×

জাতীয়

কুমিল্লায় সিইসির মতবিনিময় সভায় হট্টগোল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২২, ০৮:৫৮ পিএম

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের মতবিনিময় সভায় হট্টগোল হয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বক্তব্য দেয়ার সময় তাঁকে বাধা দেন আওয়ামী লীগ দলীয় কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান অতিথি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের উপস্থিতিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভায় প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রত্যাশার কথা শোনেন তিনি। সভায় মেয়র প্রার্থীরা একে একে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দল ত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছি। ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা আছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত। আমরা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো রাতের বেলায় ভোট চাই না।’

নিজাম এ বক্তব্য দেয়ার পরপরই ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদুর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সরকার মাহমুদ জাভেদ, মো. মুরাদসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ১০-১৫ নেতা-কর্মী চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তাঁরা নিজামের বক্তব্যে বাধা দেন।

পরে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন সবাইকে শান্ত হতে বলেন। একই সঙ্গে তিনি নিজামের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মাইক হাতে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, আগের নির্বাচনে কী হয়েছিল, সেটি নিয়ে বলবেন না। এই নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল মঞ্চে বসে ওই হট্টগোল দেখেন।

হট্টগোলের পর নিজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সময় যেন গায়েবি মামলা ও পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করা হয়। আগামী ১ জুন থেকে দুজন নির্বাচন কমিশনারকে কুমিল্লায় রাখেন, তাঁরা নির্বাচন মনিটরিং করুক। আমরা চাই, নতুন কমিশন যেন ভোটারদের আস্থা ফিরে পায়। নিজেদের ক্যাম্পে নিজেরা আগুন লাগিয়ে যেন মামলা দিয়ে হয়রানি করা না হয়। বক্তব্যের পর নিজাম উদ্দিন আগের অনাকাঙ্খিত বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

সভায় চার মেয়র প্রার্থী, কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে তাঁদের অভিযোগ ও আশা-আকাঙ্খার কথা জানিয়েছেন। সভায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক ওরফে সাক্কু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সুন্দর পরিবেশ চেয়েছেন। তিনি বলেন, প্রচারণার দুই দিন পেরিয়ে গেছে। এখনই কিছু বলতে চাই না। আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল হাসান নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম ইভিএম ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হকের পক্ষে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন। তিনি নির্বাচনের দিন ভোটারদের যাতায়াতের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তিনি বলেন, পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা (আওয়ামী লীগ) ওয়াদা করছি, কারও মাইক ও পোস্টারে হাত দেয়া হবে না। কিন্তু ওরা (বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থী) গণ্ডগোল করে আমাদের ওপর দায় চাপাতে পারে। নির্বাচনে টাকার বাণিজ্য আছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা আছেন। এগুলোর ওপর নজরদারি থাকতে হবে।

সভায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করেন, তাঁর ওয়ার্ডে কোতোয়ালি মডেল থানার উজ্জ্বল নামের এক উপপরিদর্শক (এসআই) তাঁর সমর্থকদের তালিকা করছেন, হয়রানি করছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সহযোগিতা করছেন। একই অভিযোগ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোশারফ হোসেনেরও। সেখানেও পুলিশ সমর্থকদের তালিকা করে মামলা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হানিফ মাহমুদ বলেন, আমার ওয়ার্ডে টাকা দিয়ে ভোট কেনা হচ্ছে।

২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নাহিদা আক্তার বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ১০০ থেকে ১৫০ জন সমর্থক নিয়ে গণসংযোগ করছেন। আমাদের হুমকি দিচ্ছেন।

পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন যুদ্ধক্ষেত্র নয়। এখানে কেউ পেশি শক্তি দেখিয়ে ও সহিংসতা করে জয় লাভ করবেন এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে কুমিল্লা সিটির নির্বাচন একটা মডেল হবে। এ জন্য যা যা করার সবই করা হচ্ছে। যে কোনো সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যদি কোন অবনতি হয় তাহলে তা প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রবিবার দুপুরে কুমিল্ল সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, ভোটারদের মধ্যে ইভিএম বিড়ম্বনা দূর করতে ব্যবস্থা থাকবে। এনআইডি কিংবা অন্য উপায়ে ভোটার শনাক্ত নিশ্চিত হওয়ার পর আঙুলের ছাপ মেচিং না হলেও ওই ভোটার ভোট দিতে পারবেন।

ভোটার উপস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, উন্নত বিশ্বে অনেক দেশের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যখন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, এ সময় আমাদের দেশে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশও উপস্থিত হয়ে যায়। আমরা কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে মডেল নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App