×

জাতীয়

ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার সিড়ি, সংসদে আলোচনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২২, ১০:২০ পিএম

ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল স্বাধীনতা সাঁকো, ছয় দফার সিড়ি বেয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দেন এবং বাংলাদেশকে মুক্ত করে আমাদেরকে স্বাধীন দেশ উপহার দেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা ও সংসদ সদস্যগণ।

মঙ্গলবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে জাতীয়ং সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ সব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ছয় দফার ওপর আলোচনায় বলেন, বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দিয়েছিলেন, আর আমরা ৭ জুন ছয় দফা দিবস পালন করে থাকি। তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবি পেশ করেন। তোফায়েল আহেমেদ বলেন, ৬ দফা আন্দোলনের দাবিতে নারায়রগঞ্জে বঙ্গবন্ধু যখন বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দিয়ে ঢাকায় বাসায় ফিরে আসছিলেন তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ১৩ মে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ৭ জুন আমরা ছয় দফা দিবস পালন করবো। সে হিসেবে ৭ জুন দেশ ব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন হরতাল পালন করা হয়। সেখানে কয়েকজন হতাহত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে এগুচ্ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি, দেশের স্বাধীনতায়। এরই এরই প্রেক্ষিতে লাহোরে একটি বৈঠক বসে চৌধুরী মোহম্মদ আলীর নেতৃত্বে। কিন্তু মোহম্মদ আলী বঙ্গবন্ধুর এ প্রস্তাব নাকচ করেন। এর পরে তিনি ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীর পিতার বাস ভবনে ছয় দফাকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হিসেবে গণ্য করেন। এর পরে চট্টগ্রামে লাল দিঘির ময়দানে বিরাট মিটিং হয়। তাকে ৮ বার ছয় দফা আন্দোলন নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসির কাষ্টে ঝোলানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ছাত্র সমাজ ১১ দফা আন্দোলন দেয়, ১৭ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু হয়, অনেককে সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়। ২১ জানুয়ারি সর্বাত্বক হরতাল পালন করা হয় এবং ২২ তারিখ কালো ব্যাচ পরিধান করা হয়। ২৪ তারিখে অনেকেই আন্দোলনের সময় নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার রিহার্সল।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা কারামুক্ত করি। এবং আমরা তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধী দিই, আজ ৫৬ বছর আগে সে দিন বঙ্গবন্ধু সেদিন এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। তার সেই ভাষণে দেশবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামে নেমে পড়েন। দেশ স্বাধীন হয়। আওয়ামী লীগের আরেক বর্ষিয়ান নেতা সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথশ সোপান ছিল এই ৬ দফা। এই ছয় দফা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। আন্দোলন সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে দেশ ব্যাপী। এ সংগ্রামে অংশ নিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বেশ কয়েকবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। লাহোরে বৈঠকে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধু এ ছয়দফা গ্রহণ করে না। এর পরে আওয়ামী লীগ এ ছয় দফাকে তাদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এক একটি জনসভায় ভাষণ দিতে যেতেন। আইউব খান, মোনায়েম খান এই ছয় দফা আন্দোলনকারীদের বিচ্ছিন্নতাবাদি বলে আখ্যায়িত করে অস্ত্রের হুমকি দিয়েছিলো। কিন্তু তিনি তাতে থামেন নি। শ্রমিকরাও এই ছয় দফা আন্দোলনে এগিয়ে আসে। ৮ মে নারায়নগঞ্জে মিটিং করার পরে মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে ৭ জুন হরতাল ডাকা হয়। সেদিন পাকিস্তানী সরকারের অন্যায় অবিচার জুলুম ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায়।কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এটা বিচ্ছিন্নতাবাদী নয় এটা বাঙালির স্বায়ত্বশাসনের দাবি। বঙ্গবন্ধু সারা দেশে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি শ্রমিক সংগঠনগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার পরে তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেয়া হয়, যা ছিল বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য আশির্বাদ স্বরুপ। আগরতলা মামলার পরে বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরে তাকে আমরা বঙ্গবন্ধু উপাধীতে ভূষিত করি।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ৬ দফা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করতে গিয়ে সেখানেই যান সেখানেই গ্রেপ্তার করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ ৩২ হাজার আওয়ামী লীগ ও ছাত্র নেতাদেও গ্রেপ্তার করা হয়। ৬ দফার দাবিতে প্রথম ৭ জুন হরতাল পালন করা হলো, মানুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে সেই হরতালে অংশ নিলো। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় কেই জানতো না, ৬ মাস বঙ্গবন্ধুর কোনো খোঁজ ছিলো না। ১৯৬৯ সালে আগোরতলা ষড়যন্ত্র মালার বিরুদ্ধে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আইয়ুব খান উপায় না দেখে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিলো।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬ দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম ভিত্তি। ৬ দফার মধ্য নিহিত ছিলো বাঙালির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার কথা। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। ঐতিহাসিক ৬ দফা স্বাধীনতার অন্যতম মাইলফলক ঘটনা। আজ তরুণ প্রজন্মকে দেশ প্রেমে উদ্ভুদ্ধ করতে এই ইতিহাস জানাতে হবে।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ৬ দফা আন্দোলনে ছাত্র সমাজ ছাপিয়ে পড়ে। অনাহারে অর্ধাহারে ছাত্ররা রাতে জগন্নাথ হলের হোস্টেলে থেকে সকালে আন্দোলন সফল করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানী বাহিনী বাঁধা দিলেও তা মানে নি। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ৭ জুন দয় দফার স্বপক্ষে দেশব্যাপী আন্দোলন-হরতাল ব্যাপকভাবে সফল হয়। সে সময় আমরা সর্বস্তরের ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাজপথে নেমে পড়ে। ছয় দফা ছিল এদেশের স্বাধীনতার মূল মন্ত্র।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App