ভরা বোরো মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। লিটারপ্রতি ২০০ টাকা দরে ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে হু হু করে আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ডালের বাজারেও অস্থিরতার খবর আসছে। ভরা মৌসুমে বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখে প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রিসভায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনার পর কেউ চাল মজুত করে বাজার অস্থির করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুই মন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবও। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ মাঠপর্যায়ে কার্যকর হোক। দ্রুত বাজার স্থিতিশীল হোক- এমন প্রত্যাশায় রইলাম। জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। চিকন-মোটা সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩-৬ টাকা এবং ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৭০ টাকায়, নাজিরশাইল ৭৫-৮৫ টাকায়, ব্রি-২৮ ৫২-৫৫ টাকায় আর পোলাওর চালের দাম পড়ছে ১১০-১১৫ টাকা। সরকারি গুদামে যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুত আছে। বেসরকারি খাতেও চালের সংকট নেই। এরপরও কেন চালের দাম বাড়বে? বাজারে অন্যান্য পণ্যের দামও ঊর্ধ্বগতি। চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে খুচরা, পাইকারি ও মিলারদের একে অপরকে দোষারোপ করার একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ করি। চালের বেলায়ও তা দেখছি। মিল মালিকরা গণমাধ্যমকে বলছেন, এবার বোরো মৌসুমের শুরুতে হাওরে বন্যায় ধান নষ্ট হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে বৃষ্টিতে পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত থেকে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গমের দাম বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে চালের বাজারেও। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বোরো ধানের অধিকাংশ কাটা হয়ে গেছে। চালও বাজারে আসছে। তবে হাওরে আগাম পানি এসে যাওয়া ও অতিবৃষ্টির কারণে কিছু ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এরপরও এবার বোরোতে ২ কোটি ৭ লাখ টনের ওপরে চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু চাল নয়, গত ১ মাসে বাজারে ডাল, আটা, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে। এমনকি সরকারের অনুরোধও কানে তুলছেন না ব্যবসায়ীরা। পণ্য যথেষ্ট মজুত থাকলেও সরবরাহ নেই, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অজুহাত তারা দাঁড় করাচ্ছেন। আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল; বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষকে প্রচুর পরিমাণে ভাত খেতে হয় শুধু শর্করার চাহিদা পূরণের জন্য নয়, তাদের আমিষেরও একটা বড় অংশ আসে ভাত থেকে। তাই চালের দাম যেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়সাধ্যের সীমা অতিক্রম না করে, সরকারকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। কিন্তু সরকার দক্ষভাবে ব্যবসায়ীদের তদারকি করতে পারছে না। তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিষয়টি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠে এসেছে। বিশেষ করে খাদ্যমন্ত্রীকে গুরুত্ব দিয়ে বাজার তদারকির জন্য দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারকে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। ভাঙতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।