×

জাতীয়

ঢাবি সিনেটে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান প্রত্যাহার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২, ০১:০১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের দেয়া বক্তব্যের শেষাংশে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শব্দদ্বয়ের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর প্রত্যাহার করে সিনেট সভা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত ১০টায় সিনেট অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে সিনেটের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই বক্তব্য চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার করেন।

এর আগে সিনেট অধিবেশন চলাকালে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে তার বক্তব্য শেষ করেন।

অধিবেশনের শেষের দিকে পয়েন্ট অব অর্ডারে নীল দল প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া প্রতিবাদ জানান। এতে তাৎক্ষণিকভাবে নীল দলের বাকি সদস্যরাও সম্মতি জানান।

অধ্যাপক শফিউল আলম এ সময় বলেন, একজন সিনেট সদস্য (অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম) তার বক্তব্যের শেষে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে তার বক্তব্য শেষ করেছেন। ‘জয় বাংলা’ বলেননি। অথচ ‘জয় বাংলা’ একটা জাতীয় স্লোগান।

এরপর বক্তব্য দিতে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বক্তব্য প্রদানকালে আমাদের একজন সহকর্মী ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিয়েছেন। এটা দুঃখের বিষয়। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি? বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগানই হলো ‘জয় বাংলা’।

তিনি আরও বলেন, যেই সিনেটে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল সেই সিনেটে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়া হয় তবে এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক নয়। বরং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এই বক্তব্য শুধু এক্সপাঞ্জ করলেই হবে না, স্বাধীন বাংলাদেশে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' স্লোগান কোনোভাবেই মানা হবেনা।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড এ এস এম মাকসুদ কামালের বক্তব্য দেওয়া হলে তাকে উপাচার্যের মাধ্যমে অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম পাল্টা প্রশ্ন করেন, এই স্লোগান বাংলাদেশে কবে নিষিদ্ধ হলো? আমরা প্রতিনিয়তই এটি ব্যবহার করছি।

তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ড এ এস এম মাকসুদ কামালের বক্তব্যটি পুরোপুরি রাজনৈতিক একটি বক্তব্য।

এ সময় আওয়ামী পন্থী শিক্ষক প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা বলেন, এটা (বাংলাদেশ জিন্দাবাদ) পাকিস্তানের স্লোগান, স্বাধীনতা বিরোধী কোনো স্লোগান আমরা শুনতে চাইনা। এই স্লোগান বলা মানে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করা। এখানে স্লোগান দিলে জয় বাংলাই বলতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো পাকিস্তান ভাবধারার প্রতিষ্ঠান নয়।

পরিস্থিতি কিছুটা ঠাণ্ডা হলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. আখতারুজ্জামান বলেন, পাকিস্তান জিন্দাবাদ থেকেই মূলত 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' শব্দটি এসেছে। এখন শব্দটি কেউ ওভাবে আর কেউ বলেনা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয় মহান স্বাধীনতার সাথে কোনো কিছু সাংঘর্ষিক হলে সেটা মেনে নিতে হবে। এটি একটি নিছক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলার ঘটনাটি পাকিস্তানী ভাবধারা অনুকরণের চেষ্টা কিংবা মহান সিনেটকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি অপচেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, সভা বক্তব্যটির প্রত্যাহার ও নিন্দা জানাচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান করছে। যাতে মূল্যবোধের জায়গা থেকে উদার চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধ পরিপন্থি কোনো কাজ বা পাকিস্তানি ভাবধারা কোনো কাজ ক্যাম্পাস গ্রহণ না করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App