×

মুক্তচিন্তা

সীতাকুণ্ডে মানবতার প্রতিচ্ছবি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২২, ১২:৫৩ এএম

‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু…’ বিখ্যাত এই গানে সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার যে চাওয়া ছিল সেটারই হয়তো প্রতিফলন ঘটেছে চট্টগ্রামের অগ্নিকাণ্ডে। গত ৪ জুন বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা গেছে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। এর মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। এছাড়া এই অগ্নিকাণ্ডে দুই শতাধিকেরও বেশি মানুষ আগুনে পুড়ে আহতাবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেরই সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিহত লাশের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে শনাক্ত করে তাদের পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে দেয়া হলেও কিছু মানুষকে এখনো চেনা যায়নি। তাই ডিএনএ টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি আহত রোগীদের জরুরি প্রয়োজন ছিল রক্ত ও ওষুধের। আর সেগুলোর জন্য চট্টগ্রামের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে যেভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে এক অনন্য মানবিক গল্পের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা গেছে, এই অগ্নিকাণ্ডের পরপরই চট্টগ্রামের বহু তরুণ-তরুণী আহত রোগীকে কাঁধে নিয়ে ছুটেছে হাসপাতালের দিকে। কেউ কেউ রক্তের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে রক্ত দিতে, কেউবা রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে আহত মানুষদের সুস্থ করে তুলতে স্থানীয়দের বড় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। এর মধ্য থেকে একজন প্রতিবন্ধী মানুষকেও আসতে দেখা গেছে। যিনি অগ্নিদগ্ধ হওয়া মানুষদের রক্ত দিতে ছুটে এসেছেন। মানুষটির এই মহৎ কাজও আমাদের জন্য বিরাট অনুকরণীয় হয়ে থাকল। যা আমাদের মানবতার গল্পে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এছাড়া দেখা গেছে ওই দিন রাতের পর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে আহত রোগীদের বিনামূল্যে এবং অনেক হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে সেবা দিয়ে চলেছে। স্থানীয় অনেক বেসরকারি সংস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গেছে। সব থেকে ভালো লাগার বিষয় হলো আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন সরকার ছাড়াও বেশকিছু রাজনৈতিক সংগঠন নিজেরা টাকা আদায় করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই অনেক বড় পাওয়া। বিশেষ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অগ্নিকাণ্ড বা হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অভিজ্ঞতা আমার জানা নেই। যেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এতজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এটিকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এর পেছনে কিছু দায়বদ্ধতা থেকে যায়। যেগুলোর জন্য আমরা নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী। ঘটনাস্থল বিএম কন্টেইনার ডিপোতে যেসব কেমিক্যাল ছিল তা রাখার অনুমতি ছিল না প্রতিষ্ঠানটির। তারপরও কর্তৃপক্ষের অগোচরে তারা তা ব্যবহার করে আসছিল। তাছাড়া আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের যদি কর্তৃপক্ষ সঠিক তথ্য দিত তাহলে তারা আরো বেশি সচেতনতার সঙ্গে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হতো। এতে হয়তো আগুন নিভাতে যত সময় লেগেছে তার থেকে কম সময় লাগত। ফলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ওখানে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা এত বেশি হতো না। সুতরাং এটিকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে না চালিয়ে দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক। যদিও দেখা যায়, নৌপথ কিংবা সড়কপথে দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে আজ-অব্দি আমাদের দেশে বেশিরভাগ এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। যা আমাদের পরবর্তী সময়ের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে অন্যায়, অনিয়ম আরো বাড়ছে। এজন্য এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দিনের পর দিন এমন ঘটনা বেড়েই চলবে। পাশাপাশি সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সবাইকে নিয়মনীতি মানার পাশাপাশি অবশ্যই আরো বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ আমাদের মনে রাখা উচিত অর্থ, বিত্ত, সহায়, সম্পদ থেকে প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

রিয়াদ হোসেন : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App