×

জাতীয়

শাল্লায় শত শত কৃষকের গোলার ধান পানিতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২২, ০৬:২১ পিএম

শাল্লায় শত শত কৃষকের গোলার ধান পানিতে

সুনামগঞ্জের শাল্লায় বন্যায় ডুবে যাওয়া এক কৃষকের ঘর। ছবি: ভোরের কাগজ

শাল্লায় শত শত কৃষকের গোলার ধান পানিতে

সুনামগঞ্জের শাল্লায় কৃষকের গোলার ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে দেড় লাখ মানুষ। ছবি: ভোরের কাগজ

শাল্লায় শত শত কৃষকের গোলার ধান পানিতে

সুনামগঞ্জের শাল্লায় বৃহস্পতিবার কৃষকের গোলার ধান পানিতে তলিয়ে যায়। ছবি: ভোরের কাগজ

সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার পর পরই শাল্লা উপজেলায় অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়তে শুরু করেছে। একপর্যায়ে হাওরের পানি ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এর মধ্যে একাধারে পাঁচঘণ্টা বৃষ্টিপাত হওয়ায় প্রতিটি গ্রামই বন্যায় প্লাবিত হয়। ফলে পানিতে তলিয়ে যায় হাজার হাজার পরিবারের গোলার ধান। বিদ্যুৎ এবং মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ে উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা না পাওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। কেউ কেউ আবার সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে অনেকেই ত্রাণবঞ্চিত হয়েছেন। [caption id="attachment_355767" align="aligncenter" width="700"] সুনামগঞ্জের শাল্লায় বৃহস্পতিবার কৃষকের গোলার ধান পানিতে তলিয়ে যায়। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption] ত্রাণ না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নানান প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে একমাত্র বোরো ফসলের জমির আধপাকা ধান গোলায় তুললেও শেষরক্ষা হয়নি। বন্যায় তাদের ক্ষতির পরিমাণ একেবারে ষোলকলায় পূর্ণতা পেল। এই বন্যা ঋণে জর্জরিত কৃষকদের ওপর যেন মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে শত শত কৃষকের গোলার ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। টানা কয়েকদিন পানির নিচে থাকায় ধানে চারাও গজিয়েছে। উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নারায়ণপুর গ্রামের রন্টু কুমার দাস ২০ কিলোমিটার দূর থেকে নৌকা দিয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়া একশত মণ ধান দিরাই-শাল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে শুকানোর জন্য নিয়ে আসেন। তার নিয়ে আসা ওই ধানে চারা গজানোর পাশাপাশি দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, এক মণ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তিনি এগুলো শুকাচ্ছেন শুধু গরু ও হাঁসের খাবারের জন্য। তিনি আরও বলেন, নারায়ণপুর নয়াহাটি, আগুয়াই গ্রামের অনেক কৃষকের গোলার ধান পানিতে ডুবে গেছে। একই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বাসিন্দা রামপুর গ্রামের নিশিকান্ত দাস বলেন, আমার ছয়শত মণ ধানের কারি (শুদ্ধ ভাষায় গোলা) পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে তিনশত মণ ধান নষ্ট হয়ে যাবে। আনন্দপুর গ্রামের সূর্যকান্ত রায় বলেন, আমার দেড়শ মণ ধানের মধ্যে কিছু ধান আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে পেরেছি। আরেও একশত মণ ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পোড়ারপাড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেন্দ্র শুক্লবৈদ্য বলেন, তার গোলার চারশত মণ ধানের মধ্যে তিনশত মণ ধানের ক্ষতিসাধন হতে পারে। [caption id="attachment_355765" align="aligncenter" width="700"] সুনামগঞ্জের শাল্লায় বন্যায় ডুবে যাওয়া এক কৃষকের ঘর। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption] এছাড়া বাহাড়া নতুনহাটি, সুখলাইন নতুনহাটি, নতুন যাত্রাপুর, পোড়ারপাড়, হরিনগর, শান্তিপুর, তাজপুর, মন্নানপুর, মেঘনাপাড়া, খল্লি, ভেড়াডহর, প্রতাপপুর, নাসিরপুর, ডুমরা, আঙ্গারোয়া নতুনহাটি, নোয়াগাঁও, ভাটগাঁও, মুছাপুর, মির্জাপুর নতুনহাটি, হরিপুর নতুনহাটি, শাল্লা ইউনিয়নের দামপুর নতুনহাটি, মনুয়া নতুনহাটি, হোসেনপুর, কাদিরপুর নতুনহাটি, আদিলপুর, রাজনগর, শান্তি নগর, চব্বিশা নতুনহাটি, দেয়ালেরকান্দা, গোবিন্দপুর নতুনহাটি, রৌয়া নতুনহাটি, সীমেরকান্দা, গ্রাম শাল্লা নতুনহাটি, হবিবপুর ইউপির আগুয়াই, শাসখাই, মৌরাপুর, মার্কুলী, টুকচাঁনপুর, রামপুর, নিয়ামতপুর, চরগাঁও, নোওয়াগাঁও, হবিবপুর-ধীতপুর, আনন্দপুর, চাকুয়া, আটগাঁও ইউপির মির্জাপুর, দাউদপুর, রাহুতলা, মামুদনগর, শরীফপুর, সরমা, বাজারকান্দি নতুনহাটি, ইয়ারাবাদ, নিজগাঁও, সোনাকানিসহ উপজেলার আরও অনেক গ্রামের কৃষকের গোলার ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বন্যার পানিতে ধানী জমি তলিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ সরকার বলেন, প্রলয়ঙ্করী এই বন্যায় কৃষকের হাজার হাজার মণ ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বহু কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে প্রণোদনা দিতে হবে। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস বলেন, এই মহাদুর্যোগে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে আমি বলবো, আপনি ধানের ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা প্রস্তুত করে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেন। শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার মিয়া বলেন আমার শাল্লা ইউনিয়নেই ১৫ হাজার মণ পানিতে। এর মধ্যে তিনভাগের একভাগ ধান নষ্ট হবে। তিনিও কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করবেন বলে জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, উপজেলায় কৃষকের গোলার ধানের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনও আমাদের অজানা। তবে বিষয়টি ‍নিয়ে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে গোলার ধানের ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা তৈরি করে পাঠাবেন বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App