×

মুক্তচিন্তা

মস্তিষ্কের ব্যায়াম মেডিটেশন ভ্যাটমুক্ত করা প্রয়োজন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২২, ১২:৪৪ এএম

মেডিটেশন প্রকৃত অর্থে এখন একটি আধুনিক জীবনচর্চা, যা মানবীয় গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। মানুষকে ধীরস্থির এবং মনকে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন করে তোলে। আবেগীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে মেডিটেশন। মনোযোগকে করে লক্ষ্যভেদী। হৃদয়ে সৃষ্টি হয় কল্যাণচেতনা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা। আমরা বলতে পারি, সব দিক থেকে ভালো থাকার জন্য মেডিটেশন একটি সহজ উপায়। কোনো সমস্যার সঙ্গে টেনশন বা অস্থিরতা যোগ হলে তখন এটা সংকটে রূপান্তরিত হয়। মেডিটেশন মনকে স্থির করে আত্মার সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং মন যখন আত্মার সঙ্গে সংযুক্ত হয় তখন আসলে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। এবং তার মনে আস্থা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধরুন আপনার একটা সুপার কম্পিউটার আছে। ওখানে যে কোনো ডাটা দেন মুহূর্তে প্রসেস করে আপনাকে সলিউশন দিয়ে দেবে। আপনাকে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে। কিন্তু এই সুপার কম্পিউটারের যদি কুলিং সিস্টেমটা নষ্ট হয়ে যায়, সুপার কম্পিউটার কি কোনো কাজ করবে? কাজ করবে না। এই ব্রেন হচ্ছে একটা সুপার কম্পিউটার। আর মেডিটেশন হচ্ছে এর কুলিং সিস্টেম। এই কুলিং সিস্টেমকে ঠিক রাখার জন্যই মেডিটেশন দরকার। যাতে আপনি ব্রেনটাকে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে মেডিটেশন হচ্ছে ব্রেনকে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করার একমাত্র উপায়। যখন আপনি মেডিটেশন করবেন তখন দেখবেন যে আপনার মাথা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে এবং মনটা স্বচ্ছ হয়ে গেছে। মনের আবর্জনা রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা এই জিনিসগুলো দূর হয়ে গেছে। আপনার মধ্যে সহমর্মিতার সৃষ্টি হবে এবং যখনই সহমর্মিতার সৃষ্টি হবে, দেখবেন যে আপনার রাগ-ক্ষোভ কমে যাবে। রাগ-ক্ষোভ যখনই কমে যাবে আপনি খুব শান্তভাবে বস্তুনিষ্ঠভাবে একটা পরিস্থিতিকে এনালাইসিস করতে পারবেন। আপনি দেখবেন যে মূল কারণটাকে আপনি বের করে ফেলতে পারছেন এবং সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ মেডিটেশন হলো ব্রেনের ব্যায়াম। যখন কেউ নিয়মিত দৌড়ায়, তার পায়ের পেশি মজবুত হয়; আবার কেউ যখন সাঁতার কাটে, তার হাতের পেশির শক্তি বাড়ে। তেমনি আমরা যখন মেডিটেশন করি, মস্তিষ্কের ভেতরেও আসে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন। ডা. স্টিভেন লরিস বলেন, ব্রেনকে রি-টিউন করার পাশাপাশি মহামারির সুদূরপ্রসারী ও ক্ষতিকর নানা প্রভাব থেকে আমাদের মুক্তি দিতে মেডিটেশন চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কথায় আরো উঠে এসেছে রোগ নিরাময়, অস্থিরতা ও স্ট্রেসমুক্তি, শিশু মনের বিকাশসহ নানা ক্ষেত্রে মেডিটেশনের উপযোগিতার বিষয়টি। নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, তাকে শেখানো হয়েছে, কীভাবে চিকিৎসক হওয়া সম্ভব। কিন্তু কেউ শেখায়নি কীভাবে নিজেকে ভালো রাখা যায়। মেডিটেশন হয়তো আমাদের চারপাশের ঘটনাগুলোকে বদলে ফেলতে পারবে না। কিন্তু প্রত্যাশিত-অপ্রত্যাশিত প্রতিটি ঘটনায় আমার দেহ-মন কীভাবে প্রভাবিত হবে- সেই বিষয়টির ওপর নিয়ন্ত্রণ এনে দেবে মেডিটেশন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এক সময় আমাদের প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে পরিণত হবে মেডিটেশন। আমাদের দেশেও অসংখ্য মানুষ এখন মেডিটেশন করছেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অতএব চিকিৎসাসেবার পরিপূরক এ সেবা থেকে স্থায়ীভাবে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক।

ডা. মো. মঞ্জুরুল হক : অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ, বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App