×

মুক্তচিন্তা

বাতাসে লাশের গন্ধ স্বজনের চোখে জল

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২২, ০১:২৬ এএম

সীতাকুণ্ডের শীতলপুর। ঢাকার নিমতলী। হঠাৎ করেই আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে ওঠে। কলিজার ভেতর মোচড় দেয়। হায় স্বজন আমার। হঠাৎ কান্না। গগনবিদারী চিৎকার! রক্তের স্রোতধারা। স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারী। অবচেতনে চোখ ভিজে ওঠে। এরা আমাদের স্বজন। কারো ভাই, কারো বাবা, কারো সন্তান, কারো কলিজার টুকরা। বাতাসে পোড়া গন্ধ। কিছুদিন শোরগোল, তারপর আবার ভুলে যাই। কে দায়ী? কারা দায়ী? অপরাধের বিচার কি হয়েছে? নাকি হবে? এসব ভাবনায় ডুবে থাকি। সীতাকুণ্ডের শীতলপুরের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড আমাদের বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। এখানে আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কি হুমকির সম্মুখীন? দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। হয়তো কারো গাফিলতি। অথবা নাশকতা। অথবা কারো দায়িত্বে অবহেলা। নিমেষেই ঝরে যায় তাজা প্রাণ। কী নির্মম। কী ভয়াবহতা। এই কনটেইনার ডিপোতে কম-বেশি ৫ হাজার কনটেইনার ছিল। কোনোটাতে রপ্তানিযোগ্য পোশাক। কোনোটাতে আমদানিকৃত কেমিক্যাল। অথবা নানান রাসায়নিক কেমিক্যাল। আগুন নেভাতে গিয়ে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের বেশ কজন কর্মী জীবন দিলেন। আহত হলেন অনেকে। মৃতের সংখ্যা আপাতত ৪৪ হলেও আহত হয়েছেন কয়েকশ। হাসপাতালে যারা আছেন তাদের কেউ ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকবেন সারাজীবন। কারো হাত উড়ে গেছে, কারো পা উড়ে গেছে। কারো শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণের কারণেই হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। রাসায়নিক কেমিক্যালের কারণেই কি বিস্ফোরণ ঘটেছে? নাকি কেউ নাশকতা করে কনটেইনারে বিস্ফোরক জাতীয় কিছু রেখেছিল? এটা যারা তদন্ত করবেন অবশ্যই খতিয়ে দেখবেন বলে আশা করি। কেন জীবন দিতে হলো? কারণ সেখানে একটি বা একাধিক কনটেইনার ব্লাস্ট হয়েছে। বিস্ফোরণে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় ভূকম্পন অনুভূত হয়। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল মগবাজারে। সেখানেও আশপাশের বিল্ডিংয়ের কাচ ভেঙে যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের ভগ্নদশা। সচক্ষে না দেখলে এসব অনুমান করা যায় না। তবে সীতাকুণ্ডের ভয়াবহতা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিন দিনেও আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। একের পর এক কনটেইনার সরিয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দেখে মনে হয়েছে কোনো যুদ্ধের ভগ্নবস্থা। বিধ্বস্ত বিএম কনটেইনার ডিপো। বাঙালি যে সাহসী, সেটা আবার প্রমাণ করল বীর চট্টলার মানুষ। ছাত্র, যুবক, বৃদ্ধ এমনকি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও ছুটে গেছেন হাসপাতালে। কার কী রক্তের গ্রুপ সেটা প্ল্যাকার্ড লিখে ঝুলিয়েছেন গলায়। আমি রক্ত দেব। আমার রক্ত নিন। এই হলো বাঙালি। বাঙালির আবেগ ছিল বলেই তো মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি সশস্ত্র সংগ্রামে আমরা পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রকে পরাজিত করেছি। আবেগে কেঁদে ফেলেছি, যখন দেখলাম চট্টগ্রামের মেডিকেল কলেজে শত শত ছাত্র ছুটছে রক্ত দিতে। ছুটে গেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। রাজনৈতিক সংগঠন। এটা প্রশংসনীয়। কেউ ওষুধ ফ্রি দিয়েছে। কেউ খাবার দিয়েছে। কেউ যানবাহন দিয়েছে। এভাবে যদি আমরা একতাবদ্ধ থাকতে পারি তাহলে তো পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প সফল হবেই। সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড আমাদের চোখে আরেকবার আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছে কোথায় নিরাপত্তার অভাব। কোথায় আমাদের গলদ। একদিকে জাতি যখন শোকে মুহ্যমান ঠিক তখনই একশ্রেণির দেশদ্রোহী গুজব ছড়িয়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পিছিয়েছে বলে এরা প্রধানমন্ত্রীর নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে। আমরা সহজেই অনুমান করি এবং বুঝতে পারি যে এখনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশের ভালো কোনো কাজে নেই। তারা আজো বাংলাদেশবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট করতে তারা বদ্ধপরিকর। ’৭১-এ যারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন তাদের প্রজন্মও ঠিক তাদের দেখানো পথেই যেন হাঁটছে। এটা জাতির জন্য বড় একটি অশনি সংকেত। তরুণ প্রজন্মের একটি অংশও স্বাধীনতাবিরোধী। মানে বাংলাদেশবিরোধী। বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোকে আশান্বিত করছে তখনো আমাদের একটি গোষ্ঠী দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। একটি আশার কথা বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিক পক্ষ নিহত-আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তারা পালিয়ে যাননি। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেটা হয় আরকি। এটাই করা উচিত। মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। অপরাধী কে সেটা প্রমাণ হওয়ার আগেই পালিয়ে গিয়ে নিজেকে অপরাধী বানানো উচিত নয়। পরিশেষে বলি, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় জরুরিভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। এ রকম কেমিক্যাল বহনকারী যেসব কনটেইনার ডিপো রয়েছে সেখানে তদারকি করে রাসায়নিক দ্রব্য আলাদা করে রাখা অতীব জরুরি। তাহলে কোথায় কীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে সেটা সংশ্লিষ্ট বাহিনী বা কর্মকর্তারা বুঝতে পারবেন। একটু সচেতন হলেই জানমাল হতাহতের সংখ্যা কম হবে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ বাহিনী গড়ে তোলা সময়ের দাবি। বাংলাদেশ ভালো থাকুক। আসুন আমাদের দেশটাকে সবাই ভালোবাসি। বুকে ধারণ করি লাল-সবুজ এই পতাকা।

ইমরান পরশ ছড়াকার ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App