×

অর্থনীতি

সুরক্ষা নীতিমালার তোয়াক্কা নেই অধিকাংশ বেসরকারি আইসিডির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ০৮:২৫ এএম

সুরক্ষা নীতিমালার তোয়াক্কা নেই অধিকাংশ বেসরকারি আইসিডির

প্রতীকী ছবি

আমদানি-রপ্তানি খাতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো-আইসিডি স্থাপনের অনুমতি দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশ আইসিডিই নীতিমালা বা ডিপোর সেফটি সিকিউরিটি মানছে না। বেসরকারি আইসিডি-সিএফএস নীতিমালা-২০১৬ এর ৯.৩ ধারা অনুযায়ী বিপজ্জনক ও বিস্ফোরক পণ্য হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস (আইএমডিজি) নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৬৫টি কন্টেইনারে রয়েছে বিপজ্জনক পণ্য। অধিকাংশ পণ্যই দাহ্য ও বিস্ফোরক জাতীয়। কোনো কোনো পণ্য পড়ে রয়েছে ২০-২৫ বছর ধরে। আমদানি করার পর কোনো কারণে এসব পণ্য খালাস নেয়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর এ বিষয়ে টনক নড়েছে বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। আমদানি হওয়া রাসায়নিক পদার্থ ভর্তি এসব কন্টেইনার দ্রুত সরিয়ে নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিছু নিলাম ও কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংস করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা এসব কন্টেইনার যথাসময়ে খালাস করতে জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। গত ৭ জুন সন্ধ্যায় জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সময়মতো এসব পণ্য খালাস না হলে তা নিলামে বিক্রি করে দেয়া হবে।

যদিও চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে গত বছরের জুন মাসে ডিপো মালিকদের বিপজ্জনক পণ্যগুলো হ্যান্ডলিং, পরিবহন ও সংরক্ষণ যথাযথ হচ্ছে না বলে সতর্ক করা হয়েছিল। এর কারণে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে বলে উল্লেখ করা হয়। বন্দরের পক্ষ থেকে আইএমডিজি অনুসরণের জন্য কতিপয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।

ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বন্দরের তাগাদাপত্রের কথা স্বীকার করে বলেন, সব ডিপো মালিকদের পক্ষে আইএমডিজি অনুসরণ করা সম্ভব নয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গত মঙ্গলবার মৌখিকভাবে জানিয়েছেন আইএমডিজি নীতিমালা যেসব ডিপো মানতে পারবে শুধু তাদের যেন ওই ধরনের বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণের জন্য দেয়া হয়।

বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর দিন ৫ জুন তিন কন্টেইনার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দ্রুত সরিয়ে নিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় বন্দর। ৬ জুন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের চালান স্পট নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওইদিনই তিন কন্টেইনারে থাকা ৩০ হাজার ৪৫০ কেজি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের চালানটি স্পট নিলামে বিক্রি করে কাস্টম। ৭ জুন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি একটি কন্টেইনার খালাস নেয় নিলামকারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে গত ৭ জুন বন্দর অভ্যন্তরে কেমিক্যাল ভর্তি কন্টেইনার থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনার পরপরই কাস্টমকে আরেকটি চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘কেমিক্যালসহ অন্যান্য পুরনো পণ্যবাহী কন্টেইনারের কারণে কোনো প্রকার দুর্ঘটনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।’ এরপর ওইদিনই (৭ জুন) একটি জরুরি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম কাস্টম। এতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড, প্রাইভেট কন্টেইনার ডিপো ও বিমানবন্দর থেকে রাসায়নিক পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যভর্তি কন্টেইনার নির্ধারিত সময়ে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের খালাস নিতে হবে। বন্দর ও ডিপো থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এবং বিমানবন্দর থেকে ২১ দিনের মধ্যে কিংবা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে পণ্য নিলামে তোলা হবে।’

