×

জাতীয়

সংকট মোকাবেলায় বিলিয়ন ডলার সংগ্রহে নেমেছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২২, ০৮:০০ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটসহ ভবিষ্যৎ জরুরি পরিস্থিতি মেকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অতিরিক্ত ১ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ জনিত অর্থনৈতিক সংকট মেকাবিলা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ শত মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট হিসাবে নেবার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৮ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের আগের দিন সংসদে সরকার দলীয় এমপি মোজাফ্ফর হোসেনের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ দুধরনের সঙ্কট মোকাবেলায় দেড় হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহের এই পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। মহামারী আর চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের এই সঙ্কটকালে নতুন অর্থবছরের বাজেট পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার হচ্ছে বলে ধারণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যেখানে আড়াই লাখ কোটি টাকা ঘাটতি থাকতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাজেট সাপোর্ট শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়া এবং সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় করা হবে। এর পাশাপাশি কোভিড মহামারীজনিত অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ‘বাজেট সাপোর্ট’ হিসেবে সংগ্রহের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সরকার বাজেট সাপোর্ট হিসেবে যে দেড় হাজার মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছে, টাকার অঙ্কে তা ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এমপি আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা মহামারিতে নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিকে গুরুতর চাপে ফেলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আমি প্রথমেই এই যুদ্ধকে যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করার জন্য সকলকে ব্যবস্থা নেবার আহবান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ যুদ্ধ যত দ্রুত বন্ধ করা সম্ভব হবে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকটের হুমকিকে কাটিয়ে উঠা সম্ভবপর হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত সারা দেশের ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ জন গৃহহীন পুনর্বাসিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানুষের ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই’ এ কথাটি চিরতরে বিলুপ্ত করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর বরে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি খাদ্য উৎপাদনের তথ্য জানিয়ে বলেন, ২০০৯ সালে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে উৎপাদন বেড়ে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে ৭ম, চা উৎপাদনে ৪র্থ, ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে প্রথম। তিনি জানান, বর্তমানে দেশের ৪৩টি জেলা রেল যোগাযোগের আওতায় রয়েছে। রেলওয়ের যেসব প্রকল্প চলমান, তা বাস্তবায়িত হলে আরও ১৯টি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। আর ৩০ বছরব্যাপী মাস্টার প্লান সম্পন্ন হয়ে বাকি চারটি জেলাও রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

আলী আজমের লিখিত একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের আকাশছোঁয়া দামের কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলোতে সৃষ্ট খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে গত ১২ এপ্রিল গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব আমাকে আমন্ত্রণ জানান- যা আমি গ্রহণ করি। আমি ছাড়াও আরো ৫ জন বিশ্বনেতা এই ক্রাইসিস গ্রুপের ‘চ্যাম্পিয়ন' হিসেবে কাজ করবেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জার্মানীর চ্যান্সেলর, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি, সেনেগালের রাষ্ট্রপতি ও বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী। ক্রাইসিস গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমরা সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট প্রতিরোধ এবং প্রশমিত করতে বিশ্বব্যাপী ঐক্যমত গঠনে সমর্থন ও সহায়তা করব। গত ২০ মে আমি জাতিসংঘ মহাসচিব এবং অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এই সংক্রান্ত একটি উচ্চ-পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিই। ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উপস্থিত বিশ্বনেতাদের সামনে খোলামেলা আলোচনা করেন। বিষয়গুলো হলো: অর্থ সংকট, খাদ্য নিরাপত্তা এবং বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকটের হুমকি কাটিয়ে উঠা সম্ভবপর হবে। এ বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বিশ্বনেতাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ করি। তাছাড়া আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে জ্বালানি সংকট এবং আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য যাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, সে ব্যাপারেও আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি।

তিনি জানান, কভিড সংক্রমণের কারণে যাতে দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত না হয়, সেজন্য বর্তমান সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৫শ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করে।

ময়মনসিংহ-১১ আসনের এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেবার আগের ৫ বৎসরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭’শ ৩৭ কোটি টাকা। পুরানো উড়োজাহাজ দিয়ে বিমানের ফ্লাইট পরিচালিত হওয়ায় পরিচালনা ব্যয় অত্যধিক হওয়ার কারণে প্রায় প্রতি বৎসর বিশাল অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App