×

জাতীয়

দেশ ঋণের সব ধরনের বিপদ সীমা পার হয়ে গেছে: রুমিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২২, ১২:৪৬ এএম

দেশ ঋণের সব ধরনের বিপদ সীমা পার হয়ে গেছে: রুমিন

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। ফাইল ছবি

দেশ ঋণের সব ধরনের বিপদ সীমা পার হয়ে গেছে: রুমিন

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা বলেছেন, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে, লোভ আর ভয় মানুষকে কি না করায়? শ্রীলঙ্কার পর্যালোচনায় যখন বাংলাদেশ এসেছে তখন শ্রেফ ভয়ে কোন কোন অর্থনীতিবিদ বলেছে, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি হবার কোন সম্ভবনা এখন বাংলাদেশে নেই। তবে এই আকালে অনেক অর্থনীতিবিদ আমাকে জানিয়েছে বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই ঝুঁকি রয়েছে, বাংলাদেশ যদি সতর্ক না হয় তাহলে সেই ঝুঁকিতে বাংলাদেশ পড়তে পারে। শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হবার পরে উত্থাপিত সেই আকালে এবারের আমাদের বাজেটে কথা ছিল বাংলাদেশ সেই পথে যেন না যায়। তার জন্য দিক নির্দেশনা নেই বাজেটে। দেশ ঋণের সব ধরনের বিপদ সীমা পার হয়ে গেছে বলে জানান রুমিন।

রবিবার (১৯ জুন) তিনি জাতীয় সংসদে বলেন, সময়টি করোনা মহামারী পরবর্তি সময় ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চরম সমস্যা রয়েছে, আমদানি রপ্তানিতে চরম ভারসাম্যহীনতা, ডলারের তুলনায় টাকার মূল্যমান কমে যাওয়া, বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের চরম সংকট হওয়া ইত্যাদি।

তিনি বলেন, অর্থনীতির ৬টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রথমেই বলেছে- বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো ও অভ্যান্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানো। বর্তমান মূল্যস্থিতি ডিমান্ড ফুলফিল নয়, যা চাহিদার অনেক বৃদ্ধি জনিত কারণে হয়নি, যাতে প্রবৃদ্ধি কমানো যাবে। করোনা অভিঘাতে মধ্যবিত্ত থেকে সব মানুষের আয় কমেছে, দরিদ্র আরো বেড়েছে, তাহলে চাহিদা বাড়ানো সম্ভব কি করে? এধরনের অবস্থায় প্রবৃদ্ধি আরো কমিয়ে সরবরাহ আরো বাড়ানো কি করে সম্ভব হয় তা বোধগম্য নয়। বর্তমান মূল্যস্থিতি কষ্ট পোস্ট অর্থাৎ আমদানী জনিত মূল্য বৃদ্ধির কারণে। যত না মূল্য বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে সরকারের সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বেড়েছে কয়েকগুণ, কমানোর কোন চিন্তা বাজেটে নেই। বর্তমান সরকার বলছে মূল্যস্ফিতি ৬ শতাংশের বেশী, কিন্তু থিং ট্যাঙ্কগুলো বলছে মূল্যস্ফিতি দ্বিগুণেরও বেশি। তিনি বলেন, বাজেটে প্রয়োজনীয় পণ্যের সব ধরনের শুল্ক তুলে দেয়া কিন্তু বাজেটে তার কোন প্রতিফলন নেই। চরম মূল্যস্ফীতির সময় মানুষ যখন আধ পেটা খেয়ে বেঁচে আছে তখন বিধবা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ। তা ছাড়া আরো ২ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে এসেছে। তাদের হিসেব কেউ রাখে না। গরীব মারা এই বাজেটের বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে দেয়া হবে অলিগার্রকদের হাতে। এবারের বাজেটে ভর্তূকি পরিমাণ রাখা হয়েছে ৮৩ হাজার কোটি টাকা যার অধিকাংশই যাবে বিদ্যুৎ উদপাদন খাতে। এটা ষ্পষ্ট রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলোর মালিকদের হাতে ক্যাপাসিটি চার্জ বা বিদ্যুৎ কেনার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে দেয়া হবে। গত ১০ বছরে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উদপাদন না করেও এই বিদ্যুগুলো তুলে নিয়েছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ভারতের আদানী গ্রুপের তৈরি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছরের চুক্তিতে বিদ্যুৎ কিনে বা না কিনে বাংলাদেশ এক লাখ কোটি টাকা তুলে দেবে। তাতে তিনটা পদ্মা সেতু, ৯টি কর্ণফুলি ট্যানেল ও চারটি মেট্রো রেলের মতো প্রকল্প তৈরি করা সম্ভব। আগষ্টে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলেও সঞ্চালন লাইনের অভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ সামনে আসছে কয়েকটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

