×

খেলা

রিয়াল মাদ্রিদ-লিভারপুল: প্যারিসে কার হাতে উঠবে শিরোপা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২২, ১০:৫৫ পিএম

রিয়াল মাদ্রিদ-লিভারপুল: প্যারিসে কার হাতে উঠবে শিরোপা

লিভারপুলের মো. সালাহ ও রিয়াল মাদ্রিদের করিম বেনজেমা

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে শীর্ষ লিগগুলোর ২০২০-২১ মৌসুমের পর্দা নেমেছে । সবার চোখ এখন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। ইউরোপসেরা হওয়ার লড়াইটা যে এখনো বাকিই রয়ে গেছে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে প্যারিসে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে লিভারপুল।

ইয়ুর্গেন ক্লপ ও কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের ইউরোপ সেরা হওয়ার লড়াইটা প্যারিসের স্তাদ দে ফ্রান্সে শুরু হবে শনিবার রাত একটায়। ক্লাব ফুটবলে ইউরোপের সেরা প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদ-লিভারপুল এর আগে আটবার মুখোমুখি হয়েছে। রিয়াল জিতেছে চারবার, লিভারপুলের জয় তিন ম্যাচে। দল দুটি সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০২০-২১ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে। দুই লেগের সেই লড়াইয়ে জিতেছিল রিয়াল। এ নিয়ে তৃতীয়বার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে তখনকার ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে লিভারপুল জিতেছিল ১-০ গোলে। আর ২০১৭-১৮ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে রিয়াল জিতেছিল ৩-১ গোলে।

রিয়াল মাদ্রিদ সর্বাধিক ১৩ বার ইউরোপ সেরার ট্রফি জিতেছে- ১৯৫৬, ১৯৫৭, ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬৬, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০২, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে। সবশেষ সাতবার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। লিভারপুল ইউরোপ সেরা হয়েছে ছয়বার- ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮১, ১৯৮৪, ২০০৫ ও ২০১৯ সালে। টানা দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ডের কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব থাকছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে।

গত বছর শিরোপা লড়াইয়ে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল চেলসি। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতাটির নামকরণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হওয়ার পর রিয়াল কখনো ফাইনালে হারেনি। প্রতিযোগিতাটির নাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হওয়ার পর অষ্টমবারের মতো ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে দলটি। রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি প্রথম কোচ হিসেবে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ডাগআউটে থাকবেন। প্রথম কোচ হিসেবে তার সামনে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের হাতছানি। আনচেলত্তির সঙ্গে সর্বাধিক তিনটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন রিয়ালের সাবেক কোচ জিনেদিন জিদান এবং লিভারপুলের সাবেক কোচ বব পেইজলিশক্তির বিচারে দুই দলই বেশ এগিয়ে। স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্র্রিদ, তবে শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় লিগ চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলেও এফএ কাপ ও কারাবাও কাপের শিরোপা জিতেছে লিভারপুল। শেষ দিকে মনে হচ্ছিল তারা ‘কোয়াড্রপল’ জিততে চলেছে। কিন্তু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাটা হাতছাড়া হওয়ায় তাদের সামনে এখন ‘ট্রেবল’ জয়ের সুযোগ। রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে পারলেই সেটি নিশ্চিত হয়ে যাবে অল রেডদের। কচ্ছপ ইয়েলো বলছে এবার চ্যাস্পিয়ন্সলিগের শিরোপা জিতবে লিভারপুল।

একশ কেজিরও বেশি ওজনের এই কচ্ছপের নাম ইয়েলো। ৩০ বছর বয়সি এই প্রাণীকে মালাগার বেনালমাদেনার সি লাইফ অ্যাকুরিয়ামে আনা হয়েছিল ১৫ বছর আগে। বৃহস্পতিবার অ্যাকুরিয়ামের পানির মধ্যে সে ভবিষ্যদ্বাণী করল, রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল কে জিতবে?

এই কচ্ছপটির যত্নআত্তি করা কর্মীরা একটি দুই মিটার পাইপের দুই পাশে দুটি ব্রকোলি রেখেছিল। ব্রকোলি দুটির সঙ্গে দুটি পাত্রে রাখা হয়েছিল দুই ফাইনালিস্টের নাম। প্রথম কয়েক মিনিট দুই দিকের ব্রকোলিই মুখে দেয়ার চেষ্টা করেছিল ইয়েলো। তাতে করে উপস্থিত কর্মীরা ধরে নেয়, হাড্ডাহাড্ডি ফাইনাল হতে যাচ্ছে।

কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে তাদের। স্পেনের অ্যাকুরিয়ামে বসবাস করলেও স্প্যানিশদের পক্ষে যায়নি ইয়েলোর ভবিষ্যদ্বাণী। বামদিকে রাখা ইংলিশ দলের সঙ্গে রাখা ব্রকোলি নিয়ে গেছে। তার মানে ইয়েলো বলছে, ফাইনাল জিতবে লিভারপুল!

কচ্ছপ লিভারপুলের কথা বললেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডার গ্যারি নেভিল বলেছেন, আর যা-ই হোক, লিভারপুল শিরোপা জিতছে না!

লিভারপুল সমর্থকরা নেভিলের এমন মন্তব্যে নাখোশ হতেই পারেন। খেলার আগেই নেভিল কীভাবে বলে দিলেন এত বড় কথা! সালাহ মানে হেন্ডারসনদের দল কি এতটাই খারাপ? রিয়াল মাদ্রিদও কি এতটাই এগিয়ে যে আগেভাগেই বলে দেয়া যায় লিভারপুল চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে না?

