অন্য ভর্তিচ্ছুদের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষা যেখানে ছোট্ট একটি খাল পার হওয়ার সমান সেখানে এই পরীক্ষায় অংশ নেয়া সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সমান বলে উল্লেখ করেছেন ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়া ৫৫ বছর বয়সী বেলায়াত হোসেন।

শনিবার (১১ জুন) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

বেলায়াত হোসেনের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবনে। সাড়ে ১২টায় পরীক্ষা শেষ হলে সাংবাদিকদের সামনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় আমার অংশগ্রহণ যেন একটি সমুদ্র পার হওয়ার সমান। আর আজকে আমার সাথে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারা যেন নৌকা দিয়ে ছোট একটা খাল পার হয়েছে।

পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা মোটামুটি ভালো দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার যে এত সুন্দর এটা প্রথমবার এসে দেখলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে কোন বিভাগে পড়তে চান এমন প্রশ্নে বেলায়াত বলেন, আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে চাই। আর চান্স না হলেও আমি আমার ইচ্ছাশক্তি দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি এটা বাকিদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমার ঢাবিতে চান্স না হলে রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, গুচ্ছতে ফর্ম তুলেছি, সেখানেও চেষ্টা করব। কোনো একটা জায়গায় আল্লাহ আমার জন্য একটা সিট রেখেছেন। আমি চেষ্টা করে যাবো বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

বাকি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি অসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছি। বাকি শিক্ষার্থীরা যেন মা-বাবা ও শিক্ষকদের সম্মান করে এবং সঠিক সময়ে পড়াশোনা করে।

গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম এ সময় বলেন, বেলায়াত এই বয়সে পরীক্ষা দেয়ার সাহস করেছেন এটা আমি এর আগে কখনও দেখিনি। পড়ালেখায় বয়স কোনো বাঁধা না। তিনি যে এই সাহস করেছেন এটি দেখেই পরবর্তী প্রজন্ম অনুপ্রেরণা পাবে।

অনুভূতি জানিয়ে বাবার সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া বেলায়াতের ছোট ছেলে শেখ স্বাধীন জীবন বলেন, আমার বাবা এই বয়সে এসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে এটা দেখে গর্ববোধ হচ্ছে। এই বয়সে আর কয়জনই বা পড়াশোনায় অটল থাকে। সবাই ভাবে শেষ বয়সে কিছু হবে না। আমার বড় ভাইবোনদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাও ছিলো না। তাদের ওপর অভিমান করে বাবা এই পদক্ষেপ নেন।

‘ঘ’ ইউনিটে এ বছর এক হাজার ৩৩৬টি আসনের বিপরীতে আবেদনকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ৪৫ জন। মোট ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষা বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে সাড়ে ১২টায় শেষ হয়।