×

জাতীয়

এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে ৩টি প্রাণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ০৮:৪৩ এএম

এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে ৩টি প্রাণ

প্রতীকী ছবি

মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত চেয়ে প্রায়ই অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন। কেউবা পরিচিত স্বজনের কাছে ফোন করে সহায়তা চান। কেউ যোগাযোগ করেন সন্ধানী, বাঁধন, কোয়ান্টামসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে। অনেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রক্ত পান। তবে বিপরীত চিত্রও রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। এই চাহিদার মাত্র ৩২ শতাংশ আসে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে। বাকি ৬৮ শতাংশ আসে রক্তগ্রহীতার স্বজন ও অপরিচিতদের কাছ থেকে। রক্তের চাহিদা থাকায় অবৈধ ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিচ্ছে মানুষ। এতে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনে বাড়ছে ঝুঁকি। ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একব্যাগ রক্ত দিয়ে শুধু একটি নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষে ৩টি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কারণ এক ব্যাগ রক্তকে এর উপাদান হিসেবে ৩ ভাগে ভাগ করে ৩ জনের দেহে সঞ্চালন করা সম্ভব। রোগভেদে একেক রোগীর জন্যে রক্তের একেক উপাদান লাগে। যেমন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে শুধু রক্তরস (প্লাজমা) দিলে চলে। আবার রক্তস্বল্পতার রোগীকে দিতে হয় রক্তকণা (প্যাকড সেল)। হিমোফিলিয়া রোগীদের ফ্যাক্টর ৮ ও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দিতে হয় লোহিত রক্তকণা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম বলেন, দেশে ৩০ থেকে ৩২ ভাগ রক্ত পাওয়া যায় স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে থেকে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে এই হার আরো কমেছে। সন্ধানী, বাঁধন বা কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদানের পাশাপাশি ব্লাড ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। রোগীদের সেখান থেকে রক্ত পেতে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রক্তের প্রয়োজন রোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে মেটানো হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, ‘সরকারিভাবে একটি জাতীয় কর্মসূচির মাধ্যমে শতভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রক্তের চাহিদার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ অনেক ব্লাড ব্যাংক গজিয়ে উঠেছে। এতে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন না হওয়ায় দুরারোগ্য রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল হোসেন বলেন, আমাদের দেশে একক রক্তদাতার সংখ্যা বেশি থাকলেও বহুবার রক্ত দিয়েছেন এমন দাতার সংখ্যা অনেক কম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদানের হারে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে, এমনকি ভুটানের চেয়েও। তবে আশার কথা হলো, আমাদের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩ শতাংশ যদি শুধু তাদের জন্মদিনে রক্ত দেন, তাহলেই আমরা আমাদের প্রয়োজনের পুরোটাই মেটাতে পারি স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে। পেশাদার রক্তবিক্রেতাদের কাছ থেকে রক্ত না নিয়ে রক্তের চাহিদা পূরণের জন্যে প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ১৪ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদানকারী আড়ালে থাকা মানুষের জন্যেই দিবসটি উৎসর্গীকৃত। এদিন অস্ট্রিয়ান বায়োলজিস্ট ও ফিজিশিয়ান বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের জন্মদিন। এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ এ, বি, ও, এবি, ব্লাড ট্রান্সফিউশিন পন্থার জনক। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডোনেটিং ব্লাড ইন এন অ্যাক্ট অব সলিডারিটি; জয়েন দ্যা এফোর্ট এন্ড সেভ লাইভস’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App