×

মুক্তচিন্তা

ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে জবাবদিহিতার আওতায় আসবে ই-কমার্স

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২২, ১২:২৯ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ‘ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠন করা হচ্ছে এ কর্তৃপক্ষ। ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। ওই নির্দেশনার পর ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। দেশে দ্রুত ই-কমার্স ব্যবসার সম্প্রসারণ হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালে এ বাণিজ্য ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। ই-কমার্স সম্প্রসারণের পাশাপাশি প্রতারণাও বাড়ছে। যদিও প্রতারণা বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের পর ই-কমার্স সেলও এটির অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগামীতে ই-কমার্স বাণিজ্য করতে হলে এই কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এটির অন্যান্য কাজের মধ্যে থাকবে দেশে ও বিদেশের ব্যবসা নিয়ে গবেষণা, ঝুঁকি মূল্যায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এছাড়া করপোরেট সেবা, ব্যবসার পর্যবেক্ষণ বিভাগ ও ব্যবসার গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে এখানে। পৃথক একটি আইনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করা হবে। থাকবে এ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আইনে পরিচালিত আদালত ব্যবস্থা। এছাড়া আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য, স্থানীয় বাজার তদারকি করবে এটি। ই-কমার্স বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কমিটি ইতোমধ্যেই একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে মন্ত্রিসভা কমিটিতে। ওই প্রতিবেদনে দুটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়। প্রথমটি হচ্ছে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠন, দ্বিতীয়টি ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সব আইনের সংশোধনী আনা। বর্তমান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন, কমিউনিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন আইন রয়েছে। এগুলোকে যুগোপযোগী করার সুপারিশ করা হয়েছে। ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠন হলে সব ধরনের তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ই-কমার্স, এফ-কমার্সসহ (ফিজিক্যাল বাণিজ্য) সব ধরনের বাণিজ্য এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এটি প্রথমে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। সেখান থেকে স্থানান্তর করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এ নিয়ে কাজ চলছে। চীনে এ ধরনের একটি বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এটির নাম অ্যারিজোনা কমার্স অথরিটি (এসিএ)। এ কর্তৃপক্ষ চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ফোকাস করছে। দেশটির কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নতি করছে। সরকারি সংস্থা হলেও এটি বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বেশি কাজ করছে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যকে একটি শৃঙ্খলায় আনতে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে। আইনগুলো যুগোপযোগী না থাকায় এখন স্থানীয় বাজারগুলোতে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। গোটা অর্থনীতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে ই-কমার্স, আজ এ কথা বলা যায় অনায়াসেই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। প্রতি বছরই বাড়ছে উদ্যোক্তা, বাড়ছে কর্মসংস্থান। অনলাইনের প্রচার ও প্রসার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে ব্যবসার সুযোগ। ই-কমার্সের বদৌলতে পণ্যের বাজার এখন অনেক বেশি বিস্তৃত, অনেক প্রসারিত। কোনো কারণে যদি পণ্যের বাজার বড় হয় তাহলে সেই বাজারে নতুন নতুন উদ্যোক্তার আগমন ঘটবে, এটাই স্বাভাবিক। একদিকে বৃহৎ আকারের বাজার অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক বিক্রেতার সমাগমের ফলে বাজারের আয়তন প্রতিনিয়ত প্রসারিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। ই-কমার্স বছরের ৩৬৫ দিন আর দিনের ২৪ ঘণ্টাই খোলা। যে কারণে ক্রেতারা এই সুযোগটি পুরোপুরি গ্রহণের ব্যাপারে তুমুলভাবে আগ্রহী হয়েছে ই-কমার্সের মাধ্যমে। ই-কমার্স একটি স্মার্ট ব্যবসা সন্দেহ নেই। এখানে উন্নত গ্রাহকসেবা, গ্রাহক সন্তুষ্টি সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে ব্যবসায় সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে অনেকে ই-কমার্স ব্যবসায় জড়িত হলেও অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারছে না। অনেকেই বুঝে না বুঝেই এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। কারণ ব্যবসা ভালোভাবে না বুঝে শুরু করলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না বা টিকে থাকতে পারে না। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এক কথায় বলা যায়, কেবলমাত্র যোগ্যরাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে। ই-কমার্সের বিস্তৃতির জন্য সরকারকে আরো সচেষ্ট হতে হবে। কারণ সরকারিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য আর্থিক লেনদেনে ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখনো ই-কমার্স নিয়ে সরকারিভাবে কোনো নীতিমালা প্রণীত হয়নি। নীতিমালা না থাকার কারণে ই-কমার্সে প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যা ই-কমার্সের বিকাশের পথে বিরাট বাধা হয়ে উঠেছে। আজ সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে, আমাদের অর্থনীতিতে অফুরন্ত সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে ই-কমার্স। ই-কমার্সে সঠিক সময়ে ক্রেতার হাতে পণ্যটি পৌঁছে দেয়াটাই হলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেতার হাতে তার কেনা পণ্যটি যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ে পৌঁছে দেয়ার সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ই-কমার্সে ভালো পণ্য প্রাপ্তি নিয়ে নানা সন্দেহ সংশয় থাকায় এ বিষয়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। ই-কমার্সে নিয়োজিতদের অবশ্যই পণ্যের গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। কোনোরকম ফাঁকি কিংবা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ব্যবসা করলে তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ ক্রেতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেললে ই-কমার্স ব্যবসার ভিত্তিটাই হারিয়ে যায়। ই-কমার্সের দুর্বলতার দিক হচ্ছে, কেউ প্রতারণার শিকার হলে অভিযোগ দেয়ার সুযোগ নেই। প্রচলিত পদ্ধতির কেনাকাটায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কেউ অভিযোগ করলে তার প্রতিকার পেতে পারেন। কিন্তু ই-কমার্সে প্রতিকার পাওয়ার পথ নেই। বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে গেছে আরো আগেই। কিন্তু তারপরও সরকার ই-কমার্স নিয়ে একটা নীতিমালা করতে পারেনি। এটা ই-কমার্সের যথাযথ বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে উঠছে। নীতিমালা না করলে প্রতারণা বাড়ে এবং মানুষের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়। ই-কমার্স খাতকে পুরোপুরি শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে ‘ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হচ্ছে। ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় বেশকিছু সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি সুপারিশমালা তৈরি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক গঠিত দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। সেই সুপারিশের আলোকে ই-কমার্স খাত কীভাবে পরিচালিত হবে, সে সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ই-কমার্সের নামে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, রিং আইডি কিংবা আলেশা মার্টের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম করতে না পারে, সেদিকে নজর বাড়ানো হবে। নিয়ম-নীতি ও দেশের প্রচলিত আইনের মধ্য দিয়ে বাড়ানো হবে ই-কমার্স খাতের সম্প্রসারণ। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে তার দায়ভার সব ই-কমার্স খাতে পড়ছে। ই-কমার্স খাতকে প্রতারণা থেকে দূরে রাখতে এবং এর ভবিষ্যৎ সুষ্ঠু পরিচালনার মাধ্যমে আরো প্রসারের লক্ষ্যে দেশে ই-কমার্সকে সুশৃঙ্খল এবং জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধেও সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন থাকতে হবে। দেশের মানুষের জন্য ডিজিটাল সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা বা প্রতারণার সুযোগ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ই-কমার্সকে শক্তিশালী করতে বিশ্বাস এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতারিত যে কোনো গ্রাহক অভিযোগ করলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে ই-কমার্সের ব্যবসা নিরাপদ হবে।

রেজাউল করিম খোকন : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App