×

সম্পাদকীয়

খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটানো এ মুহূর্তে জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২২, ১২:৪৪ এএম

খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটানো এ মুহূর্তে জরুরি

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও সার্বিক অবস্থার উন্নতি নেই। এ মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ হলো ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহ করা এবং বন্যাকবলিত এলাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা। সরকারপ্রধান সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে এমন নির্দেশনা দেন। খবর আসছে, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও বাসাবাড়িতে আটকেপড়া বানভাসি মানুষরা বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, ওষুধ, মোমবাতি ও জ্বালানি সংকটে ভুগছেন। বিশেষ করে শিশু খাদ্য ও দুধের সংকটে মায়েরা চরম বিপাকে। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ-বালাই। বিশেষত সুনামগঞ্জে ঘরের ভেতরে ও চারপাশে পানি থাকায় চার দিন ধরে বন্দি অবস্থায় আছেন। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই। ঘরে রান্না করারও কোনো উপায় না থাকায় চিড়া-মুড়ি খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন তারা। এই মানবিক বিপর্যয়ে পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। মানুষের এমন কষ্টের কান্না দেখা যায় না। দল-মত নির্বিশেষে দরকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দুর্গত মানুষজন অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ, শিশুসন্তান বেশি, কিংবা যাদের পশুপাখি রয়েছে তাদের দুঃখের আজ অন্ত নেই, দুর্ভোগের শেষ নেই। দুঃখের বিষয়, সিলেটের অনেক অঞ্চলেই এখনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। হাজার হাজার অসহায় মানুষ হাত বাড়িয়ে আছেন ত্রাণের জন্য। ত্রাণ পৌঁছালে চলছে হুড়াহুড়ি, কাড়াকাড়ি। সরকারিভাবে অনেক এলাকায় ত্রাণ সহায়তা প্রদান করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল্য। ত্রাণ সহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসা জরুরি। বাংলাদেশে স্মরণকালের ইতিহাসে বড় বন্যাগুলো হয়েছিল ১৯৭৪, ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। তখন বন্যায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল। অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মৃত্যুবরণ করে। খাদ্যের অভাব ও নানারকম রোগেও বহু মানুষ প্রাণ হারায়। এবারের বন্যাও কম নয়। ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম হবে না। উপরের চিত্র দেখলে বুঝা যায়, বন্যা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। এর জন্য মানুষই দায়ী। আঞ্চলিক ও স্থানীয় অতিবৃষ্টি এবং ভৌত অনেক কারণ বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার জন্য দায়ী। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বন উজাড়করণ এই প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে বলে গবেষকরা প্রায় নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। এবারের বন্যা শেষ নয়। বন্যা হবে সামনেও। বন্যা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি রাখতে হবে। সিলেটে বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই। বন্যার পানি শিগগির স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে বলে আশা করা যায় না। এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ত্রাণ ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুৎ চালু করা প্রয়োজন। বন্যা-পরবর্তী জীবিকা নির্বাহ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দায়িত্ব। ত্রাণ সহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App