×

জাতীয়

বাংলাদেশের অস্তিত্বের নির্যাস হলো গণতন্ত্র: আকবর আলী খান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২২, ০৭:০২ পিএম

বাংলাদেশের অস্তিত্বের নির্যাস হলো গণতন্ত্র: আকবর আলী খান

শনিবার রাজধানীর আইডিইবি ভবনে সুজনের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান। ছবি: ভোরের কাগজ

নির্বাচনে প্রতীকী সংখ্যাগরিষ্ঠতার বদলে সমানুপাতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ওপর জোর দেবার আহ্বান

তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রের সাথে সিভিল সমাজের ওতপ্রোতভাবে যোগাযোগ রয়েছে। যে দেশে সিভিল সমাজ গড়ে ওঠে নি সেদেশে গণতন্ত্র অত্যন্ত দুর্বল। বাংলাদেশের অস্তিত্বের নির্যাস হলো গণতন্ত্র।

শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর আইডিইবি ভবনে সুজনের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

আকবর আলী খান বলেন, আমরা চার দফা দাবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম- যে চারটি দফা আছে তার সবগুলোর পেছনে রয়েছে গণতন্ত্র। প্রথমে রয়েছে জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ গণতান্ত্রিক ধারায় গড়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক মাধ্যম ছাড়া, গণতন্ত্র ছাড়া আমাদের জাতীয়তাবাদ শূন্য। আমরা বলছি আমরা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ে তুলবো। তাও গণতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। যে দেশে গণতন্ত্র নেই সেখানে সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর সব শেষে আমরা যে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে সমাজতন্ত্র মানুষের ঐক্যমত গড়ে তোলা, সেটাও গণতন্ত্র ছাড়া সম্ভব না। আমাদের এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দরকার সুশীল সমাজের জাগরণ।

তিনি বলেন, দুঃখের বিষয়- আজকের পৃথিবীর অনেক স্থানে গণতন্ত্র ধ্বংসের পথে। কোথাও কোথাও গণতন্ত্রের উত্তোরণ হচ্ছে, আবার কোথাও তার উত্তোরণ হচ্ছে না, ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। আর এই দ্বিতীয় শ্রেণিতে বাংলাদেশ পড়ে। তিনি বলেন, এদেশের গণতন্ত্রের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো, এদেশের যেসব সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় সেই সরকার ভোটের সংখ্যাধিক্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ভোটের সংখ্যাধিক্য মানে জনগণের মধ্যে সংখ্যাধিক্যতা হয় না। তাই পৃথিবীর অনেক দেশে প্রতীকী সংখ্যাগরিষ্ঠতার [সিম্বলিক মেজরিটি] বদলে সমানুপাতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ফিরে যাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত হলো, পৃথিবীর অনেক দেশে এক কক্ষের সংসদ না হয়ে আছে দ্বি কক্ষের সংসদ। সেখানে এক কক্ষে আইন প্রণেতারা যে ধরনের ভোটে নির্বাচিত হয় দ্বিতীয় কক্ষে বা রাজ্য সভায় অন্যভাবে ভোট হয়। তার ফলে সরাসরি নির্বাচিত সরকার যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে শুধু এক কক্ষের সংসদ নয়, এখানে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত হয়েছে একজনের ওপর। এটা আজকের ব্যাপার নয়, আগেও ছিল। আকবর আলী খান বলেন, মোটামুটি ভাবে দেশের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় একজনের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। সেকারণে তার জন্য সব দিকে সুন্দরভাবে দেখা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে আরো যেটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে- যিনি দেশের বা রাষ্ট্রের প্রধান বা সর্বময়কর্তা তিনিই আবার রাজনৈতিক দলের নেতা। সুতরাং তাকে রাজনৈতিক দলের দিকে দেখতে হয়, এতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফলে জনগণ অনেক মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এই ভাবে আমাদের দেশে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এইভাবে আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে কথা উঠছে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছে কিনা তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে কিন্তু এ ধরনের সমস্যা হয়না। সেখানে দু’ধরনের সরকার আছে, কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার। আর ভারতের নির্বাচনে যারা নির্বাচন কমিশনার হন তারা ইন্ডিয়ান এ্যডমিনিসট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য। তাদেরকে রাজ্যসরকার দমন বা কিচ্ছু প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তারা তাদের মতো নির্বাচন করে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে ডিসিদের আমরা দলীয়করণ করাতে দেশের একটি লোকও ডিসিদের বিশ্বাস করে না। ভারতে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন হয়, আর ২০-২৫ দিন ধরে এসব ব্যালট বাক্স ডিসিদের অধীনে থাকে, কিন্তু বাংলাদেশে কি একজনও ডিসি পাওয়া যাবে যার কাছে কোন রাজনৈতিক দল ব্যালট বাক্স এক দিনের জন্য রাখতে রাজি হবে? হবে না। তার কারণ হলো এরা সবাই বায়াস হয়ে গেছে, পক্ষপাতিত্বের বদনাম কিনে নিয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আদেশ এখানে কেন কেউ মানে না। তার মানে ইসি তার সাংবিধানিক ক্ষমতার কঠোর প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথমে এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও মেধার মূল্য দিতে হবে। এর জন্য দীর্ঘ প্রকল্প নিতে হবে। আর জনগণই পারে রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আর কেউ পারে না। এসময় এথেন্সের একজন মনিষীর উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, যদি আমরা সুখী হতে চাই তাহলে আমাদের স্বাধীন হতে হবে, আর যদি স্বাধীন হতে চাই তাহলে আমাদের সাহসী হতে হবে। আমাদের একদিকে রয়েছে গ্লোরী আর অন্যদিকে বিপদ, এ দুই দিক আমাদের জানতে হবে, সে অনুযায়ী এগুতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App