×

জাতীয়

টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈষম্য কমানোর দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২২, ১২:১১ এএম

২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানো এবং জীবনঘাতী তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ওপর আরো অতিরিক্ত করারোপের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সংসদে সরকারী ও বিরোধী দলের এমপিরা। তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তা অপ্রত্যুল, একই ভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনে এ খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।

একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের জন্য ধনী দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস করা ও তামাকের ওপর নাম মাত্র করারোপ করায় রাষ্ট্রের ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। তারা জানান তামাক পণ্যের ওপর আরো করারোপের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ (ডিও লেটার) দিয়েছেন ১০০ জন এমপি।

বুধবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন দাবি জানান হয়েছে। একই সাথে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের সুবিধার্তে বাজেটে ছোট ও মাঝারী শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো ও সামাজিক নিরাপত্ত খাকে আরো অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানান তারা। বাজেট বক্তৃতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাজেটে কোন নিত্য পণ্যের আমদানীর ওপর করারোপ করা হয়নি, করারোপ করা হয়েছে ধনীক শ্রেনীর মানুষের বিলাস সামগ্রির ওপর যেমন প্রসাধন সামগ্রি, গাড়ি ইত্যাদি।

তিনি বলেন, বিএনপি আমলে দরিদ্রের হার ছিল ৪১ শতাংশ বর্তমানে তা নেমে হয়েছে ২১ শতাংশে। তাদের সময় রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার, এখন হয়েছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে শিল্পের কাঁচামালে কর কমানো হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ১৩ লাখ ৪৮ হাজার দেয়া হয়েছে। যাতে দরিদ্রদের সুবিধা হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যে এবার বাজেট বাড়ানো হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।

গত বছরে বাজেট বাড়ানো হয়েছিল ১৪ শতাংশ, কিন্তু এ বছরে সেটা নামিয়ে আনা হয়েছে ১২ শতাংশে। স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে আরো বেশী বরাদ্দ দেবার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এবারের বাজেটে অর্থ আরো বাড়ানো দরকার, কোভিট নিয়ন্ত্রণে ৫ হাজার কোটি থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, কিন্তু করোনা এখনো যায়নি, এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হোক।

তিনি বলেন, ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে গবেষনায়, এতে গবেষনা এগিয়ে যাবে। দেশীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনে বাজেটে বলা হয়েছে, আশা করি আমরা দেশীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন উদপাদনে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারবো। তিনি বলেন, দেশে অসংক্রমন রোগ বেড়ে যাচ্ছে, ক্যানসার, কিডনী, হার্টের-এর জন্য আমরা ৮টি হাসপাতাল উদ্বোধন করেছি। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ, ডায়ালাইসিস এসব সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রনে ব্যবহৃত যে সমস্ত আইটেম লাগে তাতে কিছু করারোপ করা হয়েছে- যেমন মাক্স ও সেনিটাইজার ইত্যাদি, এসবের ওপর কর তুলে নেবার দাবি জানান জাহিদ মালেক। তিনি তামাকের ওপর বেশী করে করারোপ করা ও পলিথিন ব্যাগের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব জানান।

তিনি বলেন, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে ২৮ কোটি ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমাদের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেওয়ায় সারা বিশ্বে আমাদের দেশ ৫ম ও এশিয়াতে প্রথম স্থান দখল করেছে।

তিনি বলেন, অনেক বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মান করেছেন। ফ্রান্সে জন্য আইফেল টাওয়ার যেমন গর্বের, স্টাচু অব লিবার্টি যেমন আমেরিকানদের জন্য গর্বের, চীনের জনগণের জন্য যেমন গ্রেট ওয়াল গর্বের, তেমনি বাংলাদেশের জন্য পদ্মা সেতু গর্বের বস্তু। তিনি এসময় বিএনপির কর্মকা-ের সমালোচনাও করেন।

জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, পদ্মা সেতু দেশীয় অর্থে নির্মান একটি প্রজ্ঞার বিষয়, একটি সাহসীকতার বিষয়। এতে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনবে। দেশের উন্নয়ন ঘটবে। এটা আমাদের জন্য বিশাল একটা প্রাপ্তি, এ অঞ্চলের মানুষ আজ আত্মহারা। তিনি বলেন, আমরা টেকসই অর্থনীতি চাই, টেকসই অর্থনীতি চাইলে তাহলে দেশে দারিদ্রতা কমাতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা টেকসই অর্থনীতি আনতে পারি নি, দেশে দারিদ্র দুর করতে পারি নি। অথচ আমাদের জিডিপি বেড়েছে। কোথাও একটা গলদ আছে, সেটা অর্থমন্ত্রীকে জবাব দেবার আহ্বাণ জানান তিনি। তিনি দারিদ্রতা ও বৈষম্য কমানোর আহ্বাণ জানান।

তিনি বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরো বরাদ্দ বাড়াতে হবে। করপোরেট বাণিজ্যের জন্য ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে আজকে দরিদ্র মানুষকে পরোক্ষ ভাবে জর্জরিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এসব খাতে উন্নয়ন না ঘটালে বৈষম্য দুর করা যাবে না। দেশে ৫০ বছরে একটা শিক্ষানীতি হয়নি। এটা দুঃখ জনক। যার জন্য প্রকৃত শিক্ষার উন্নয়ন ঘটেনি। স্বাস্থ্য খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমাদের কর নেট ওয়ার্ক বাড়াতে হবে, অন্তত করদাতার সংখ্যা ১ কোটি করতে হবে। কর ব্যবস্থার আমুল সংস্কার করতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধ ও খেলাপী ঋন আদায় করতে হবে, এর জন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি। বকেয়া ঋণ খেলাপী আদায় ও বন্ধ করার দাবি জানান তিনি । তিনি বলেন, বিদেশী পাচারকৃত টাকা বাজেটে যে ফেরৎ আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে তা কার্যকর করবেন তা জানি না। তবে এটা করে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে, তিনি রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য দুর করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এবং দুর্নীতি দুর করার জন্য দুদককে আরো শক্তিশালী করার আহ্বাণ জানান তিনি।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ধারাবাহিকতার ভাবে উন্নয়ন ঘটেছে দেশের। করোনা অভিঘাত আসার পরে এবং সাম্প্রতিক ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের পরে সমগ্র বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতি ঘটেছে তা নিয়ন্ত্রনে একটি কৌশল এ বাজেটে লক্ষ করেছি। প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহরে রুপান্তরিত করেছেন। আজকের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন। কিন্তু বিএনপি সরকার রেল ও নৌপথকে অবজ্ঞা করে শুধু সড়ক পথকে প্রাধান্য দেয়। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে রেলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ও হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটে যুক্ত হবে। এসময় তিনি রেলওয়ের বড় বড় প্রকল্পগুলোর উল্লেখ করেন।

বাজেটের ওপর আরো আলোচনায় অংশ নেন, এমপি নজুরল ইসলাম বাবু, আবুল কালাম আজাদ,ফরিদুর রহমান, সামশুল হক চৌধুরী, বজলুল হক হারুন, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, মৃণাল কান্তি দাস, ছলিম উদ্দিন তরফদার, আয়েন উদ্দিন, এ বি তাজুল ইসলাম, বেগম নাহিদ ইজাহার খান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App