বেসরকারি ডিপোগুলো মানছে না নীতিমালা : ডিপোগুলো পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি আইসিডি নীতিমালা থাকলেও বিএম ডিপোর মতো চট্টগ্রামে ১৯টি কন্টেইনার ডিপোর প্রত্যেকটিতেই তা না মানার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি আইএসপিএস কোড অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি এসব আইসিডিতে। বেসরকারি আইসিডির মনিটরিং কমিটি কর্তৃক ২০১৭-২০২০ সালে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব ডিপো নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এসব ডিপোর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপণ ও সিভিল ডিফেন্সের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়নি। অবকাঠামো নিরাপত্তা, সেফটি এবং একটি আইসিডিতে যেসব যন্ত্রপাতি ও ইক্যুইপমেন্ট থাকা দরকার তাও সব আইসিডি নিশ্চিত করতে পারেনি।

অভিযোগ রয়েছে, ডিপোটি কোথায় স্থাপন করা হচ্ছে, কীভাবে এটি পরিচালনা করা হবে, আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডেল করার মতো সক্ষমতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে লাইসেন্স দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ; এরপর আর তদারকি করে না। চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপো এরই মধ্যে লাইসেন্স পেয়ে পণ্য রপ্তানি করলেও কোনোটিরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। ডিপোর ব্যাপারে শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এসোসিয়েশন এর আগে কয়েক দফা আপত্তিও জানিয়েছে। তারপরও ৩টি নতুন ডিপো হচ্ছে চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রামে ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর মধ্যে রয়েছে- এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগং কন্টেইনার, কিউএনএস কন্টেইনার সার্ভিস, ট্রান্স কন্টেইনার, কেএন্ডটি লজিস্টিক, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, ওশান কন্টেইনার, গোল্ডেন কন্টেইনার, শফি মোটরস, ইনকনট্রেড, পোর্টলিংক লজিস্টিকস, ভারটেক্স অফডট, বে লিং কন্টেইনার্স, ইস্টার্ন লজিস্টিক, কেডিএস লজিস্টিক, বিএম কন্টেইনার ডিপো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি ডিপোর কার্যক্রম, পরিদর্শন ও মান নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোসহ ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার, সিএন্ডএফ প্রতিনিধি ও শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। প্রতি চার মাস অন্তর চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল ডিপো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তা হয় না। বেসরকারি আইসিডি নীতিমালা-২০১৬-এর অবকাঠামো, যান্ত্রিক ও যোগের ব্যাপারে ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রথমেই বলা হয়, ডিপোতে পানি ও বিদ্যুতের সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু গত শনিবার রাতে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর দেখা যায়- ফায়ার সার্ভিস ডিপো থেকে পানির সরবরাহ পায়নি। নীতিমালার ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এর সেফটি ও সিকিউরিটির কথা বলা হলেও বিএম কন্টেইনার ডিপো তাও পুরোপুরি অনুসরণ করেনি। জারক কেমিক্যাল হিসেবে তা হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণের জন্য আইএমডিজি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি।

বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি মনিটর করার দায়িত্ব রয়েছে কলকারখানা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু বেসরকারি ডিপোগুলোর কার্যক্রম, পরিদর্শন ও মান নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মিটিংই নিয়মিত হয় না। চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য কমিটি আছে, কিন্তু নিয়মিত মিটিং হচ্ছে না। নিয়মিত মিটিং হলে ডিপোগুলোর ত্রæটি-বিচ্যুতি আলোচনায় উঠে আসে। এতে ডিপোগুলোর সতর্ক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

বিকডা সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, বেসরকারি ডিপোর কার্যক্রম ও নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্বে একটি ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আছে। গত দুই বছর করোনার কারণে মিটিং হয়নি। তবে আমাদের তদারকি কার্যক্রম চলমান আছে। ডিপোতে কোনো অনিয়ম হলে তা দেখার দায়িত্ব তদারকি বিভিন্ন সংস্থার আছে। এ দুর্ঘটনার আগে কোনো সংস্থা তো আপত্তি তোলেনি। আর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে কখনো আগুন লাগে না।

