×

জাতীয়

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২২, ০৮:৩৩ এএম

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি এক অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিন বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। শহীদের রক্তে ছয় দফা আন্দোলন স্ফূলিঙ্গের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র; রাজপথে নেমে আসে বাংলার মুক্তিকামী জনগণ।

পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ছয় দফার পক্ষে সারাদেশে প্রচারাভিযান শুরু করেন। বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ছয় দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ এই ছয় দফা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করে। ছয় দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ছয় দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ছয় দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন ও বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। তখন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার রাজপথ।

জাতির পিতার ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ছয় দফার প্রতি বাঙালির অকুণ্ঠ সমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অঙ্কুরিত হয় স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ। ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। সর্বোপরি ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে একচেটিয়া রায় দেয়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন সরকার গঠনে নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে তখনই ১৯৭১ এর ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর দেয়া ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণেও ছয় দফার মর্মবাণী উচ্চারিত হয়। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ও মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশের অভ্যন্তরে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় ছয় দফার ভিত্তিতে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ছয় দফার ভূমিকা অপরিসীম। প্রতি বছরের মতো এবারো সমগ্র জাতিকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ করোনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ ও পালন করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজ ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। বেলা ১১টায় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।

এদিকে ছয়দফা দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য সারাদেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App