×

মুক্তচিন্তা

জনশুমারি ও গৃহগণনা তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২২, ১২:১৪ এএম

জনশুমারি ও গৃহগণনা তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক
‘জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন’ সেøাগানকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২। ১৫-২১ জুন পর্যন্ত শুমারি সপ্তাহ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এটি ষষ্ঠ জনশুমারি হলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই প্রথম গণনা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ বাস্তবায়ন করছে। দেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যা, জন্ম-মৃত্যু, শিক্ষা, বেকারত্বের হারসহ নানা তথ্যের প্রয়োজনে সরকার প্রতি ১০ বছর অন্তর এই কাজটি করে থাকে। বাংলাদেশে প্রথম জনশুমারি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। সবশেষ জনশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। সেই হিসেবে পরবর্তী শুমারি ২০২১ সালে হওয়ার কথা থাকলেও করোনার প্রভাবে সেটি সম্ভব হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সরকার সাধারণ জনগণ এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিন্তা করে এ জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজটি শুরু করেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় দেশের শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সমস্ত এলাকায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা ৩৫টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ট্যাবে ফরম পূরণ করবেন। এসব তথ্যের মধ্যে বেশকিছু ব্যক্তিগত বিষয়ও সেখানে দেয়া লাগছে। যা তার একান্তই ব্যক্তিগত। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এই গণনাকারীকে এসব ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন এসব তথ্য অন্যের হাতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার জন্ম না দেয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জনশুমারি একটি দেশের জনসংখ্যার সরকারি গণনা হিসেবে গণ্য করা হয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ে একটি জনগোষ্ঠীর বা দেশের জনসংখ্যা গণনার সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ, তথ্য একত্রীকরণ এবং জনমিতিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্যাদি প্রকাশ করাকে জনশুমারি বলা হয়। জনসংখ্যা গণনার সুবিধার্থেই মূলত জনশুমারি করা হয়ে থাকে। তবে এর পাশাপাশি জনশুমারির ফলে সাধারণ মানুষের মৌলিক জনমিতিক, আর্থ-সামাজিক ও বাসগৃহ সংক্রান্ত উন্নয়নে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়া ভোটার তালিকা তৈরির কাজেও জনশুমারি অন্যতম ভূমিকা রাখে। দেশে এ বছর বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার গণনাকারী, ৬৪ হাজার সুপারভাইজার ও বিবিএসের সাড়ে ৪ হাজারের অধিক কর্মচারী এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বিবিএস-বহির্ভূত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রায় ৯০০ কর্মচারী জোনাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগের ৫টি জনশুমারি খাতা কলমে জরিপ করা হলেও এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে আয়োজন করায় এ কাজে অন্যবারের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। ষষ্ঠ জনশুমারির এ কাজে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পে ট্যাব সরবরাহ করেছে বাংলাদেশি প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব। ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এ জনশুমারি ও গৃহগণনায় মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। এ পরিসংখ্যানে বিদেশে অবস্থানরত প্রায় ১ কোটির মতো প্রবাসী এবং বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থানকারী বিদেশিদেরও গণনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অন্যবারের তুলনায় এবারের জনশুমারিতে বেশকিছু নতুনত্ব আনা হয়েছে। যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে তার মধ্যে থেকে একজন ব্যক্তির সম্পদ, খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনযাত্রার নানা তথ্য রয়েছে। পাশাপাশি পরিবারের অনন্য সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এজন্য এসব তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদিও আইনের খসড়ার ৯ (৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর শাস্তির বিধানের কথা। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গণনাকারীরা আরো বেশি সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা রাখা যাচ্ছে। পাশাপাশি এসব তথ্য গোপন রাখতে এবং পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য সরকারকে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতসহ আইনের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। রিয়াদ হোসেন শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App