×

খেলা

সাকিব ফেরায় আশাবাদী সিডন্স-ফাহিম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২২, ১০:২২ পিএম

সাকিব ফেরায় আশাবাদী সিডন্স-ফাহিম

সাকিব আল হাসান

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এবার টাইগাররা দুইটি টেস্ট, ৩টি ওয়ানডে এবং ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নেবে। টেস্ট দিয়ে শুরু হবে সফর। সাদা পোশাকের টাইগারদের সাফল্য বরাবরই ভালো না। নেতৃত্বে সাকিব ফেরায় সবাই এবার টেস্টে টাইগারদের সাফল্য প্রত্যাশা করছে। ১৬ জুন থেকে অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই ফের বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়কত্ব শুরু করবেন সাকিব আল হাসান। সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন সামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ২৪ জুন থেকে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। লাল বলের লড়াই শেষে সাদা বলের লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২ জুলাই ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে দু’দল। পরের দিন, ৩ জুলাই একই ভেন্যুতে হবে সিরিজের দ্বিতীয় টি- টোয়েন্টি। গায়ানায় ৭ জুলাই হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি। টি-টোয়েন্টি শেষে ১০ জুলাই থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ। সিরিজের পরের দুটি ওয়ানডে হবে যথাক্রমে- ১৩ ও ১৬ জুলাই। সিরিজের সবগুলো ম্যাচই হবে গায়ানায়।

উইন্ডিজের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১৮ টেস্টে অংশ নিয়ে টাইগাররা জিতেছে মাত্র ৪টি ম্যাচে। হেরেছে ১২ টেস্টে, ড্র হয়েছে ২ ম্যাচ। ২০২১ সালে ঘরের মাঠে উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের যে ৪টি জয় রয়েছে তার ২টি এসেছে ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ২০০৯ সালে উইন্ডিজের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার সেই ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাকিবের কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে নেতৃত্বের ভার। তাই সাকিবকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে টাইগার সমর্থকরা। মুমিনুল হক ব্যর্থতার দায় নিয়ে নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ায় সাকিবকে তৃতীয় বারের মতো টাইগারদের দলনায়ক নির্বাচিত করা হয়। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে আরো আগেই টেস্ট দলের নেতৃত্বে ফেরানো উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা এবং সাকিব-তামিমদের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। সাকিব সম্পর্কে তিনি বলেন, ওর (সাকিব) যে আত্মবিশ্বাস, সক্ষমতা আছে চাপ সামাল দেয়ার, টিমের মধ্যে পজিটিভিটি নিয়ে আসার এ জায়গায় অনেকে পিছিয়ে আছে। ঠিক পিছিয়ে আছে বললেও ভুল হবে। যাদের পাশাপাশি রাখা হয়েছিল তারা আসলে অনভিজ্ঞ ছিল। টাইগার অলরাউন্ডারকে নিয়ে আছে নানা আলোচনা। টেস্ট খেলতে অনীহা থেকে শুরু করে মাঠের বাইরে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কমিটমেন্ট দিনকে দিন বেড়েই চলেছে তার। এ মুহূর্তে বয়সটাও খুব বেশি পক্ষে নেই সাকিবের। তবে, শিষ্যের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে গুরুর।

ফাহিম বলেন, কঠিন হয়তো হবে। তবে আমার মনে হয় আরো দায়িত্বশীল আচরণ সাকিবকে করতে হবে। তার এখন টেস্টে তো বটেই, অন্যান্য ফরম্যাটেও যতটুকু সম্ভব খেলা উচিত। এবং এটা নিজের ইচ্ছায় খেলা উচিত। ওকে যেন জোর করে খেলাতে না হয়। মুমিনুলের বিষয়ে ফাহিম বলেন, দলের ফলাফলের দায়িত্বটা তার উপরে থাকছে না। সুতরাং একটু নির্ভার সে আছে। এটা তাকে ভালো করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া কয়েকদিন আমরা তাকে নিয়ে কাজ করেছি এবং মনে হয়েছে সে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তার ফর্ম ফিরে আসবে।

২০০৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ওয়েস্ট-ইন্ডিজ সফরে যায়। প্রথম টেস্টেই মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। খেলার শেষ দিনে তিনি মাঠেই নামতে পারেননি এবং তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করেন সাকিব। অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে সাকিব যেন নতুন রূপে জ্বলে ওঠেন। তিনি ও মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাকের নেতৃত্ব দেন এবং দুজনে মিলে মোট ১৩টি উইকেট তুলে নিয়ে দেশকে এক ঐতিহাসিক জয় এনে দেন। দেশের বাইরে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। ওয়েস্ট-ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম এবং সর্বসাকুল্যে দ্বিতীয় টেস্ট বিজয়। ওয়েস্ট-ইন্ডিয়ান দলটি অবশ্য খানিকটা অনভিজ্ঞ ছিল। বেতনাদি নিয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ও ‘খেলোয়াড় সংগঠনের, মধ্যে রেষারেষি চলছিল। দলের প্রথম একাদশ এ সিরিজটি বর্জন করে এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি দল মাঠে খেলতে নামে। সাতজন খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক হয় এই ম্যাচে। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফ্লয়েড রেইফার, যিনি কিনা শেষ ১০ বছরে মাত্র ৪টি টেস্ট খেলেছিলেন।

এরপর মাশরাফির ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতির কারণে সিরিজের বাকি সময়টা সাকিবই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন। ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ও ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টও জিতে নেয় এবং দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়। ব্যাট হাতে ১৬ ও ৯৬* রান করে এবং বল হাতে ৫৯ রানে ৩ ও ৭০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন। গোটা সিরিজে তিনি ৫৩.০০ গড়ে ১৫৯ রান করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১৮.৭৬ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়ে কেমার রোচের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন। টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্স। ফের সাদা পোশাকে দলের নেতৃত্বে সাকিব ফেরায় গতকাল হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে অনুশীলন শেষে সিডন্স বলেন, এখানে দুটি ইতিবাচক দিক আছে। সাকিব খুব ভালো অধিনায়ক। খেলা নিয়ে ভাবনার জায়গায়ও সাকিব খুবই ভালো। একই সঙ্গে সাকিব ধারাবাহিক পারফর্মারও। সে অধিনায়ক হিসেবে দারুণ কিছুই করবে। সবাই তাকে অনুসরণ করে।

সিডন্স আরো যোগ করেন, সাকিব আগেও অধিনায়কত্ব করেছে। তার ওপর দলের সবার আস্থা আছে। বলছি না মুমিনুলের সেটা ছিল না। তবে ক্রিকেটাররা সাকিব যা করে সেটাই অনুকরণ করে। তার ফেরাটা তাই দারুণ খবর। আর মুমিনুল এখন তার নিজের খেলাটা খেলতে পারবে। এর আগে দুইবার টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা সাকিব আবার অধিনায়ক হিসেবে ফেরায় যেমন খুশি সিডন্স, তেমনি স্বস্তি মুমিনুলের ওপর থেকে নেতৃত্বের ভার নেমে যাওয়ায়। নেতা হিসেবে মুমিনুলকে যে পছন্দ নয় সিডন্সের, তেমনটিও নয়। তবে টাইগারদের ব্যাটিং পরামর্শক মনে করছেন, অফ ফর্মে ভোগা মুমিনুল এবার নিজের ব্যাটিংয়ে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবেন। সিডন্স বলেন, আরেকটা ভালো দিক হচ্ছে, মুমিনুল এখন তার ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে পারবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App