×

সারাদেশ

ঘুষের টাকা ফেরত দিতে তহশীলদারকে গণপিটুনি-অবরুদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২২, ০৬:০৮ পিএম

ঘুষের টাকা ফেরত দিতে তহশীলদারকে গণপিটুনি-অবরুদ্ধ

তহশীলদার মো. মাসুদ আহম্মদ

নোয়াখালী সদর উপজেলার ৯ নম্বর কালাদরাপ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদার) মো. মাসুদ আহম্মদকে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গণপিটুনি দিয়ে ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয় ভুক্তভোগী জনসাধারণ। পরে ঘুষ গ্রহণের টাকা ফেরত দেওয়ার মুচলেখা দিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় সুধারাম থানা পুলিশের সহযোগীতায় মুক্তি পান ওই তহশীলদার। এর আগে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিজ কার্যালয়ে ভুক্তভোগীরা তাদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গেলে টাকা ফেরত না পেয়ে তহশীলদারকে গণপিটুনি দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।

ভুক্তভোগী জনসাধারণ বলেন, কালাদরাপ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদার) মো. মাসুদ আহম্মদ এখানে যোগদানের পর থেকে সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত, জমা খারিজ, খাজনা দাখিলাসহ ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার হাত থেকে রক্ষা পাননি কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম পাটোয়ারীও। সাম্প্রতিক তিনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা দাখিলা কাটতে গেলে তার কাছে ৪০ হাজার টাকা চান তহশীলদার মাসুদ আহম্মদ। পরে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার খাজনা দাখিলা কাটা হয়। কিন্তু ৩০ হাজার টাকার খাজনা দাখিলার রশিদ দেওয়া হয় মাত্র ৯৭ টাকার।

বুধবার (১ জুন) দুপুরে তহশীলদার মাসুদ আহম্মদের সেনবাগে বদলির সংবাদ পেয়ে আমাদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে এলে তিনি টাকা ফেরত দিয়ে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন,পরবর্তী যে তহশীলদার আসবে, আমি তার সঙ্গে কথা বলবো, তিনি আপনাদের কাজ করে দিবেন। পরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে তার রুমে আটক করে রাখা হয়।

কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত উল্যাহ সেলিম বলেন, তহশীলদারের বদলির খবর পেয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীসহ সহস্রাধিক মানুষ তার কার্যালয় অবরুদ্ধ করে ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তাকে গণপিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করছে এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়কে বিষয়টি জানালে তাঁরা জনগণ কিভাবে তাদের পাওনা টাকা পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। পরে সুধারাম মডেল থানার এসআই মনির হোসেনের সহযোগিতায় উপস্থিত ৬৫জন পাওনাদারের প্রায় ৮ লাখ টাকার তালিকা করে তহশীলদারের কাছ থেকে ঘুষের টাকা ফেরত দিবে মর্মে মুচলেখা নিয়ে তাকে পুলিশ পাহারায় রাত সাড়ে ১২টায় নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম আরও বলেন, রাতে ৮ লাখ টাকার তালিকা করা হলেও খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামলে শত শত ভুক্তভোগী জমায়েত হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে আরো প্রায় ৬ লাখ টাকার তালিকা করা হয়েছে। এই তহশীলদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি লিখিত অভিযোগ করবো।

কালাদরাপ ইউপি চেয়ারম্যান এবং সুধারাম থানার এসআই মনির হোসেনের কাছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেতর দেওয়ার অঙ্গিকার করে দেওয়া মুচলেখায় তহশীলদার মাসুদ আহম্মদ লিখেন, আমি জনসাধারণের কাজ করবো বলে নেওয়া টাকা কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ফেরত দিতে বাদ্য থাকিব ও সত্য বলে স্বীকার করিলাম।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাফিজুল হক জানান, ঘটনার বিষয়ে আমি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে লিখিত অভিযোগ দিতে, তিনি অভিযোগ দিলে তাকে স্থায়ীয়ভাবে বহিষ্কার করা হবে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সাঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App