×

জাতীয়

নয়া বাংলাদেশের প্রতীক পদ্মা সেতু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২২, ১১:৪১ এএম

নয়া বাংলাদেশের প্রতীক পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু

দেশের প্রতিটি মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে রেখে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুকে একটি অবকাঠামো আন্দোলনের আকৃতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সর্বত্র প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর সেতুর বিষয়টিকে এভাবেই জাতীয় আবেগে পরিণত করেন তিনি। আগামী ২৫ জুন এই সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছর আগে, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন শেখ হাসিনা। দেশের প্রতিটি মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে মিশে আছে এই সেতুর নাম।

আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের মাধ্যমে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পদ্মা সেতুকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এই র্থনৈতিক সুফলকে ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিতে চাইছেন আওয়ামী লীগ সরকার।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ২৫ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা আসবেন কিনা সে প্রশ্ন আলাদা। কিন্তু ২৫ জুনেই শেখ হাসিনা নিজেকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করবেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে এ অঞ্চলের ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতি সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছেন বারবার। কিন্তু বিনিয়োগের প্রশ্নে কাউকেই অচ্ছুৎ রাখছেন না তিনি। সরকারের এক কর্মকর্তার ভাষ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী কাউকেই ব্রাত্য বলে মনে করেন না। আবার একই সঙ্গে তিনি ভারসাম্য রেখে চলার পক্ষপাতী।

২০১৫ সালে ভারতকে ছাপিয়ে চীন হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ২০১৬ সালের বাংলাদেশ সফরে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয় দুই দেশের মধ্যে। এরপরে ২০১৯ সালে বেইজিং সফরে শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে চীন। চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও বোঝাপড়া হয় ঢাকার।

কূটনৈতিক সূত্র আরও জানায়, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও চিনের দিকে ঢলে যায়নি আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতের সঙ্গে নিজেদের ‘রক্তের সম্পর্কের’ কথা তাই বারবার উল্লেখ করতে শোনা যাচ্ছে সরকারের মন্ত্রী-সাংসদদের মুখে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাতে পণ্য পরিবহন সহজ ও দ্রুত হয়, সে জন্য ভারতকেও চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। এ জন্য পরিকাঠামো সংযোগের কাজ বাংলাদেশের দিক থেকে কিছু বাকি আছে। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ভাষ্য, আমরা এই বছরের শেষে বা আগামী বছরের গোড়াতেই কাজ শেষ করে ফেলব। ভারতের উত্তর-পূর্বে সফর করে দেখেছি সেখানকার মানুষের কতটা আগ্রহ রয়েছে এই প্রকল্পে।

শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের পর চিনা সহযোগিতা নিয়ে আরও কিছুটা সতর্ক হতে দেখা যাচ্ছে ঢাকাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাই স্পিড রেলওয়ে নির্মাণের জন্য টানা দৌত্য করে চলেছে বেইজিং। কিন্তু ওই প্রকল্প থেকে পিছিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কোনো বাড়তি খরচ বা ঋণ নেয়ার আগে তা খতিয়ে দেখার প্রবণতা বেড়েছে। পাশাপাশি কোনো একটি দেশের ওপর নির্ভরতাও তৈরি করতে চাইছে না আজকের বাংলাদেশ, তা স্পষ্ট। একই সঙ্গে চীনা সংস্থা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে, রাজধানী ঢাকায় মেট্রো রেলের কাজে শামিল হয়েছে জাপানের সংস্থা। রূপপুর পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পে রয়েছে রাশিয়া, ভারতের এনটিপিসি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।

১৯৭১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ব্যঙ্গ করে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন। তার অর্ধশতাব্দি পরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের প্রাক্কালে গর্বের সঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, ঢাকার রাস্তায় একটিও ভিক্ষুক আজ দেখতে পাবেন না।

আগামী ২৫ জুন এই নতুন বাংলাদেশের মোড়কই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App