পাঁচার করা টাকা ফেরৎ আসার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশ পাচার হওয়া টাকা বৈধ করার নামে ৭-১৫ শতাংশ কর দিয়ে দেশে ফেরৎ আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে, যাতে বিদেশে কখনো টাকা পাচারকারীদের ধড় পাকড় শুরু করলে তারা যেন নির্বিঘ্নে টাকা এদেশে নিয়ে আসতে পারে। ফেরৎ আনার জন্য নয়, পাচারকারীদের নিশ্চিন্তে পাচারে উৎসাহিত করবে এটা। এ পদক্ষেপ দুদকের ২৭ (১-২)ধারা , মানি লন্ডারিং ৪৯(১) ধারা এবং সংবিধানের ২০(২) ধারায় সম্পূর্ণ অবৈধ, নিষিদ্ধ, অসাংবিধানিক। গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে ৭ বিলিয়ন ডলারের জিনিস আমদানি হয়েছে। আর এপ্রিল মাসে পৌছেছিল ৮ বিলিয়ন ডলারে। কোভিড পরবর্তি আয়হীন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা একবারে তলানিতে এসেছে।

রুমিন বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্কটের কারণে ও জাহাজ ভাড়া বাড়ার কারণে দ্রব্যমূল্য নিশ্চয় বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমদানির নামে বড় অংকের টাকা পাচার করা হয়েছে। নির্বাচন এলে এদেশে পাচার বাড়ে এটা বলছে গ্লোবাল ইনফিনিটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিদেশ টাকা পাচার ১ লাখ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে জাতিসংঘে সরকার আমদানী রপ্তানির তথ্য দেয়া বন্ধ হয়েছিল। পাচারের এ তথ্য লুকানোর চেষ্টা প্রমাণ করে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ পাচারের সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, আমাদের জিডিপির আকার বড় করে দেখানো হয়। বড় ব্যবসায়ীদের করপোরেট কর কমেছে। এদেশে এখনো নেই কোন সম্পদ কর। জিডিপি এবার ৪৪ লাখ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। এখানে জিডিপি বড় করে দেখানো হয়েছে। ঘুম থেকে উঠলেই আমরা বড় লোক হয়ে গেছি। দেখানো হয় মাথা পিছু আয়ও, কেননা লোকসংখ্যা কম দেখানো হয়। সরকারী হিসেবে ঋণ ৪৫ শতাংশ দেখানো হতো, প্রকৃত হিসেব করলে দেখা যাবে এটা ৭০ শতাংয়ের ওপরে। অর্থাৎ আমরা ঋণের সব ধরনের বিপদ সীমা পার হয়ে গেছি। করের টাকার ১/৫ অংশ চলে যাবে এ ঋণ পরিশোধের জন্য। আজ যে শিশু জম্ম নিচ্ছে তার মাথাও ওপর ঋণ ৯৬ হাজার টাকা। এখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমেছে। শিক্ষার মান একেবারে কমেছে, কিন্তু এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ কম। আবার সার্বজনীন পেনশনের নামে মানুষের পকেটের টাকা বের করে আনার সুযোগ নিচ্ছে সরকার। যেহেতু পেনশনের টাকা মানুষ আগে থেকে জমা দিতে থাকবে আর পেনশন পেতে শুরু করবে অনেক পরে। তাই সরকারকে সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে অনেক বছর পরে। অনাগত সরকারের ঘাড়ে পড়বে এ দায়। লুটপাট করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা হাতে পাওয়ার এর চেয়ে আর কিইবা ভালো উপায় থাকতে পারে। আর দুর্নীতি করতেও সুবিধা হবে এর ফলে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত খরচের সমালোচনা করে রুমিন বলেন, এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের একটি ঘনবসতীপূর্ণ দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতে কোন যুক্তি ছিল না। রুশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি মেগাওয়ার্ট ইউনিট খাতে ব্যয় হবে ৫০ লাখ ডলার। ভারতে কুদানকুলাম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি মেগাওয়ার্টে ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ ডলার। কেন্দ্রের মুলধন বাবদ লুটপাট হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এখনো পর্যন্ত ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এ প্রকল্পটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ঝুকি তৈরি হয়েছে। তিনি এসময় পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পসহ রামু কক্সবাজারসহ বেশ কিছু প্রকল্পের অধিক ব্যয় হচ্ছে. অর্থাৎ লুটপাট বাড়ছে। এগুলো দীর্ঘদিন পরে বাস্তবায়িত হলে এগুলো আয় দেয়া তো দুরের কথা পরিণত হবে শ্বেত হস্তিতে। এসব কারণে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ আশঙ্খাজনক অবস্থায় বেড়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের চেয়ে ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ২০ গুন। জিডিপির সঠিক হিসেব করা হলে বিদেশি ঋণের ২৫ শতাংশ, সঠিক হিসেব করা হলে বিদেশি ঋণ ২৫ শতাংশ হবার কথা। অনেকগুলো বিদেশি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড চলছে, এগুলো শেষ হলে একেবারে পরিশোধের চাপ আসবে। শ্রম বাজারের স্বর্ণযুগ এখন শেষ। শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিরোধীদের স্বৈরাচারী মনোভাব, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি, বিরোধীদের দমন পীড়ন , যার সবগুলো আমাদের দেশে বিদ্যমান। তাই আমাদের দেশ শ্রীলঙ্কার মত হবে না তা হলফ করে বলা মুশকিল, সব কটি ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর বিদ্যমান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হয়ে একের পর এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে বাংলাদেশ চরম কতৃর্তবাদী গোষ্ঠতিন্ত্র কায়েম হয়েছে। নিজেদের আখের গুছিয়ে নিজেদের অনাগত বহু প্রজম্মের নিশ্চিন্ত আখের গোছানোর পরে দেশ শ্রীলঙ্কা হলে দোষ কি?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App