×

জাতীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আশা-আশ্বাসেই শেষ ঢাকা-নেপিদো বৈঠক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ০৯:২১ পিএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সরকারের অগ্রাধিকারে থাকলেও মিয়ানমারের অনিচ্ছায় তা এখনও শুরু হয়নি। তবে সরকার এ বছর সীমিত আকারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। মঙ্গলবার (১৪ জুন) বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের পঞ্চম সভায় আলোচনা হয়। এই বৈঠকেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আশা-আশ্বাসের মধ্যেই রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

নেপিদোর সেনা সমর্থিত সরকারের ক্ষমতা দখলের পর প্রথমবারের মতো দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে নেপিদোর পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব উ চান আয় নেতৃত্ব দেন।

এর আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ সভা নেপিদোতে ২০১৯ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে গত তিন বছরে এই বৈঠক হয়নি।

মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ বছর প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অনেকদিন পর দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে এবং আগামী দিনে এটি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। বৈঠকে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু, রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ এবং যারা ফেরত যাবে তাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার ওপর বাংলাদেশ থেকে জোর দেয়া হয়। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক নিয়মিতভাবে করার বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি। মিয়ানমারে সেনা শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে টেকনিক্যাল কমিটির মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। এরইমধ্যে অ্যাড-হক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পার্সনস ফ্রম রাখাইন-এর বৈঠক হয়েছে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের বারবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুদেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে। কিন্তু ওই মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। মিয়ানমারে অং সান সু কির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এরপর ওই বছর আর আলোচনার টেবিলে বসতে পারেনি ঢাকা-নেপিদো। এর দীর্ঘ এক বছর পর চলতি বছরের শুরুর দিকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে দুদেশ। অ্যাড-হক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পার্সনস ফ্রম রাখাইনের ওই বৈঠকই ছিল সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর টেকনিক্যাল কমিটি পর্যায়ে দুদেশের প্রথম বৈঠক।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এবারের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে জোর দিয়েছে ঢাকা। এক্ষেত্রে নেপিদোর দেয়া কথা না রাখার বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আটকে থাকা ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে জটিলতা ও ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে মিয়ানমারকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর এখন পর্যন্ত আট দফায় মিয়ানমারের কাছে ৮ লাখ ৩০ হাজার জনের তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে ফেরত দিয়েছে। তবে এ তালিকা এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। কেননা, এ তালিকায় একই পরিবারের অনেকের নাম নেই। এবারের বৈঠকে অসম্পূর্ণ তালিকার বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের দেয়া তালিকায় কি খুঁত রয়েছে সেগুলোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। কেননা, রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা। তবে ২০২০ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য একমাত্র আশা জাগানোর ঘটনা যেটি ঘটেছে তা হলো- মিয়ানমারে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে তাদের সুরক্ষা দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App