×

জাতীয়

ডলারের বিপরীতে কমছেই টাকার মান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২২, ০৮:২৩ পিএম

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছেই। সবশেষ টাকার মান আরও ৫ পয়সা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসাবে আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার প্রতি ডলার বেড়ে দাঁড়াল ৯২ টাকা।

মঙ্গলবার (৭ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আগের দিন সোমবার দুপুরে টাকার মান ১ টাকা ৬০ পয়সা কমিয়ে ডলারের দর ৯১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আরো ৪৫ পয়সা কমিয়ে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার সেখান থেকে আরো ৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর জন্য দেয়া একক রেট তুলে নেয়ার পর থেকে চার কর্মদিবসেই টাকার অবমূল্যায়ন হলো চার দফা। গত মে মাসেও ডলারের বিপরীতে চার দফা কমেছিল টাকার মান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রবাসীদের খুশি করার জন্য প্রকৃত দরের উপর মূল্যায়ন করে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি ডলার বিনিময় মূল্য ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা ধরে ১৩০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে এ অর্থবছরে ৬০৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলারের দর নিয়ে এই অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্য ও জ্বালানির বাড়তি দাম মেটাতে লাগছে অতিরিক্ত ডলার। রপ্তানির প্রবৃদ্ধি আকর্ষণীয় হলেও বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির তুলনায় সেটি তেমন কিছু নয়। আবার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সেও ভাটা পড়েছে। এ কারণে যত বিদেশি মুদ্রা আসছে, যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের অগাস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের অগাস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ০৩ অগাস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ অগাস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। এ বছরের ০৯ জানুয়ারিতে এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরও ২৫ পয়সা। ১৬ মে বাড়ে ৮০ পয়সা। ২৩ মে বাড়ে ৪০ পয়সা। ফলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায়। এর পর গত ২৯ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপরও বাজার স্থিতিশীল হয়নি। পরে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তাতেও বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় ২ টাকা ৫ পয়সা বাড়িয়ে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ মূল্য। আর খোলাবাজারে প্রতি ডলারের মূল্য রাখা হচ্ছে ৯৮ থেকে ৯৯ টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে মে মাসে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে মনে হচ্ছে। তখন টাকা আর অবমূল্যায়নের প্রয়োজন পড়বে না।

এদিকে, চাহিদা সামাল দিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াল ৬৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে থাকায় রিজার্ভে টান পড়েছে। যে রিজার্ভ গত বছর ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ৫০ বিলিয়নের দিকে ছুটছিল, সেটি এখন ৪২ বিলিয়নের নিচে নেমে ক্রমহ্রাসমান, যা উদ্বেগ তৈরি করেছে অর্থনীতিতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App