×

খেলা

হতশ্রী রেকর্ডে সবার ওপরে টাইগাররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২, ১১:৩৩ পিএম

হতশ্রী রেকর্ডে সবার ওপরে টাইগাররা

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে মুুমিনুল হককে শূন্য রানে আউট করে উইন্ডিজ পেসার জেইডেন সিলসের উল্লাস। ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা থেকে অ্যান্টিগা। পৃথিবীর এপার-ওপার। বাংলাদেশের পারফরম্যান্স পাল্টায় না একটুও। এবার উইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৫ রান তুলতেই হারায় ৬ উইকেট। শেষমেশ অলআউট ১০৩ রানে। এক মাসের ব্যবধানে ইনিংসে ফের ৬ ডাক। এমন হতশ্রী রেকর্ড পৃথিবীতে কারো দুবার নেই। বাংলাদেশেরই আছে- তাও আমার একবার নয়; তিনবার। প্রথমটা ২০০২ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৬ ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে ফেরত যাওয়ার ঘটনা আবারো ঘটাল বাংলাদেশ। পরপর দুই টেস্টে ঘটল এমন ঘটনা। গত মাসেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ৬ ব্যাটসম্যান শূন্য রানে ফিরেছিলেন। যদিও সেই টেস্টে মুশফিকুর রহিমের ১৭৫ আর লিটন দাসের ১৪১ বাংলাদেশের মান বাঁচিয়েছিল। দল করেছিল ৩৬৫ রান। কিন্তু বৃহস্পতিবার অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে মাত্র ১০৩ রানেই। এর আগে ২০০২ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই শূন্য রানে ৬ ব্যাটসম্যানকে আউট হতে দেখেছে বাংলাদেশ।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক ইনিংসে ৬ ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে ফেরার ঘটনা আছে সাতটি। এর মধ্যে বাংলাদেশেরই এমন ‘কীর্তি’ তিনবার। ১৯৮০ সালে প্রথমবার শূন্য রানে ৬ ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার ‘কীর্তি’ পাকিস্তানের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। এরপর ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড একবার করে এমন রেকর্ডের মুখোমুখি হয়েছে। বৃহস্পতিবার অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন, নুরুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও খালেদ আহমেদ শূন্য রানে আউট হন।

গত মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকায় ৬ ব্যাটসম্যান রানের খাতা খুলতে পারেননি। ৬ ডাকের ইনিংসে সেটিই অবশ্য সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচে ডাক পেয়েছিলেন ইবাদত, জয়, তামিম, সাকিব, মোসাদ্দেক ও খালেদ আহমেদ।

২০০২ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৭ রানে গুটিয়ে গেছিল বাংলাদেশ। সেই ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া ছয় ব্যাটসম্যান ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল, অলক কাপালি, খালেদ মাসুদ, এনামুল হক (মনি), তাপস বৈশ্য ও তালহা জুবায়ের। ক্যারিবীয় পেসার জারমেই লসন ৬.৫ ওভার বোলিং করে ৪ মেডেনে মাত্র ৩ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের শুরুটা বুঝি এর চেয়ে খারাপ হতেই পারত না বাংলাদেশের! অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস। ছয় ব্যাটসম্যান ফিরে গেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। তাতে একটা লজ্জার রেকর্ডও গড়ে ফেলেছে সফরকারীরা।

ডিউক বলের বোলিং নিয়ে অ্যালান ডোনাল্ডকে বাড়তি কাজ করতে দেখা গিয়েছিল মুস্তাফিজুর রহমানদের নিয়ে। বলে থাকে বাড়তি সেলাই। যে কারণে নতুন বলের সুইং থাকে বাড়তি সময় ধরে। তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অবশ্য সে সুইংয়ে সর্বনাশ হয়নি। সর্বনেশে শট সিলেকশনই প্রথম দিন শেষে খাদে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে।

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে যার শুরুটা করেন মাহমুদুল হাসান জয়। কেমার রোচের করা অফস্টাম্পের বাইরে লেন্থ বলে খোঁচা দিয়ে তিনি ফেরেন দ্বিতীয় বলে। এক ওভার পর সেই রোচেরই শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত, তার ব্যাট-প্যাডের মাঝের বিশাল ফাঁক গলে রোচের ফুলার লেন্থের বল গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে।

শুরুতে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ বিপদের পূর্বাভাস পেয়ে গিয়েছিল। মুমিনুল হকের এক শটে ষষ্ঠ ওভারে বিপদটা আরও বাড়ে বাংলাদেশের। জেইডেন সিলসের অফস্টাম্পের বাইরে গুড লেন্থে করা বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন সদ্য সাবেক বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত তিনজনই বিদায় নিয়েছেন শূন্য হাতে।

টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানই খুলতে ব্যর্থ হন রানের খাতা, লোয়ার মিডল অর্ডারে নুরুল হাসান সোহান আর দুই টেইল এন্ডার মোস্তাফিজুর রহমান আর খালেদ আহমেদও ধরেছেন তাদের দেখানো পথই। এদের মধ্যে নুরুল বিদায় নিয়েছেন আবার টপ অর্ডারের মতো নিজের বাজে শট বাছাইয়ের দোষেই। কাইল মেয়ার্সের প্রায় স্টাম্পে থাকা বলে তিনি শট অফারই করেননি, ফলে বল গিয়ে আঘাত হানে তার প্যাডে, এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি।

১১ ব্যাটসম্যানের ছয়জনই খুলতে পারেননি রানের খাতা। টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে অ্যান্টিগা টেস্টসহ সাতবার। এই তালিকায় দল আছে পাঁচটি। ১৯৮০ সালে এই ‘কীর্তির’ প্রথম শিকার হয় পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর ১৯৯৬ সালে ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ছয় ব্যাটসম্যান ফেরেন শূন্য হাতে। চলতি শতাব্দীতে প্রথমবার এই ‘কীর্তি’ গড়ে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ছয় ব্যাটসম্যান রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি বাংলাদেশের, সেই ইনিংসে ৮৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারত, আর ২০১৮ সালে দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড এই ঘটনার জন্ম দেয়। চলতি বছর এই কীর্তি বাংলাদেশই গড়েছে দুবার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App