×

জাতীয়

নির্বাচনে বিরোধী দল না আসলে গুরুত্ব কমে যাবে: সিইসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০৬:১১ পিএম

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আইন কানুন যেটা আছে, সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। সংসদ নির্বাচনে প্রচ- সহিংসতা হলে আমরা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে দেবো, আমাদের সেই ক্ষমতা আছে। তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া খুবই প্রয়োজন। যদি মূল বিরোধী দল নির্বাচনে না আসে, তাহলে নির্বাচন স্বচ্ছ-অস্বচ্ছ যাই হোক, সেটার গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমে যাবে। কারণ ডেমোক্রেসির মূল কথাই হচ্ছে পজিশন এবং অপজিশন।

সোমবার (১৩ জুন) নির্বাচন ভবনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনীকালীন সরকার, বর্তমান যে সরকার তার ধরন পাল্টে যাবে। তখন পলিসি নিয়ে উনারা কাজ করবেন না। পৃথিবীর সব দেশেই এটা আছে। তিনি বলেন, আমরা টিআইবির প্রতিনিধিদের বলেছি, যে আইন-কানুন আছে সে অনুযায়ী সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। সব নির্বাচনে আমরা সরকারের কাছে সহায়তা চাইব। সরকার অবশ্যই সে সহযোগিতা করবে বলে আশা করি। সহায়তা মূলত পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রশাসন কেন্দ্রিক, আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্য কোনো মিনিস্ট্রি নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একটির বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতিদিন যে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে আসছে, এখান থেকে সরে আসতে হবে। এদের যদি মুখোমুখি করা যায়, তাহলে আলোচনা হবে গঠনমূলক। টেবিলের বাইরে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণাত্মক বক্তব্যে কিন্তু দূরত্ব কমবে না। কারণ আমরা চাচ্ছি নির্বাচনে সব দল অংশ নিক। তিনি আরও বলেন, সহিংসতার কারণে কোথাও যদি নির্বাচন বিঘ্নিত হয়, আমাদের ক্ষমতা আছে কেন্দ্র বাতিল করে দেওয়ার। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকব। আমরা চাইব কেন্দ্রে যাতে ভোটাররা যেতে পারেন এবং নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দলগুলোর উপলিব্ধ করা উচিত নির্বাচনে যেন বাণিজ্য না হয়। মানে কাউকে বাণিজ্যের জন্য এমপি হতে হবে, এমন কিছু যেন না হয়। নমিনেশন এনে যে করেই হোক নির্বাচনে জিততে হবে- এই মানসিকতা থেকে সবাইকে সরিয়ে আনা গেলে আমাদের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা আরও উন্নত অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।

কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্যকে (এমপি) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দিলেও তিনি মানেননি। এক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনে এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো কিনা জানি না। কতগুলো বিষয় আছে উনাকে চিঠি দিয়েছিলাম যেন উনি না থাকেন, যে যারা ভিভিআইপি তারা পারবেন না। কিন্তু সংসদ নির্বাচন যখন হবে, তখন তো তারা এলাকায় থাকবেন। উনারা সংসদীয় এলাকায়, নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। কিন্তু কিছু আচরণ ফলো করতে হবে। এই বিষয়টা তো আপেক্ষিক আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো কি পারবো না। সুতরাং আমাদের চেষ্টা থাকবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সব দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। ভারতে হচ্ছে, আমেরিকাতে হচ্ছে। সরকার তো সরকার। দল ভিন্ন জিনিস। আমরা এই বিভাজনটা স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি। সরকারে যারা আছেন তারা শপথ নিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। সম-আচরণ করবেন, পক্ষপাতিত্ব করবেন না। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে যেটা দেখি সেটা কিন্তু গভমেন্ট নয়। তারপর জয়ী হয়ে যেটা পার্লামেন্টে আসে ‘দ্যাট ইজ পার্ট অব দ্য গভমেন্ট, লেজিসলেটার। লেজিসলেটার কিন্তু বিরোধী দলে যারা থাকেন তারা ট্রেজারি বেঞ্চ। তাদের কাজই হচ্ছে সমালোচনা করা। এই সমালোচনার মাধ্যমেই কিন্তু এক ধরনের জবাবদিহিতা গড়ে ওঠে এবং সতর্কতা হয়। এজন্য আমরা চাই নির্বাচনটা অংশহগ্রহণমূলক হোক। পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। অপজিশন থেকে যে দাবিগুলো করা হচ্ছে এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেটা কিন্তু আমাদের বিষয় নয়। এটা সাংবিধানিক বিষয়। পলিটিক্যাল লিডাররা যদি একমত হন তারা দেখবেন। আমার কাছে মনে হয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বর্তমানে যে আইন আছে, সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনের সময় তার সঙ্গে আমাদের ইন্টারঅ্যাকশন বেড়ে যাবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সব দেশেই তো নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই হচ্ছে। ভারতেও হচ্ছে, আমেরিকাতে হচ্ছে। আমরা যদি এই বিভাজনটা স্পষ্ট করতে পারি, এই মেসেজটা দিতে পারি, যখন কেবিনেট যেটাকে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি থেকে বা প্রধানমন্ত্রী থেকে ডেপুটি.., এটাই কিন্তু মূল সরকার। বাকি যারা আছে সেটা কিন্তু আমলাতন্ত্র। কাজেই যে সরকার আছে, তারা কিন্তু শপথ নিয়েছেন- সংবিধানিক অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবো, সমআচরণ করবো, পক্ষপাতিত্ব করবো না। নির্বাচনের সময় অন্তত একটা সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের স্বার্থে উনারা নির্বাচনকালীন সরকারের মতোই আচরণ করবেন। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে বা কোনো দলের মন্ত্রী হিসেবে নয়।

এর আগে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান সিইসি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App