চট্টগ্রাম বন্দরে ২৬৫টি কন্টেইনারে বিপজ্জনক পণ্য : দেশের ৯৮ শতাংশ আমদানিপণ্য আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এরই মধ্যে বন্দরের ইয়ার্ড ও বিভিন্ন শেডে চার হাজার কন্টেইনার পণ্য রয়েছে। বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতেও রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যভর্তি কন্টেইনার। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে খালাস না হওয়া পণ্যের কন্টেইনারও রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ২৬৫টি কন্টেইনারের তালিকা দিয়েছে কাস্টমকে। চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে পণ্য রাখার ১৪টি শেড রয়েছে। এর মধ্যে পি-শেডে রাখা হয় বিপজ্জনক পণ্য। প্রায় ৩০ হাজার ৩৭৫ বর্গফুট আয়তনের এ শেড থেকেই এসব বিপজ্জনক পণ্য সরাসরি খালাস দেয়া হয়। আবার বন্দরে ইয়ার্ডগুলোতেও ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিপজ্জনক পণ্যবাহী কন্টেইনার রাখা হয়। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, হাইড্রো ক্লোরাইড, সালফেট, কস্টিক সোডা, ওষুধের কাঁচামাল, রং তৈরির নানা কেমিক্যাল, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, পারফিউমারি, ফিক্সিট সিলিকন, অ্যাস্ট্রোজেনসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল পণ্য রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই দাহ্য ও বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দার ভোরের কাগজকে বলেন, বন্দর থেকে ২৬৫টি বিপজ্জনক পণ্যবাহী কন্টেইনারের তালিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমরা গত ৩১ মে ইনভেন্ট্রি শেষ করেছি। আমরা কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সার্ভারে যাচাই করে দেখেছি ২৮টি কন্টেইনার পণ্য আমদানিকারকরা বিএলের (বিল অব লেডিং) মাধ্যমে খালাস নিয়ে গেছে। আবার তালিকায় থাকা ৪৪টি কন্টেইনারের পণ্যের মেয়াদ নেই। এগুলো ধ্বংসযোগ্য। ৪১টি কন্টেইনার পণ্যের নিলাম চলমান। আগামী ২৮ জুন ২৮ লটে আরো ৪০টি কন্টেইনারের পণ্য নিলামে তোলা হবে। তাছাড়া ৫৫টি কন্টেইনার যাচাই করা হচ্ছে। এর মধ্যেও অনেকগুলো নিলামে তোলা হবে। অন্যগুলো ধ্বংস করা হবে। যাচাইবাছাই হয়নি এমন ৬০টি কন্টেইনারের বিষয়েও কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার (প্রিভেনটিভ) নুরউদ্দিন মিলন ভোরের কাগজকে বলেন, কাস্টমস আইন অনুযায়ী আমদানি করা পণ্যের চালান বন্দরে অবতরণের ৩০ দিনের মধ্যে এবং বিমানবন্দরে অবতরণের পরবর্তী ২১ দিনের মধ্যে অথবা উভয়ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত অতিরিক্ত সময়সীমার মধ্যে শুল্ককর পরিশোধ করে খালাস নেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আমদানিকারকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের পণ্য চালান খালাস নিচ্ছেন না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জট সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্য আসে। এসব পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ফেলে রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বিএম ডিপো ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন-বিস্ফোরণে টনক নড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের। এরপর তড়িঘড়ি করে গত ৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে চার বছর ধরে পড়ে থাকা ৩০ টন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের মধ্যে ডুবে আছে চট্টগ্রাম বন্দর। তিনি বলেন, বন্দর অভ্যন্তরে কেমিক্যালবাহী কন্টেইনারসহ পুরনো অনেক পণ্যের কন্টেইনার রয়েছে। এর অনেকগুলো তীব্র দাহ্য প্রকৃতির। দীর্ঘদিন বন্দরের জেটি এলাকায় বিভিন্ন শেডে পড়ে থাকা এসব পণ্য নিলামের জন্য কাস্টমকে বারবার তাগাদা দেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে রাসায়নিক পদার্থের কতগুলো কন্টেইনার আছে তার কোনো তথ্য বন্দরের কাছে নেই।