×

মুক্তচিন্তা

ফটিকছড়ি বিভাজনই যৌক্তিক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২২, ১২:২৯ এএম

শুধুই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়- ইতিহাস ঐতিহ্য, সাহিত্য সংস্কৃতিতে, আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সাহসিকতায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ফটিকছড়ি উত্তরাঞ্চল। তবে এলাকাটি উপজেলা সেবায় অনেকটা অবহেলিত। ফটিকছড়ির অবহেলিত এই অংশ ছাড়া যেমন বৃহত্তর ফটিকছড়িকে চিন্তা করা যাবে না, ঠিক তেমনিই এই অংশ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা যেন অসম্পূর্ণ। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলা দেশের বৃহত্তম উপজেলাগুলোর মধ্যে একটি। চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা এটি। এই উপজেলার মোট আয়তন ৭৭৩.৫৪ বর্গকিলোমিটার (১,৯১,১৪৬ একর)। ২০১১ সালের আদমশুমারি মতে এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৫,২৬,০০৩ জন। মোট পরিবার ১,০০,০০৯টি। তবে এই ১১ বছরে জনসংখ্যা আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, আনুমানিক প্রায় দ্বিগুণ। এত বড় অঞ্চল একটি উপজেলার অধীনে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সরকারি-বেসরকারি সব কার্যক্রম ফটিকছড়ির মূল সদরের আশপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে বেশিরভাগই। অঞ্চল বড় হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি সব কার্যক্রম ও সেবা ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় যথাযথ পৌঁছায় না। বিশেষ করে ফটিকছড়ির উত্তর অংশ এসব কার্যক্রম ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এটি দায়িত্বে অবহেলা কিংবা আন্তরিকতা স্বল্পতার জন্য নয়। এ সমস্যা মূলত আয়তন বড় হওয়ার কারণে সৃষ্ট। এই উপজেলায় ২টি থানা, ২টি পৌরসভা, ১৭টি ইউনিয়ন, ১০২টি মৌজা এবং ১৯৯টি গ্রাম রয়েছে। ভূজপুর থানার আওতাধীন ৬টি ইউনিয়ন বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল এই ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে ফটিকছড়ির এ অংশ অবহেলিত। উপজেলাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা থেকে প্রায় অনেকাংশে বঞ্চিত এসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ফটিকছড়ির দুটি পৌরসভা (ফটিকছড়ি ও নাজির হাট) কোনোটিই উক্ত ছয়টি ইউনিয়নের আশপাশের মধ্যে নেই। ফলে পৌরসভাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। মূলত সমস্যা উপজেলার আয়তনে। আয়তন বেশি হওয়ায় একটি উপজেলার পক্ষে এত বড় অঞ্চলে সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়া প্রায় অসম্ভব। শিক্ষা ও সচেতনতায় এই অংশ তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে। জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আসে এসব এলাকার বাসিন্দাদের মাধ্যমে। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় সাড়ে ৪ হাজার একর আয়তনের রাবার বাগানটি (দাঁতমারা রাবার বাগান) রয়েছে ফটিকছড়ির এ অবহেলিত অংশেই। এছাড়াও রয়েছে উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক চা বাগান। উপরে উল্লেখিত ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে বাগান বাজার ও দাঁতমারা ইউনিয়ন পুরো ফটিকছড়ির আয়তনের প্রায় ৩৭ এবং জনসংখ্যায় ২৫ শতাংশ। বাকি চার ইউনিয়নের আয়তন ও জনসংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। আয়তনে বৃহত্তর এবং অধিক জনসংখ্যা হওয়ায় যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম থেকে উত্তর ফটিকছড়ি ও এর বাসিন্দারা বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ফটিকছড়ি উত্তরাঞ্চলকে বৃহত্তর ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে আলাদা করে নতুন একটি উপজেলা গঠন অতি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন উপজেলা হলে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা জটিলতা দূর হবে, ক্ষমতা ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি মানুষ পাবে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। সরকার ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ ও উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে একধাপ এগিয়ে যাবে। এতে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বাড়বে তেমনি কমবে ফটিকছড়ি উপজেলার ওপর চাপও। কৃষিতে আসবে জাগরণ। সুশিক্ষা সম্প্রসারিত হবে, সংস্কৃতি ও সভ্যতা হবে বিকশিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সমাধান হবে অবকাঠামো ও গণপরিবহনগত সমস্যা। কমবে নিরক্ষরতার হার ও দারিদ্র্যতা। সম্প্রসারিত হবে বাণিজ্যের পরিধি, বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা। সব বিষয়ে জনসচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে শিক্ষা ও সক্ষমতার হার। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই ফটিকছড়ি বিভাজন এখন সময়ের দাবি। এলাকাটি ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, এটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী অতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। তাই এই অঞ্চলের মানুষের দাবি, সমস্যা সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ হিসেবে- হেয়াকো বা তার আশপাশের এলাকাকে কেন্দ্র করে উত্তর ফটিকছড়ি অথবা অন্য কোনো নামে নতুন উপজেলা গঠন করা হোক। সবার জন্য উপজেলা সেবা নিশ্চিত করতে ফটিকছড়ির বিভাজন হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা এখন গণমানুষের দাবি।

হাসান মাহমুদ বজ্র :বাগান বাজার, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App