×

জাতীয়

বাহার কথা না শুনলে ‘করার কিছু নেই’ সিইসির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২২, ০৬:৩৭ পিএম

বাহার কথা না শুনলে ‘করার কিছু নেই’ সিইসির

এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার

* বিএনপি না এলে দ্বাদশ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না- অংশগ্রহণকারীদের মতামত * সেনা মোতায়েনের বিরোধীতায় নুরুর হুদা * এনআইডি ইসির হাতে থাকা উচিৎ- এটিএম শামসুল হুদা

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়ার অনুরোধ জানালেও ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা তাতে কান না দেওয়ায় দৃশ্যত অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। আইনবিধির কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, সংসদ সদস্যের জন্য ইসির অনুরোধই ‘যথেষ্ট’। এরপরও না মানলে এবং মামলার ফলাফল না পেলে করার কিছু থাকে না সাংবিধানিক সংস্থাটির।

রবিবার (১২ জুন) নির্বাচন ভবনে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকরা কুমিল্লায় বাহারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এদিকে সংলাপে সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারগণ বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল দলের সমর্থন প্রয়োজন। আর বিএনপি না এলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া নির্বাচন প্রার্থীভিত্তিক না করে দলভিত্তিক আয়োজনের ব্যবস্থা করা উচিত। এদিকে সাবেক সিইসি এ টিএম শামসুল হুদা এনআইডি ইসির হাত থেকে স্বরাষ।ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগে নেবার ঘোর বিরোধীতা কেরছেন। আরেক সাবে সিইসি কে এম নূরুল হুদা নির্বাচনে সেনা বাহিনী নিয়োগের বিরোধীতা করেছেন।

এদিকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনসহ বেশ কিছু জায়গায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হবে ১৫ জুন। এটিই বর্তমান ইসির প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে আচরণবিধি লঙ্ঘনে পৌরসভা, ইউপিতে বেশ কিছু অভিযোগের মধ্যে কঠোর অবস্থান নেয় কমিশন। তবে কুমিল্লা সিটিতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিষয়ে ‘অনুরোধ’ জানিয়ে চিঠি দেওয়ার বাইরে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। কিন্তু কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বাহার আইন ভেঙে দলীয় প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠলে তাকে সতর্ক করে নির্বাচন কমিশন। তাতে কাজ না হওয়ায় গত বুধবার তাকে এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেয় ইসি। এর আগে এমপি বাহারের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কু। কিন্তু প্রথম দফা সতর্কবার্তা পেয়েই হাই কোর্টে গিয়েছিলেন বাহার। তাকে নির্বাচনের প্রচারে সুযোগ না দেওয়া কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, তা জানতে চেয়ে আদালত থেকে রুলও পান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি আউয়াল বলেন, ইসির কিছু আইনগত ক্ষমতা আছে। কিছু ক্ষমতা আংশিক, কিছু ক্ষমতা পরিপূর্ণ। কোনো কোনো নির্বাচনে কারও কারও প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। কিন্তু কুমিল্লার বিষয়ে আচরণবিধিতে বলা রয়েছে-সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা কারও এলাকায় অবস্থান করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

আমরা শুনেছি- উনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলার ফলাফলটা না পেলে আমরা যখন কাউকে রিকোয়েস্ট করি, আমাদের এমন কোনো ক্ষমতা নেই জোর করে একজন মাননীয় সংসদ সদস্যকে (বের করে দিতে)। কমিশনের অনুরোধই একজন সংসদ সদস্যের এলাকা ত্যাগ করার জন্যে যথেষ্ট বলে মত দেন সিইসি। উনাকে বলাটাই এনাফ। উনাকে আমরা যদি বলে থাকি- দয়াকরে আপনি যদি... কুমিল্লা ত্যাগ করেন... আচরণবিধিতে এটা আছে আপনি যদি সরে থাকেন, তাহলে নির্বাচনটা ভালো হয়। সেটা আমরা প্রকাশ্যে দিয়েছি। এটাই যতেষ্ঠ একজন সংসদ সদস্যের জন্য সেটাকে অনার করা। যদি সেটি উনি অনার না করেন, সেক্ষেত্রে আমাদের তেমন করার কিছু নেইএ সংলাপে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা নিতে পারবে। তিনি বলেন, ভাল নির্বাচন করতে গেলে যা করতে হয়, তাই আমরা করেছি। যেহেতু অন্য রকম সরকার (সেনা সমর্থিত তত্বাববধায়ক সরকার) ছিল, সে সময় নতুন নতুন সবই পেয়েছি। তাই কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় নাই। আমি বহুবার দেশের বাইরে গিয়েছি। কোনো কিছু করতে হলে অন্যান্য দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। ভারতেও লাগে। কিন্তু আপনারা (বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন) সর্ম্পূর্ণ স্বাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এনআইডির কোনো বিকল্প নাই।

ড. হুদা বলেন, একটা প্রকল্পে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন ডলার বেঁচে গেল, বৃটিশ গভমেন্ট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডোনার ছিল। তাদের বলা হলো। এরপর অফিস করা হলো। এখনও এনআইডি অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে চায়। আমি একটি আইন করেছি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন। এই আইন থাকা অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেন আর যেই বলেন, নিতে পারবে না। এখানে স্পষ্ট বলা আছে, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সকল কিছু নির্বাচন কমিশন করবে।

আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনে সেনা বাহিনী নিয়োগ করে কোন কাজ হয়না, তিনি নির্বাচনী সেনা নিয়োগ না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বাংলাদেশের নির্বাচনে যেভাবে মোতায়েন করা হয়, পৃথিবীর তা বিরল। বন্দুক দিয়ে যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়। এগুলোর আসলে প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনীর একেবারেই প্রয়োজন নেই। নির্বাচন পরিচালনায় তারা কাজে আসবে বলে মনে হয় না। সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব নিয়োজিত একটি বাহিনীকে নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সাবেক এ সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ অর্থ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পেছনে ব্যয় হয়। এখন আর্মি, এয়ার ফোর্স, র‌্যাব, বিজিবি নামে। একটা কেন্দ্রে যে পরিমাণ সশস্ত্র ফোর্স থাকে, তা একটা থানার সমান। তিনি বলেন, অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ৯৫ শতাংশ লোকবল চেষ্টা করে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য। কিছু কিছু লোক তো থাকেই।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ। ইসি আয়োজিত সংলাপে তিনি বলেন, রাজনৈতিকরা মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন। নতুন রাজনৈতিক পাওয়া দুষ্কর। যে অবস্থা বিরাজ করছে, জাতীয় নির্বাচন আসলেই ২০ কোটি খরচ করবো। ভোটের পার হলেও ২০০ কোটি আয় করবো। সোজা হিসাব। প্রার্থী ভিত্তিক না হয়ে দলভিত্তিক নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে যে দল যতটি আসনে প্রার্থী দেবে এবং যত সংখ্যক ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দলের আসন সংখ্যা নির্ধারণ হবে।

বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে আরও অংশ নেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ, আবু হাফিজ ও মাহবুব তালুকদার, সাবেক ইসি সচিব ড. সাদিক ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমানসহ, বর্তমান নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সংলাপে বক্তারা নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রতি জোর দেন। এছাড়া প্রায় সকলেই ইভিএমে নির্বাচন করার পক্ষে মতামত দেন। সাবেক এসব কমিশণার বলেন, এবারে একটি সব দলের সমন্বয়ে জাতীয় নির্বাচন সকলে আশা করে, তাই বিএনপি বা বড় বড় দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App