×

মুক্তচিন্তা

কর্ণফুলীর ঐতিহ্য রক্ষা করুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২২, ১২:৪৫ এএম

কর্ণফুলীর ঐতিহ্য রক্ষা করুন

কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রধান নদী। এটি ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড়ে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর মোহনাতে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অবস্থিত। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নামের উৎস : কর্ণফুলী নদীর নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে যে, আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে তারা দুজন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করেছিলেন। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটা উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান, তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন, কিন্তু সফল হননি। রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এই করুণ কাহিনী থেকেই নদীটির নাম হয় ‘কর্ণফুলী। মার্মা আদিবাসীদের কাছে নদীটির নাম কান্সা খিওং। কর্ণফুলী নদীর চর : ১৮৮৩ সালে কর্ণফুলীর মোহনায় সৃষ্টি হয় লুকিয়া চর। ১৮৭৭ সালে জুলদিয়া চ্যানেল। জুলদিয়া চ্যানেলটি আড়াই মাইল দীর্ঘ এবং দেড় মাইল প্রশস্ত। ১৯০১ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে পতেঙ্গা চ্যানেলটি জুলদিয়া চ্যানেল থেকে প্রায় দেড় হাজার ফুট পশ্চিমে সরে যায়। হালদা নদীর সঙ্গে কর্ণফুলীর সংযোগস্থলে আছে বিশাল চর। যা হালদা চর হিসেবে পরিচিত। নদীর প্রবাহের কিছুু অংশ নাজিরচর ঘেঁষে, কিছু অংশ বালু চ্যানেলের মধ্য দিয়ে এবং কিছু মূল স্রোত হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৯৩০ সালে কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু নির্মাণের আগে নদীর মূল প্রবাহ প্রধানত কুলাগাঁও অভিমুখে বাম তীর ঘেঁষেই প্রবাহিত হতো। কালুরঘাট সেতু হওয়ার পর সেতুর ডান দিকে আরো একটি প্রবাহের মুখ তৈরি হয়। ফলে নদীর মাঝপথে সৃষ্টি বিশাল একটি চর- যা কুলাগাঁও চর নামে পরিচিত। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে প্রভাব : কবি ওহীদুল আলম ১৯৪৬ সালে কর্ণফুলীর মাঝি নামে একটি কাহিনী-কাব্য রচনা করেন। উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৬২ সালে রচনা করেন তার উপন্যাস কর্ণফুলী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন, ওগো ও কর্ণফুলী। ‘তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী, কে জানে সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার দয়িতের সন্ধানে।’ এছাড়া চট্টগ্রামী ভাষার গানে এবং লোক-সংস্কৃতিতে এই নদীর প্রভাব অনেক। যে কর্ণফুলীকে নিয়ে এত গর্ভবোধ করি আমরা, আজ সে কর্ণফুলীকে গিলে খাচ্ছে কিছু ভূমি দখলদার। আজ কর্ণফুলী তার নিজস্ব রূপ হারাতে বসেছে। তারই নিরীখে শত মানববন্ধন ও শত অন্দোলনের ফলে কর্ণফুলী রক্ষার জন্য কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে চূড়ান্ত নোটিস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশনার দুই বছর পর এই নোটিস দেয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিসের পরও নদী দখল থামছে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় কর্ণফুলী নদীর নাব্য ও জৌলুস ফেরাতে ২০১৯ সালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযানে নামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সে সময় কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। আর এ সুযোগে দখলবাজরা কর্ণফুলী নদীর পাড়ে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তুলছে। প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে রয়েছে ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা। এভাবে আমাদের প্রাণের কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ দখল করলে বিলীন হবে এই নদী। কর্ণফুলী বাঁচলে, বাঁচবে চট্টগ্রাম। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রাণের দাবি কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে আরো সঞ্চারিত করুন।

আলতাফ হোসেন হৃদয় খান : লেখক ও সমাজকর্মী। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App