×

খেলা

চাপে ম্রিয়মাণ মুমিনুল টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছাড়লেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২২, ০৭:৪৫ পিএম

চাপে ম্রিয়মাণ মুমিনুল টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছাড়লেন

মুমিনুল হক

ব্যাটিংয়ের খারাপ সময় থেকে কাটিয়ে উঠতে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। মঙ্গলবার (৩১ মে) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে সভার পর মুমিনুল জানিয়েছেন, তিনি আর টেস্ট অধিনায়কত্ব করতে চান না। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বিসিবি।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ফরম্যাটের ১১তম অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ। সর্বশেষ দুই টেস্টে সবচেয়ে সমালোচিত ক্রিকেটার তিনি। অধিনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ারে বাজে ম্যাচ খেলেছেন এই দুই সিরিজে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে করেছেন ২ রান। এরপর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছেন ৯ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টে করেছেন ২ রান এবং দ্বিতীয় টেস্টে কোনোভাবে ১১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছেন। দুই টেস্ট মিলিয়ে করেছেন মাত ১৩ রান। যেখানে প্রোটিয়া অধিনায়কের ছিল ২২৭ রান। এর আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেও নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের পর দুই টেস্টের সাত ইনিংসে মাত্র একবারও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি তিনি।

তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে জয়ের পিছনে ৮৮ রানের অনবদ্য ভূমিকা ছিল তার। ২০১৯ সালের ভারত সিরিজসহ এ পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচে অধিনায়কত্বে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সিরিজেও সফল ছিলেন না। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৪৪ রান করলেও দ্বিতীয় টেস্টে ফিরেছেন শূন্য রানে। এরপর করোনা মহামারির জন্য ২০২০ সালের সকল সিরিজ বাতিল হলেও ২০২১ সালে মাঠে ফিরে ক্রিকেট। অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সিরিজেই প্রথম সাফল্য পান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লংকানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে খেলেছেন ১২৭ রানের অনবদ্য ইনিংস। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসেও ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টের ভাগ্য সহায় ছিল না বিধায় ৪৯ রানে কাটা পড়েছিলেন প্রথম ইনিংসে। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন ৩২ রান। তৃতীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে করেছেন ৭০ রান। এরপর ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থেকে তার রান খড়া শুরু হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট মিলিয়ে করেছেন মাত্র ১৪ রান। অধিনায়ক হওয়ার পর সবমিলিয়ে ৩০ ইনিংসে করেছেন ৭৮৩ রান। তবে অধিনায়ক হওয়ার পূর্বের ১১ ম্যাচে করেছিলেন ৫০৮ রান। সেদিক থেকে বলা যায়, অধিনায়ক হওয়ার আগের ১১ ম্যাচে রেকর্ড অনুসারে বর্তমানে টাইগারদের এই অধিনায়ক মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছেন। তবে সেই ১১ ম্যাচে ছিল দুটি শতক ও একটি অর্ধশত রানের ইনিংস। এই ত্রিশ ইনিংসে আছে দুটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফসেঞ্চুরি। তবে অভিষেক ম্যাচ থেকে পরিসংখ্যানে দিকে তাকালে অধিনায়কত্ব লাভ করার পর থেকে মুমিনুলের কিছুটা অবনতি লক্ষ্য করা যায়। অধিনায়ক হওয়ার আগে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৪১.৪৭ করে। তবে এই দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে গেছেন। টাইগারদের সাদা পোশাকের এই ওপেনারের বর্তমান ব্যাটিং গড় ৩১.৪৪। সাধারণ ক্রিকেটার থেকে যখন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত চাপে থাকে ক্রিকেটাররা। ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অধিনায়ক হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছিল মুমিনুল। এবার আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও অধিনায়কের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছে টাইগার ভক্তরা।