নেভিল অবশ্য এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, কেবল মধ্যমাঠে শক্তিতে পিছিয়ে থাকার কারণেই ফাইনালে লিভারপুল রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পেরে উঠবে না।

সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকার কথা, ‘রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠ দেখুন। কাসেমিরো, টনি ক্রুস, লুকা মদরিচ, ভালভার্দে আর কামাভিঙ্গাকে নিয়ে গড়া রিয়ালের মাঝমাঠ ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়বে লিভারপুলের ওপর। আমার মনে হয় ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে লিভারপুলের মাঝমাঠ নিজেদের দুর্বলতা দেখিয়ে দিচ্ছে। এই পাঁচজনকে নিয়ে গড়া রিয়ালের মাঝমাঠই চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে পার্থক্য গড়ে দেবে।’

দুই দলের ডাগআউটে রয়েছেন সময়ের সেরা দুই কোচ। রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তির সামনে চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার হাতছানি। এসি মিলানের হয়ে দুবার শিরোপা জয়ের পর তৃতীয় শিরেপাটা রিয়াল মাদ্রিদের হয়েই জিতেছেন ২০১৩-১৪ মৌসুমে। এই ইতালিয়ান কোচের হাত ধরেই রিয়াল মাদ্রিদ ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার স্বপ্ন দেখছে। অন্যদিকে লিভারপুল ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ ২০২১-২২ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা ম্যানেজার নির্বাচিত হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জিতেছেন লিগ ম্যানেজার্স এসোসিয়েশনের (এলএমএ) সেরা কোচের পুরস্কারও। তার সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের সুযোগ। ২০১৭-১৮ মৌসুমে রিয়ালের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ২০১৮-১৯ সালেই আবার শিরোপা জিতেন অলরেডদের হয়েই। দুজন কোচের কৌশলগত দিকটাও একই। মাঠে ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলানোটাই পছন্দ করেন দুজনই।

দুই দলের আক্রমণভাগই যথেষ্ট শক্তিশালী। রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা লা লিগায় ২৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে জিতেছেন পিচিচি অ্যাওয়ার্ড এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুই হ্যাটট্রিকে ১৫ গোল করেছেন মৌসুমে। রিয়াল মাদ্রিদের ফাইনালে ওঠাতে এই ফরাসি স্ট্রাইকারের অবদানই যে সর্বোচ্চ তা বলাই যায়। আক্রমণভাগে তার দুই পাশে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ ভিনিসিউস জুনিয়র ও রদ্রিগো। মৌসুমজুড়ে ভিনিসিউস-বেনজেমা জুটি প্রতিপক্ষের জন্য যেন ত্রাস হয়ে উঠেছিল। মাঝমাঠ থেকে তাদের বল বানিয়ে দেয়ার জন্য রয়েছেন লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুস, ক্যাসেমিরো, কামাভিঙ্গা, ভালভার্দের মতো খেলোয়াড়ররা। তবে রক্ষণভাগ নিয়ে রিয়ালের দুশ্চিন্তাটাই সবচেয়ে বেশি। সেন্টারব্যাক হিসেবে এদার মিলিতোর সঙ্গে সর্বশেষ ম্যাচে দেখা যায় নাচোকে। তবে ফাইনালে ফিরতে পারেন আরেক সেন্টারব্যাক ডেভিড আলাবা। র‌্যাইটব্যাকে রয়েছেন দানি কারভাহাল ও লেফটব্যাকে মেন্দি। আর গোলপোস্ট অক্ষত রাখার দায়িত্বটা তো স্বাভাবিকভাবেই থিবো কর্তোয়ার হাতেই। সেমিফাইনালে ম্যানসিটির বিপক্ষে দারুণ সব সেভ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২৩ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুট জিতেছেন লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ। সতীর্থদের দিয়ে ১৬ গোল করিয়ে সেরা প্লেমেকারের পুরস্কারটাও তার হাতেই উঠেছে। লিভারপুলের আক্রমণে সালাহর সঙ্গে দেখা যেতে পারে সাদিও মানে ও লুইজ দিয়াজকে। দিয়াগো জোতা ও ফিরমিনোকে দেখা যেতে পারে বেঞ্চই। প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের আক্রমণভাগের তিনজন খেলোয়াড় এবার ১৫ বা এর বেশি গোল করেছেন। যা নিঃসন্দেহে ভীতি ছড়াবে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগে। মাঝমাঠে থিয়াগো আলকানতারা, জর্ডান হেন্ডারসন, নাবি কেইতা, ফেবিনহোর মতো খেলোয়াড়রা আছেন আক্রমণভাগকে বল বানিয়ে দিতে। তবে অলরেডদের রক্ষণভাগ রিয়ালের থেকে শক্তিশালীই বলা চলে। সেন্টারব্যাক হিসেবে ভার্জিল ফন ডাইক, জোয়েল মাতিপ, ইব্রাহিম কোনাতের মতো খেলোয়াড়রা রয়েছেন। দুই পাশে দুই ফুলব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড ও রবার্টসনের মতো ফর্মে থাকা খেলোয়াড়রা রয়েছেন। গোলপোস্ট সামলাবেন প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্লিনশিট নিয়ে শেষ করা ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। তবে ইনজুরির কারণে মাঝমাঠে থিয়াগোর খেলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ক্লপ। এবার প্যারিসের স্তাদ দে ফ্রান্সে প্রতিশোধ নিয়ে শেষ হাসিটা কে হাসতে পারেন তার জন্যই অপেক্ষার প্রহর গুণছে ফুটবল সমর্থকরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App