×

জাতীয়

বস্তার ওপরে লেখার সঙ্গে ভেতরে চালের মিল নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২২, ১০:৪০ এএম

বস্তার ওপরে লেখার সঙ্গে ভেতরে চালের মিল নেই

দিনাজপুরে চাল নিয়ে অভিনব প্রতারণা শুরু করেছেন মিল মালিকরা। ছবি: ভোরের কাগজ

দিনাজপুরে চাল নিয়ে প্রতারণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বস্তার ওপরে লেখা চালের জাতের সঙ্গে ভেতরে থাকা চালের জাতের কোনো মিল নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই চালের বাজার উর্ধ্বমুখী। তার ওপর চালকল মালিকদের করা অভিনব এই প্রতারণায় অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

দিনাজপুর অঞ্চলে জহুরা অটোরাইচ মিল, সোহা অটোরাইস মিল, উত্তরা অটোরাইস মিল, চারভাই অটোরাইস মিল, হক অটোরাইস মিল, মণ্ডল অটোরাইস মিল সহ ১৫-২০টি অটোরাইস মিলের চাল বাজারজাত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ চালকলে ব্রি-২৮ ধান ছেঁটে হচ্ছে মিনিকেট, জিরাশাইল। অথচ মিনিকেট ও জিরাশাইল নামে কোন ধান নেই। ব্রি-২৮ চালের স্বাভাবিক দর প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ২৮০০ টাকা। মিনিকেট, জিরাশাইল হয়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৩১০০ থেকে ৩২০০ টাকায়। ব্রি-২৯ ছেঁটে হচ্ছে ব্রি-২৮। শোভন স্বর্ণা বা স্বর্ণা-৫ ও ব্রি-৫১ ধান অটোমেটিক দিলে ছেঁটে পাইজাম হয়ে ২৪৫০-২৫০০ টাকার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকায়। পাইজাম চাল দেখতে খাটো ও চিকন। খাইতে বেশ সুস্বাদু। এক সময় আমন মৌসুমে এ ধান চাষ করা হতো। ফলন কম হওয়ায় এখন দিনাজপুর অঞ্চলে এ ধানের চাষ হয় না বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়।

চালের বস্তার ওপরে ও ভেতরে চালের ভিন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করে কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, মিল মালিকরা যদি বস্তার ওপরে এক জাত লিখে ভেতরে অন্য জাতের চাল ভরে দেয়, এতে তাদের করার কিছু নাই। তাদের অভিযোগ, একমাত্র জহুরা অটোরাইস মিলের চাল ছাড়া দিনাজপুরসহ সারাদেশে এভাবেই চাল বাজারজাত করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা মিলে কয়েকজন অটোরাইস মিলের মালিকের সঙ্গে কথা বলে।

দিনাজপুর সদরের পুলহাট এলাকার সোহা অটোরাইস মিলের মালিক ও দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম এ বিষয়ে জানান, তার মিলে ব্রি-২৯ ধান থেকে উৎপাদিন চাল সুলভ ২৮, ব্রি-২৮ থেকে উৎপাদিত চাল মিনিকেট-জিরাশাইল, শোভন স্বর্ণা বা স্বর্ণা-৫ ও ব্রি-৫১ ধান থেকে উৎপাদিন চাল পাইজাম নামে বাজারজাত করা হয়। ধানগুলো প্রায় একই রকম হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা থাকায় এভাবে বাজারজাত করা হয়। শুধু তার মিলেই নয় সারা দেশেই এভাবে চাল উৎপাদিত হয়ে বাজারজাত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

সেতাবগঞ্জ উপজেলার উত্তরা অটোরাইস মিলের মালিক আলহাজ্ব মো. আলতাফুর রহমানও একই কথা বলেন।

তবে পার্বতীপুরের মেসার্স হক অটোরাইস মিলের অন্যতম স্বাধিকারী এ জেড এম মেনহাজুল হক বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, হক ব্রাদার্স এ ধরনের ব্যবসা করে না। যে ধান ছাঁটা হয় বস্তার ওপরে সিল দিয়ে ওই ধানের চালই বাজারজাত করা হয়।

পার্বতীপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ও মণ্ডল অটোরাইস মিলের মালিক মশিউর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, বর্তমানে অনেক জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। ওই জাতের নামে চাল বাজারজাত করলে কেউ নিতে চায় না। সে জন্য হয়তো কেউ কেউ প্রায় একই রকম দেখতে চাল বাজার চাহিদামত নাম দিয়ে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি তার জানা নেই। এক প্রশ্নের জবানে তিনি বলেন, কৃষকেরা মিনিকেট নামে ভারতীয় জাতের একটি ধানের চাষ করে থাকে। বাজার থেকে তা কিনে মিলে ছাঁটাই করেই মিনিকেট চাল বাজারজাত করা হয়। কখনোই মোটা চাল মিলে ছাঁটাই করে চিকন (মিনিকেট) চাল করা হয় না।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরণের কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসনে বলেন- হাইব্রিড, ২৮, ২৯ এবং কাটারীভোগ চালের বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করে খাদ্য বিভাগ। বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক সোমবার সকালে ফোনে বলেন, বর্তমানে ধানের শতাধিক জাত রয়েছে। জাত অনুযায়ী ব্র্যান্ডিং করে চাল বাজারজাত করাও সমস্যা। তবে ভোক্তাকে এভাবে প্রতারিত করা অপরাধ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App