বাবা আমার পা উড়ে গিয়েছে, বাঁচাও! ফোনে মমিনুলের আর্তনাদ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২২, ০৩:১৪ পিএম
ছেলে মমিনুলের ছবি হাতে বাবা ফরিদুল হক। ছবি: সংগৃহীত
চারপাশে কান ফাটানো আওয়াজ। বিকট শব্দে ক্ষণে ক্ষণে বিস্ফোরণ হচ্ছিল। সেই সঙ্গে আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমে ঘিরে ধরেছিল চারপাশ। ডিপোর ভিতরে তখন আর্তনাদের শব্দে ভারী হয়ে উঠেছিল বাতাস। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এ পাশ-ও পাশে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন অনেকে। চার দিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। হঠাৎই আরও জোরালো একটি বিস্ফোরণ হল। সেই বিস্ফোরণে পা উড়ে গেল সদ্য চাকরিতে যোগ দেওয়া মমিনুলের। পকেট থেকে কোনো রকমে ফোনটা বার করে বাবাকে বলেছিলেন, বাবা কিছু ক্ষণ পরপর এখানে ব্লাস্ট হচ্ছে। আমার পা উড়ে গিয়েছে। তারপরই ফোনটা কেটে গিয়েছিল।
ফোনের অপর প্রান্তে তখন ছেলের গলা শোনার অপেক্ষায় তখনও ফোন কানে ধরে রেখেছিলেন ফরিদুল হক। কিন্তু না, ফোনের ওপার থেকে ছেলের কণ্ঠস্বর আর শুনতে পেলেন না তিনি। তখনই মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা দলা পাকিয়ে উঠেছিল ফরিদুলের। তিনি জানতে পেরেছিলেন, সীতাকুণ্ডের ডিপোয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারপর পরই ছেলের বাঁচানোর আর্তি ভেসে আসা যেন বজ্রাঘাতের মতো ছিল।
ফরিদুল বলেন, ফোনেই ছেলের আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। ও চিৎকার করে বলছিল, বাবা এখানে কিছু ক্ষণ পর পর ব্লাস্ট হচ্ছে। তারপর আরও একবার ফোন করে ছেলে। তখন জানায় ওর পা উড়ে গেছে বিস্ফোরণে।
এরপরই আত্মীয়দের বিষয়টি জানিয়ে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন ফরিদুল। হাসপাতালে যান মমিনুলের কাকা খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, হাসপাতালে গিয়ে ভাতিজার মরদেহ দেখতে পেলাম।
অর্থনীতিতে স্নাতক করে সম্প্রতি সীতাকুণ্ডের কন্টেনার ডিপোতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন মমিনুল। তারা দুই ভাই, এক বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে মমিনুল মেজো। পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরিবারে সচ্ছল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন।
মমিনুলের খালাতো ভাই তায়েব জানিয়েছেন, চাকরি করতে করতেই স্নাতকোত্তর করবেন বলে তাকে জানিয়েছিলেন মমিনুল। কিন্তু তা অধরাই থেকে গেল। মমিনুল শনিবার রাত ৮টায় ডিপোতে যায়। রাত নয়টার সময় ফোন করে বলে, ভাই আমাকে বাঁচা। তারপরই হাসপাতালে এসে দেখি ভাই আর বেঁচে নেই।