×

জাতীয়

তামাকের আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২২, ০৮:৩৯ এএম

২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে এমন ঘোষণা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ২০১৬ সালে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের নির্দেশও দেন তিনি। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে নিজেদের ব্যবসার প্রসার বাড়িয়ে চলছে তামাক কোম্পানিগুলো। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যাচ্ছে। পঙ্গুত্ব বরণ করছে আরো কয়েক লাখ মানুষ। এই প্রেক্ষাপটের মধ্যেই আজ ৩১ মে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’।

বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘তামাকমুক্ত পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও তামাকের ভয়াল নেশা থেকে সরিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমকে সমন্বিত প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, তামাক সেবনের কোনো সুফল নেই মানুষের কাছে এই বার্তা নিয়ে যেতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সংগঠনসহ সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের ৪ কোটির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়, যার সিংহভাগই নারী। ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় শতকরা ৯৫ ভাগের মুখের লালাতেই উচ্চমাত্রায় নিকোটিন পাওয়া গেছে, যা মূলত পরোক্ষ ধূমপানের ফল। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

পরিবেশ দূষণের জন্যও তামাক দায়ী। বাংলাদেশে সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট ৭১ বিলিয়ন সিগারেট শলাকা উৎপাদিত হয়েছে। সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে প্রায় এক দশক সময় নেয়, আর মিশে যাওয়ার সময় এ থেকে ৭ হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। কেবল সিগারেটই নয়, জর্দা, গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোও প্লাস্টিক কৌটা ও পলিথিন প্যাকেটে ভরে বিক্রি করা হয়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বননিধনের জন্য তামাক দায়ী। দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী ইতোমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে। ধান চাষের সঙ্গে তুলনা দেখা যায়, তামাক চাষে প্রায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। এক একর জমিতে তামাক চাষ মানেই এক একর জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদিত না হওয়া। তামাকের বহুমুখী ক্ষতির প্রভাব থেকে সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)-তে সরকারের বিদ্যমান বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি জানান বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, দেশে তামাক কর নীতি করা হলে তামাকপণ্যের ওপর করারোপ একটি সাধারণ নিয়মের মধ্যে আসবে। তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, তামাকের কারণে আমাদের আবাদযোগ্য জমি, বনভূমি, মৎস্যক্ষেত্র প্রভৃতি সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ব্যাপক চাপ পড়ছে। সরকারের উচিত হবে শক্তিশালী আইন ও কর পদক্ষেপের মাধ্যমে তামাকের আগ্রাসন বন্ধ করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App