রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: বাংলাদেশে যে পাঁচ ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২২, ০৬:০৩ পিএম
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। পুতিনের নির্দেশনায় এরই মধ্যে মারিউপোলসহ বেশ কয়েকটি শহর দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এ যুদ্ধকে অন্যায্য হিসেবে আখ্যায়িত করে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান এই যুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খবর বিবিসির।
গম আমদানিতে প্রভাব
বাংলাদেশের মানুষ ক্যালরির জন্য ভাতের ওপর নির্ভরশীল। তবে আটা-ময়দার ওপরও ধীরে ধীরে বাড়ছে নির্ভরশীলতা। আর এই আটা-ময়দা আসে গম থেকে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গমের চাহিদা গত ২০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ তার চাহিদার ৮০ শতাংশ গম আমদানি করে। এর অর্ধেক আসে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। কিন্তু সে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে গমের দাম বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশ আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। সেই সঙ্গে আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি খাদ্যর দাম বেড়েছে বেশ খানিকটা।
ভোজ্য তেলের ওপর প্রভাব
বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের দাম এখন লাগামছাড়া। যদিও বাংলাদেশের বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের বেশিরভাগই আসে পাম ও সয়াবিন তেল থেকে। বিশ্বব্যাপী যেসব ভোজ্য তেল ব্যবহার হয় তার মধ্যে সানফ্লাওয়ার তেল প্রায় ১৩ শতাংশ। এর প্রায় ৭৫ শতাংশই আসে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে।
যেহেতু যুদ্ধের কারণে এ সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে, তাই বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশ তার প্রয়োজনীয় তেল আমদানি করে হয় কাঁচামাল হিসেবে, নয়তো প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে (পাম ও সয়াবিন তেল)।
হাঁস-মুরগি ও গরুর খাবার
পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভুট্টা। বিশ্ববাজারে ১৬ শতাংশ ভুট্টা সরবরাহ করে ইউক্রেন। এছাড়া আরও কয়েকটি দেশে ভুট্টা উৎপাদিত হয়।
যেহেতু ইউক্রেন থেকে ভুট্টা সরবরাহ আসতে পারছে না সেজন্য বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। এর ফলে বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে।
সার আমদানিতে খরচ
বিশ্ববাজারে সিংহভাগ সার রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়া ও বেলারুশের ভূমিকা আছে। রাশিয়ার ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেবার ফলে সেটি বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে সার আমদানি করে। সেটি ব্যাহত হলে ভিন্ন কোনো উৎস দেখতে হবে। এতে করে খরচ বাড়বে কৃষি খাতে।
জ্বালানি তেলের দাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় মেটাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসছে বাজেটে জ্বালানি তেলের ভর্তুকির জন্য সরকারকে অনেক টাকা দিতে হবে। অন্যথায় তেলের দাম বাড়াতে হবে। আর তেলের দাম বাড়লে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে।