×

জাতীয়

রাত ৮টায় দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০৮:৩৪ এএম

রাত ৮টায় দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত
নগরবিদ বলছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত-দোকানের জন্য পৃথক সময় করা হলে যানজট নিরসন সম্ভব
টেকসই শহর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে রাত ৮টার মধ্যেই ঢাকার দোকানপাট বন্ধ করতে চান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আগামী ১ জুলাই থেকেই এটি করতে চান তিনি। তার যুক্তি- সারাদিন ঢাকার ওপর অত্যাচার হবে, আর ঢাকা আমাদের সুন্দর পরিবেশ উপহার দেবে, সেটা কামনা করা যৌক্তিক নয়। পৃথিবীর সব শহরের মতোই ঢাকার সময়সীমা থাকা উচিত। তাই সবার সঙ্গে আলাপ করে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধের উদ্যোগ নেব।

এক্ষেত্রে রেস্তোরাঁ ও ওষুধের দোকান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকবে। অবশ্য মেয়রের এ সিদ্ধান্ত কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কেননা, ১০ জুলাই ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ঢাকায় বসবে কুরবানির পশুর হাট। রাতভর চলবে বেচাকেনা। তাই এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর নগরবিদরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে নগরীর যানজট কমানো আর শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও দোকানপাট পৃথক সময়ে চালু করা গেলে সঠিক নগর ব্যবস্থাপনা সম্ভব। তবে মেয়রের এ সিদ্ধান্তে কোনো মন্তব্য করতে চাননি দোকান-মালিক সমিতির নেতারা।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রের এ সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক বা তা আদৌ মানা সম্ভব কিনা- সে বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সংগঠনটির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে এখনো কোনো কথা হয়নি।

তবে ঢাকা দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেছেন, ১ জুলাই থেকে রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধের আমরা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসব। দুয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে বসেছি। আরো বসব। দোকান মালিক সমিতি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দোকান মালিক সমিতি চাচ্ছেন রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে। আর রেস্তোরাঁ-ফার্মেসি মালিকরা চাচ্ছেন সারারাত দোকানপাট খোলা রাখতে। এগুলো নিয়ে আরো আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তবে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করলেও উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো এ বিষয়ে দক্ষিণের মেয়র কোনো আলোচনা করেননি। আমরাও নিজেদের মধ্যে কোনো মিটিং করিনি। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আগে বসতে হবে। তাদের সম্মতি নিতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এটি করতে হবে। একই কথা জানালেন উত্তরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, এটা ভালো একটা সিদ্ধান্ত। সারাবিশ্বেই কোথাও ৯টা ১০টার পর দোকানপাট খোলা থাকে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মার্কেটগুলো বন্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে আমরা এখনো এ ধরনের কোনো আলোচনা করিনি।

যা বলছেন নগরবিদরা : এদিকে মেয়রের এই উদ্যোগকে খুব একটা নেতিবাচক না বললেও তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থপতি ও নগরবিদরা। তাদের মতে সবার আগে প্রয়োজন ঢাকা নগরীকে যানজট মুক্ত করা। এজন্য মেয়ররা নির্বাচনের আগে ঢাকাকে যানজট মুক্ত করার যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন, সবার তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাত ৮টার পর যানজট নিয়ে জনগণের কোনো উৎকণ্ঠা নেই। নগরবাসীর উৎকণ্ঠা গন্তব্যে সময়মতো যেতে না পারা। আমরা সবসময় সমস্যার প্রকৃত জায়গায় না গিয়ে সমাধানের নামে জটিলতা তৈরি করি।

হ্যাঁ, সত্যিকার অর্থেই সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যেই আমাদের যানজটমুক্ত নগরী প্রয়োজন। তখন সবাইকে ঘরে ফিরতে হয় পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য। ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মকাণ্ড বা বিনিয়োগ সব জায়গায় আমরা সাংঘাতিকভাবে বিব্রত অবস্থায় আছি। এই স্থপতির মতে রাত ৮টার পরই দোকান বন্ধের হঠাৎ একটা উদ্যোগ মূল সমস্যার সমাধান না করে ভিন্ন এক ধরনের অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা তৈরি ছাড়া কিছুই না। তিনি বলেন, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে পারতাম যদি সেটা সার্বিকতা নির্ভর কোনো উদ্যোগ হতো। আমি সিটি করপোরেশনের কাছে প্রত্যাশা করি, সবার আগে সমস্ত অবৈধ বিপণিবিতান, রাস্তার পাশের দোকান, পার্কিং ব্যবস্থা, পথচারীবান্ধব সমস্ত ফুটপাতকে দখলমুক্ত করার যে কর্মউদ্যোগ মেয়রদের প্রতিশ্রæত ছিল তা বাস্তবায়ন করে ঢাকাকে যানজটমুক্ত নগরী হিসেবে উপহার দিন। ফুটপাতকে অবমুক্ত রাখা ও পদচারীবান্ধব করার যে উদ্যোগ নির্বাচনের সময় ওনারা দিয়েছিলেন, সেটির বাস্তবায়ন হোক।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, এটি বাস্তবায়ন করতে হলে দুই মেয়রকেই একমত হতে হবে। পাশাপাশি সরকারের সম্মতি প্রয়োজন আছে। কেননা, এটি রাজধানী। আর এই সিদ্ধান্তটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, হ্যাঁ, এর একটা সুফল আছে। ঢাকার যানজট আমাদের সবচেয়ে বেশি ভোগায়। নগরীর দোকানগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়েই বন্ধ হওয়া উচিত। এখন এরকম একটা নির্দেশনা আছেও।

তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে ঢাকায় সবচেয়ে যে বিষয়টি দরকার, সেটা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত আর দোকানপাট। এই ৩টা প্রতিষ্ঠানের তিন ধরনের সময়সীমা থাকা দরকার। তাহলে ট্রাফিক জ্যামকেও ঠিকমতো ম্যানেজ করা যাবে। যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি ভোরবেলা শুরু হয়। অফিসগুলো ৯টায় শুরু হয়, আর দোকানপাটগুলো বেলা ১টা বা ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা বা ১০টা পর্যন্ত চলে। রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ না করে এই ৩টা ধাপে তিন প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে নগরীর অনেক বিষয়কে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App