×

জাতীয়

গণপরিবহনে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২২, ০৮:২৫ এএম

পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিক ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। শুধু সড়ক পরিবহন সেক্টরেই কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে কমপক্ষে ১৫টি জেলার মানুষের সরাসরি আরামদায়ক যাতায়াতের জন্য সড়কে নামছে অত্যাধুনিক বাস। দেশের পরিবহন আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানি ভলভো, স্ক্যানিয়া, হুন্দাই, আইচার, অশোক লেল্যান্ড ও টাটার চেসিস কিনে বাসের বডি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিলাসবহুল বাসগুলো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, খুলনা ও যশোর রুটেই বেশি চলাচল করে। এবার পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বিলাসবহুল বাসগুলো চলাচলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই খাতে এবার কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। এর মধ্যে শুধু শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসায়ীরাই ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে করবে। এ ধরনের বিনিয়োগের জোরালো উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, যশোর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরাসহ অন্য জেলাগুলোর পরিবহন মালিকরা।

ভলভো, স্ক্যানিয়া, হুন্দাই, আইচার কোম্পানির অত্যাধুনিক বাসগুলোতে যাত্রীরা আরামেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াত করতে পারবেন। গ্রীন লাইন পরিবহন কোম্পানি ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি আরো কয়েকটি কোম্পানি ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এসি ও নন-এসি, চেয়ারকোচ ও স্লিপার বাসগুলো বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটায় যাতায়াত করবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের কারণে পরিবহন কোম্পানিগুলোর অত্যাধুনিক বাস বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যুক্ত হবে। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। নতুন বাস নামলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব কমবে। মানুষ সহজে এবং কম সময়ের মধ্যে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবে। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। ভাড়া কম লাগবে, পণ্যের দামও কমবে। পদ্মা সেতুর সুফল পুরো দেশবাসী পাবে।

স্বনামধন্য শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের এমডি শুভংকর ঘোষ রাকেশ বলেন, পদ্মা সেতু খুলে যাওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। পরিবহন সেক্টরেও বিনিয়োগ বাড়বে। দূরত্ব কমবে, সময় বাঁচবে। তবে পরিবহন সেক্টরে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও এর সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। বড় পরিবহন ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা একসঙ্গে বিনিয়োগ করার বিষয়টি এখনো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে আমি মনে করি। যারা ব্যাংকের সহযোগিতা যত তাড়াতাড়ি পাবে তারা আগে বিনিয়োগ করতে পারবে। তারপরও যেহেতু নৌপথ অব্যাহত থাকবে, রেল সুবিধা বাড়বে, তাই সবাই ভেবেচিন্তে সড়ক পথে বিলাসবহুল বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নেবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তি ও অপেক্ষার পালা শেষ হবে এটাই বড় স্বস্তির বিষয়।

খ্যাতনামা পরিবহন কোম্পানি গ্রীন লাইন পরিবহনের এমডি মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সার্ভিস দেয়ার জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। এই সেতু চালুর পর ফেরিঘাটে গত ৩০ বছরের সীমাহীন ভোগান্তি ও চরম দুর্ভোগ থেকে যাত্রী ও পরিবহন কোম্পানিগুলো মুক্তি পাবে। পথের দূরত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাসের ভাড়াও কমবে। গ্রীন লাইন পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির ৪০০ থেকে ৫০০ নতুন বাস ২১ জেলায় এবং ঢাকা-কলকাতা রুটে চালাবে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। গ্রীন লাইন পরিবহন ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, পদ্মা সেতু খুলে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে এবং পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমবে। পরিবহনসহ প্রায় সব খাত সুফল ভোগ করবে। প্রাথমিকভাবে সড়ক পরিবহন সেক্টরে দেড়শ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। সড়ক যোগাযোগে শৃঙ্খলা ফিরলে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে। বৃহত্তর খুলনা, যশোর ও বরিশালে শিল্পায়ন বাড়বে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ খরচও কমে যাবে। এতে কলকাতা থেকে পণ্য আমদানি ব্যয় কমবে। এর ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দামও কমবে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, এস আলম পরিবহন, টঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস, ইলিশ পরিবহন, প্রচেষ্টা পরিবহন, সার্বিক পরিবহন, সাকুরা পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন নিজ নিজ রুটের জন্য নতুন বাস নামাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠির পরিবহন ব্যবসায়ীরাও ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নতুন বাস নামানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় সরাসরি বাস চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে অনেক কোম্পানি। ফেরিঘাটের ভোগান্তি কমে যাওয়ায় খ্যাতনামা পরিবহন কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি আরো কিছু পরিবহন কোম্পানি ঢাকা-কলকাতা রুটেও নতুন বাস নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পদ্মা সেতু চালু হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরের বাসিন্দারা। সবচেয়ে কম সময়ে তারা ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করতে পারবে। এসব জেলার বাসিন্দারা সকালে ঢাকায় এসে জরুরি কাজ শেষে ফিরতে পারবেন। শরীয়তপুর থেকে ২৫০টি বাস ঢাকার গুলিস্তান, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর পর্যন্ত চলাচল করবে বলে জানা গেছে। মাদারীপুর জেলা থেকেও পরিবহন সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়বে।

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা পরিবহন খাতে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন। সেতু উদ্বোধনের দিনেই তারা নতুন বাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছেন। শরীয়তপুর ছাড়াও ঢাকা ও সাভারে বাসের বডির কাজ চলছে। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানি, পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরী পরিবহন রুট পারমিট নিয়ে নতুন বাস প্রস্তুত করছে। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক আবদুল খালেক পালোয়ান জানিয়েছেন, তারা নতুন বাসের জন্য ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছেন।

মাদারীপুরের পরিবহন ব্যবসায়ীরাও নতুন বাস নিয়ে রাস্তায় নামার অপেক্ষায় রয়েছেন। পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের সঙ্গেও এবার ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ শুরুর জন্য শেষ মুহূর্তের প্রহর গুনছেন যাত্রী ও পরিবহন ব্যবসায়ীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App