×

সাহিত্য

শিল্পী বিপদ ভঞ্জন সেনের তুলিতে বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ব নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ১১:৪২ পিএম

শিল্পী বিপদ ভঞ্জন সেনের তুলিতে বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ব নেতারা

সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারিতে শিল্পী বিপদ ভঞ্জন সেন কর্মকারের ‘স্বাধীনতা’ শীর্ষক একক চিত্র প্রদর্শনীর প্রদর্শনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও অন্যরা। ছবি: ভোরের কাগজ

শিল্পকলা একাডেমির গ্যালারিতে ঢুকেই দেখা গেল নানা ভঙ্গিমায় বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন প্রতিকৃতি। কোনো ফ্রেমে বাবা মায়ের সঙ্গে উচ্ছ্বাসিত বঙ্গবন্ধু, কোনোটাতে নিজের অফিস কক্ষে হাস্যোজ্জল বঙ্গবন্ধু, কোনোটাতে নিজেই ক্যামেরা ম্যানের ভূমিকায়, কোনোটাতে পায়ড়া উড়িয়ে দেয়ার হাস্যেজ্জল ভঙ্গিতে, কোনোটাতে লাল সবুজের পতাকা পাশে মহানায়ক, কোনোটাতে বঙ্গবন্ধুর চিন্তিত ভঙ্গি, জনতার উদ্দেশ্যে তেজোদীপ্ত বঙ্গবন্ধু, কোনোটাতে কন্যা শেখ হাসিনার কপাল ঘেষা সেই বিখ্যাত ভঙ্গি, এ ছাড়া রয়েছে ব্যক্তিত্বময়ী বঙ্গমাতার মুখ, লাল সবুজের পতাকা এবং ফুলের মাঝে রাসেল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যোজ্জল পায়ড়া ওড়ানোর ভঙ্গি, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বঙ্গবন্ধুর অর্ধশতাধিক নানা ভঙ্গিমার প্রতিকৃতি। আরো রয়েছে রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল, মাস্টারদা থেকে মাও সেতুং, লেলিন থেকে ফিদেল ক্যাস্ত্রো, মহাত্মা গান্ধী থেকে ইন্দিরা গান্ধী, জাতীয় চার নেতা থেকে বিজ্ঞানী জে সি বোস, জীবনানন্দ থেকে শামসুর রাহমান, জয়নুল থেকে শাহাবুদ্দিন, হেমন্ত থেকে জর্জ হ্যারিসনসহ এমন গুরুত্বপূর্ণ ছবির পাশাপাশি একাত্তরের হত্যাযজ্ঞ, বিজয়োল্লাস, নিয়াজীর আত্মসমর্পন। গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন এমন অনেকেরও প্রতিকৃতিসহ ১৬৮টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার তিন নম্বর গ্যালারিতে শিল্পী বিপদ ভঞ্জন সেন কর্মকারের ‘স্বাধীনতা’ শীর্ষক পাঁচদিনব্যাপী ৭ম একক চিত্র প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পী বিপদ ভঞ্জন সেন কর্মকার বলেন, বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। তার জন্য স্বাধীন পতাকা পেয়েছি। তিনি জন্ম না নিলে বাংলাদেশ হতো না। তিনি আমাদের মধ্যে ছিলেন, আছেন, থাকবেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এই সব প্রতিকৃতি আকায় আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আশির্বাদ। সে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা আমার জীবনে। ১৯৬৯ সালে ঢাকা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন আমি ঢাকা শুক্রাবাদে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছেই থাকতাম। একদিন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার জন্য মানিকগঞ্জের এক রাজনৈতিক নেতা আমাকেসহ ৫জনকে নিয়ে সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল ঐ নেতার। আমি ছোট, ছাত্র মানুষ। রাজনীতির কিছু বুঝি না। তাই চুপচাপ একটু পেছনের চেয়ারে বসে বঙ্গবন্ধুকে প্রাণভরে দেখছিলাম আর কথা শুনছিলাম। বঙ্গবন্ধুও কথার ফাঁকে আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন। সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম। কথার শেষে বঙ্গবন্ধু আমার উদ্দেশ্যে হঠাৎ বললেন, এই তুমি কে? কি কর? আমি বললাম, আমার নাম বিপদ ভঞ্জন সেন কর্মকার। ঢাকা চরুকলার ছাত্র। বলা মাত্রই তিনি বললেন, বাহ নামটাতো বেশ সুন্দর, বলেই চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন, ‘বাবা তোমাদের জন্যই আমি আজ পর্যন্ত বেঁচে আছি’। তিনি এতো বড় নেতা, আমার মত ছোট একজন ছাত্রের মাথায় হাত বুলাতে পারেন। তখন আমার সারা শরীর কাঁপছিল। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন স্মৃতিকথা গুছিয়ে বলার পর তিনি বললেন, আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না!

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শিল্পীদের ভূমিকা ছিল অগ্রভাগে। কোনো শিল্পী দিনে দিনে জন্মায় না। শিল্পীর জন্ম হয় সাধনায়।

তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির শিল্প সংস্কৃতি অর্থনীতি শেষ করে ফেলা হয়েছিল।

জাফর ওয়াজেদ বলেন, একাত্তর সাল থেকে আমরা দেখেছি অসহযোগ আন্দোলনকে শিল্পীরা কিভাবে এগিয়ে নিয়েছিলেন এবং আমরা গৌরব বোধ করি এই কারণে একাত্তরে কোনো শিল্পী পাকিস্তান সরকারের কাছে মাথা নত করেনি।

উল্লেখ্য প্রদর্শনী চলবে ২৭ জুন সোমবার পর্যন্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App