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দার বলেন, পর্যায়ক্রমে সব রাসায়নিক কন্টেইনার সরিয়ে নেয়া হবে। এ কারণেই জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কাস্টমস। নিয়মানুযায়ী রাসায়নিক জাতীয় পদার্থ খালাস না নিলেও তা নিলামে বিক্রি করা হবে। তিনি বলেন, সনাতনী পদ্ধতিতে রেজিস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে নিলাম কার্যক্রম চলে। নিলামে অটোমেশন শুরু হলে ভবিষ্যতে জটিলতা অনেক কেটে যাবে। বন্দরে অনেক পুরনো কন্টেইনার রয়েছে। অনেক কন্টেইনার নাড়ানোও সম্ভব নয়। ১০-১৫ বছরের পুরনো কন্টেইনার রয়েছে। তারপরও আগের অন্য সময়ের চেয়ে কাস্টমসের নিলাম কার্যক্রমে অনেক গতি এসেছে। পণ্য ধ্বংসের জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু বিপজ্জনক পণ্য রয়েছে, যেগুলো চাইলেও যত্রতত্র মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করা যাবে না। বিএম কন্টেইনারের দুর্ঘটনার পর থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিপজ্জনক কন্টেইনারগুলো নিলাম কিংবা ধ্বংসের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি কন্টেইনার পরিবহন না করার ঘোষণা : অন্যদিকে সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে আর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি কন্টেইনার পরিবহন না করার ঘোষণা দিয়েছে ৩টি মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও)সহ একাধিক শিপিং লাইন্স। এতে করে দশ কোটিরও বেশি টাকা দামের ১১৩ কন্টেইনার হাউড্রোজেন পারঅক্সাইড চট্টগ্রামের ৪টি আইসিডিতে আটকা পড়েছে। একই সঙ্গে ওই ৪টি আইসিডিও পড়েছে ঝুঁকির মুখে। মেইন লাইন অপারেটরগুলোর মধ্যে ওএনই, ওওসিএল এবং গোল্ডস্টার শিপিং লাইন আরো কয়েকটি শিপিং লাইন্সও তাদের জাহাজে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি কন্টেইনার পরিবহন না করার ঘোষণা দেয়। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের ৪টি আইসিডিতে ১১৩ কন্টেইনার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে। যেগুলো সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামের ওসিএল ডিপোতে ৪৯ কন্টেইনার, পোর্টলিংক ডিপোতে ৩৩ কন্টেইনার, ইস্টার্ন লজিস্টিকে ২৪ কন্টেইনার এবং কেএনটিতে ৭ কন্টেইনার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে। এসব পণ্য এখন আর রপ্তানি করার পথ থাকছে না বলেও সূত্র জানিয়েছে।

গার্মেন্টস শিল্পের ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ নানা খাতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহৃত হয়। দেশের বেশ কয়েকটি কারখানা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদন এবং বিপণন করে থাকে। ভিয়েতনাম, চীন, কোরিয়াসহ নানা দেশে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানি হয়। দেশেও এই কেমিক্যালের চাহিদা রয়েছে। তুলনামূলকভাবে সস্তা এই কেমিক্যাল প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দরে রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রতি জারে ৩০ লিটার করে ভর্তি করে এই কেমিক্যাল রপ্তানি করা হয়। ২০ ফুটের একটি কন্টেইনারে ২০ টন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই করে জাহাজীকরণ করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App