×

সারাদেশ

ছাতক-সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ, আশ্রয়, জল, খাবার কিছুই নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২২, ১২:০৭ এএম

ছাতক-সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ, আশ্রয়, জল, খাবার কিছুই নেই

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধিতে ছাতক-সুনামগঞ্জে সর্বত্রই দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। ছবি: ভোরের কাগজ

ছাতকে বন্যায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধি। বহু মানুষ নিখোঁজ। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা নেই। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ নাই। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নাই। খাবার পানি নাই। শুকনা খাবার নেই। মাথা গুজার ঠাই টুকু ভেসে গেছে। গো-খাদ্য, মাছের পোনা সব ভেসে গেছে। ভেঙেছে সেনিটেশন ব্যবস্থা।

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধিতে ছাতক-সুনামগঞ্জে সর্বত্রই দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। সুনামগঞ্জ জেলায় তৃতীয়বারের মতো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন ছাতক উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। তবে এবারের বন্যা ২০০৪ সালের বন্যাকে অতিক্রম করেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘর বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও হাট- বাজার। গরু, মহিষ, হাসঁ, মুরগি, ছাগল, ভেড়া মরে ভেসে উঠেছে। বহু মানুষ নিখোঁজ। নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ স্থাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা নেই। ত্রান বিতরণ অব্যাহত থাকলে অপ্রতুল। গো খাদ্য নেই। মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার সর্বত্রই এখন বন্যার পানি থৈ-থৈ করছে।

সোমবার সকাল পর্যন্ত এখানে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীতে পানি কিছুটা কমে বর্তমানে স্থির হয়ে রয়েছে। নদ-নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে এখনও। উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের সকল রাস্তা পানির নিছে তলিয়ে গেছে। এলাকায় তলিয়ে গেছে ছাতক-সুনামগঞ্জ-সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়ক। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে গত চার দিন যাবৎ ছাতক-সুনামগঞ্জ- সিলেটসহ সারা দেশের সঙ্গে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আশ্রয়ের জন্য ছুটেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।

এদিকে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এখনো পানির নিছে। স্থানীয় ইউনিয়ন ও পৌরসভায় যতগুলো সরকারি দপ্তর, আশ্রয় কেন্দ্র, প্রাইমারি স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির সবগুলাই হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তিবর্গ নিজস্ব অর্থায়নে শুকনা খাবার মুড়ি চিড়া ইত্যাদি খাবার বিতরণ করেছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪শ’ জন সেনা মানুষের সাহায্যার্থে স্পিড বোর্ড নিয়ে সমস্ত উপজেলাজুড়ে বন্যা কবলিত অসহায় মানুষদের সাহায্য করছে। গ্রামের চরম বিপদ গ্রস্থ মানুষদের নিয়ে এসে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দেন। শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করে দেন। ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে কমিউনিটি সেন্টার সায়মা সাদি মহলে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তুলেন এবং সেখান থেকে সবগুলো ইউনিটকে পরিচালনা করতেন মেজর আসাবুর রহমান।

গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে আশ্রয় নেয়া মিলন বেগম চোখের জল মুছতে মুছতে জানিয়েছে বন্যার ভয়াবহ তান্ডবের কথা। এমন বন্যা জীবনে দেখিনি। মাথা গুজার ঠাইটুকু ভেসে গেছে। গরু ছাগল রক্ষ করতে পারেন নি। ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সবাই উঠেছেন গোবিন্দগঞ্জ কলেজে। খাবার সংকট। একবেলা খেয়ে কোনক্রমে দিন অতিবাহিত করছেন। ৫শত পরিবার উঠেছে আশ্রয়ের জন্য। সেনিটেশন ব্যবস্থা স্বল্প। বিশুদ্ধ পানি নাই।

এদিকে ছাতক-দোয়ারা সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক সদস্য বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি যতদূর সম্ভব যতটুকু সম্ভব সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মানুষের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করছেন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে রবিবার সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা ছাতক স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার উপড় দিয়ে এখনও প্রবাহিত হচ্ছে।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রহমান জানান, পুরো উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। আবহাওয়ার চরম প্রতিকূল অবস্থার মাঝে ও ত্রান বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এখনো হাজার হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার সব গুলো প্রাইমারি স্কুলের দুতলায়, হাইস্কুল, মাদ্রসা, সরকারি হাসপাতালসহ সকল দপ্তরে আশ্রয় ক্যাম্প খুলা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App