ক্রিকেটের অন্য দুই ফরম্যাটে সেভাবে সুযোগ না পেলেও তিনি এখন টাইগারদের সাদা পোশাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর থেকেই টাইগারদের সাদা পোশাকের দায়িত্ব তার হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নেতৃত্বে আর্মব্যান্ড পরার পর থেকে সাদা পোশাকে চিরচেনা সেই নির্ভরযোগ্য মুমিনুলকে কবে দেখা গেছে তা অনেকেই ভুলতে বসেছে। সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সের জন্য চায়ের কাপে আলোচনায় বারবার উঠে আসছে টাইগারদের সাদা পোশাকের অধিনায়কের নাম। বিশে^র অন্য ক্রিকেটাররা যখন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেলে বিষয়টি উপভোগ করে, সেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেকটা ভয়ের চোখে দেখে। সেজন্যই হয়তো অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর তাদের চিরচেনা রূপে দেখা যায় না। নিজস্ব বোলিং কিংবা ব্যাটিং স্টাইলেও বেশ পরিবর্তন হয়। তবে সে পরিবর্তন কোনোভাবেই ইতিবাচক হয় না। অন্যদের মতো একই পথে হেঁটেছেন মুমিনুল হক সৌরভও। তবে পরিসংখ্যানে তথ্য অনুসারে মুমিনুল এখনো নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন।

কক্সবাজারের সাগরপাড়ের এই ক্রিকেটারের টেস্ট ফরম্যাটে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে। এখনো পর্যন্ত জাতীয় দলের সাদা পোশাকে ৫৩ ম্যাচে করেছেন ৩৫২৫ রান। দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। যার মধ্যে রয়েছে ১১টি সেঞ্চুরি ও ১৫টি হাফ সেঞ্চুরি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম তার জন্য এক অনন্য আশীর্বাদ। কেননা তার ক্যারিয়ারের ১১ টেস্ট সেঞ্চুরির ৭টিই করেছেন এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। যা ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের সঙ্গে তার নাম লিখাতে সাহায্য করেছে। নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সেঞ্চুরিতে কিংবদন্তিদের পরই মুমিনুলের অবস্থান। মাহেলা জয়াবর্ধনে কলম্বোতে সবচেয়ে বেশি ১১ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ডন ব্র্যাডম্যান মেলবোর্নে সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৯টি। এছাড়া জ্যাক ক্যালিস কেপটাউনে ৯টি, কুমার সাঙ্গাকারা কলম্বোতে ৮টি, মাইকেল ক্লার্কের অ্যাডিলেডে ৭ সেঞ্চুরি রয়েছে। জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারার ৭টি করে শতক আছে গল ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও। সবাইকে ছাপিয়ে শীর্ষস্থান দখল করতে চট্টগ্রামে আর মাত্র চারটি সেঞ্চুরি লাগবে বাংলাদেশি এই লিটল ম্যানের। শ্রীলঙ্কা সফরে সে পরিসংখ্যানকে আরেকটু এগিয়ে রাখার সুবর্ণ সুযোগ থাকলেও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। নির্দিষ্ট মাঠে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ডে একটু পিছিয়ে থাকলেও ম্যাচ খেলার দিক থেকে লঙ্কান কিংবদন্তিদের টপকিয়ে ক্লার্কের পাশে অবস্থান করছেন তিনি। গলে ৭ সেঞ্চুরি পেতে সাঙ্গাকারা ও জয়বর্ধনার খেলেছেন ২৩ ম্যাচ যেখানে মুমিনুল খেলেছেন মাত্র ১০ ম্যাচ। মুমিনুলের প্রথম ১০ সেঞ্চুরির সবই হয়েছে দেশের মাটিতে। বিদেশে মাটিতে কোনো সেঞ্চুরি করার আগে ঘরের মাঠে এমন রেকর্ড অন্য কোনে ক্রিকেটার আজ পর্যন্ত গড়তে পারেনি। সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালান ল্যাম্ব ক্যারিয়ারে ১৪ সেঞ্চুরির মধ্যে প্রথম ৯টি করেছেন দেশের মাটিতে। দশম সেঞ্চুরিটি করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App