×

সম্পাদকীয়

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট : লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২২, ১২:৫৪ এএম

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট : লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন’- এ সেøাগান নিয়ে সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে। ইতিহাসের বৃহত্তম এই বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কীভাবে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে তার গাইড লাইন নেই। বাজারে গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম, তার সঙ্গে এ তথ্যের মিল পাওয়া দুষ্কর। বাজেটে অর্থমন্ত্রী ছয়টি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তার কোনো কৌশলের কথা উল্লেখ করেননি। প্রস্তাবিত বাজেটে নারী ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। গত অর্থবছরের এক বছরের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে পুরো অর্থবছর কেমন হতে যাচ্ছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গতিপ্রকৃতি ঠিক করা হয়নি। সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জরুরি মনে করছি। বৃহৎ বাজেট আমাদের অর্থনীতির কলেবর বৃদ্ধি, জাতীয় ব্যয় বৃদ্ধিরই প্রতিফলন। বাজেটে নির্ধারিত ব্যয়ের অঙ্ক যত বড় হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন ততই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংগৃহীত কর থেকে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা; আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ও বর্তমান সরকারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তাদের ঘোষিত উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়নের একটা বিশেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ অর্থবছরে সরকারের বেশকিছু মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। গত কয়েক বছরে আমাদের দুটি খাতে অর্জন ছিল। একটি অর্থনৈতিক, অন্যটি শিক্ষা। কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাবে এ দুটি খাতই বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। বাজেটে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে। আসন্ন অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে টাকার অঙ্কে মোট বরাদ্দ বাড়ছে। বাজেটে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতের জন্য। চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। সড়ক খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ৩১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট উন্নয়ন বরাদ্দের ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবহন খাতে বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। এটা সময়োপযোগী বরাদ্দ। বিশালাকার এই বাজেটকে বলা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী বাজেট। তবে বাজেট উচ্চাভিলাষী কিনা সেটা নির্ভর করে বাস্তবায়ন সক্ষমতার ওপর। বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না যদি এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা থাকে। আমরা আশা করব সরকার তার প্রতিশ্রæতি পূরণের বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App