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। বানভাসিদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। জামালপুর : জামালপুরে কমতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। এতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার কমেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের খোলাবাড়ী এলাকায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নেমে যাওয়ায় বাড়িঘরে ফিরছেন সাধারণ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, আগামীকালের মধ্যে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে চলে যাবে। পানি আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় নদনদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকেও ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষের। এখনো পানিবন্দি প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। সময় যত যাচ্ছে দুর্ভোগ ততই বেড়ে চলেছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে কেন্দুয়া ও কলমাকান্দায় ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৬ জন। এদিকে অনেক এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য সংকট, জ¦র, পাতলা পায়খানাসহ পানিবাহিত নানা রোগবালাই।    

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App