×

জাতীয়

বিরোধীতার মুখে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০৯:৫১ পিএম

বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের তুমুল বিরোধীতার মুখে চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। সোমবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২২’ অনুমোদনের মাধ্যমে সম্পূরক বাজেট পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে সংসদ ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমতি দেয়া হয়। সর্বাধিক ৫ হাজার ৩০৭ কোটি ৫৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থ বিভাগ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের অর্থ অনুমোদনের জন্য ২৬টি মঞ্জুরি দাবির ওপর ২৩৮টি ছাটাই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৪টি দাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- জননিরাপত্তা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বাকি মঞ্জুরি দাবিগুলো সরাসরি ভোটে প্রদান করা হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবই কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২২’ উত্থাপন করলে তা কন্ঠভোটে পাস হয়।

সম্পূরক বাজেটের আওতায় ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকুলে ২৬টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপিত হয়। এর বিপরীতে ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৫ হাজার ৩০৭ কোটি ৫৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থ বিভাগ খাতে বরাদ্দ পায়। এর পরেই রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়কে ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়। সবচেয়ে কম এক কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

এছাড়া বেশি বরাদ্দ পাওয়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ৫০০ কোটি ৬৯ লাখ ৬ হাজার টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ৭৫ কোটি ৬৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৭৮ কোটি ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ১১০ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ৪ কোটি ৮১ হাজার টাকা, আইন বিচার বিভাগ ৭ কোটি ৮১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগে ১৭৮ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক হাজার ৯০৮ কোটি ৭১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ খাতে ২৫০ কোটি ৮১ লাখ ১২ হাজার টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৪৯৭ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ৫২ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ২৮২ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১৪২ কোটি ৫৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৯১ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ৬২৬ কোটি ৫৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১২ কোটি ৪২ লাখ ১৬ হাজার টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ১৪৭ কোটি ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৭৫৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১৭২ কোটি ৭১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৫৪ কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৩৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৩১ কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪০১ কোটি ৩১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কেবলমাত্র তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এরই প্রেক্ষিত্রে সংসদে এই সম্পূরক বাজেট পাস হয়।

সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ২৬টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ২৩৮টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির মো. মুজিবুল হক, কাজী ফিরোজ রশীদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্নান ও পীর ফজলুর রহমান, বিএনপি’র মো. হারুনুর রশীদ, মো. মোশাররফ হোসেন, ও রুমিন ফারহানা, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।

তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমালোচনার পাশাপাশি সম্পূরক বাজেট বরাদ্দ না দেয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, বিভিন্ন খাতে ব্যাপক দুর্নীতির ফলে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। এটি পাশ করে আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানান। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দের ৪১ শতাংশ খরচ না করার তীব্র প্রতিবাদ করে স্বাস্থ্য খাতে আবারো কেন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে সমালোচনা করেন।

বিএনপির হারুনুর রশীদ পাঁচার হওয়ার অর্থ ফেরৎ আনা ও পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। বক্তারা ব্যাংকগুলোর ভুয়া ঋণ দেয়া, ঋণ খেলাপী ও দেউলিয়া হওয়া এবং অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক সরাসরি অর্থায়নের তীব্র বিরোধীতা করেন এবং ব্যাংকগুলো তারল্যশূন্য হওয়া ও ভুয়া ঋণ বিতরণের জন্য যারা দায়ি তাদের শাস্তির দাবি জানান।

তবে এ বিষয়ে কোনও জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্পূরক বাজেটের আলোচনায় তিনি জবাব দেবেন না বলেও সংসদকে জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য কিছু কথা বলেছেন। কিন্তু আমি আজকে কোনও জবাব দেবো না। জবাব দেবো বাজেটের সময়। বাজেট বক্তৃতায় যখন সময় পাবো, তখন অবশ্যই জবাব দেবো।স

সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি বাজেটেই সরকারের উন্নয়নের অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকসহ সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রাক্কলন করা হয়ে থাকে। পরে বাজেট বাস্তবায়নকালে যৌক্তিক কারণে কখনও কখনও কিছুটা সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। এ বছরের প্রেক্ষাপট আমাদের সবার জানা। কোভিড ১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। যার কমবেশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে সম্পূরক বাজেটে যৌক্তিক কারণে ব্যয় এবং ঘাটতি কিছুটা সমন্বয় করেছি। তবে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস-চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জিত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App