×

খেলা

দুই কোচের রেকর্ড ছোঁয়ার অপেক্ষায় সাকিব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২২, ১০:৪৪ পিএম

দুই কোচের রেকর্ড ছোঁয়ার অপেক্ষায় সাকিব

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে বৃহস্পতিবার ৯৬ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৯তম ফাইফার। ছবি: ভোরের কাগজ

ক্রিকেট বিশ্বে টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এক ও অনন্য। তিনি নিজেই তার বিকল্প। ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ দিকে এসেও নতুন কিছু করার অদম্য ইচ্ছে তাকে আরো অনন্য উচ্চতা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। দীর্ঘদিন পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের মধ্য দিয়ে সাদা পোশাকে মাঠে ফিরেছেন তিনি। চলতি সিরিজে ব্যাট হাতে আশানুরূপ সাফল্য না পেলেও বল হাতে সবাইকে অবাক করেছেন। ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসেও ঘূর্ণির জন্য নতুন সাকিবকে দেখেছেন ক্রিকেট ভক্তরা। অভিজ্ঞতায় পূর্ণ সাকিব এমনিতেই প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর।

সাকিবের প্রশংসা করতে গিয়েই একদিন আগেই টাইগার কোচ অ্যালান ডোনাল্ড বলেছেন, বিশ্বনন্দিত প্রোটিয়া ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স যেহেতু বলেছে সাকিবকে খেলা কঠিন, তাহলে তাকে মোকাবিলা করা আসলেই কঠিন। সেদিনই চলমান ঢাকা টেস্টে সাকিবের ফাইফার নিয়েও বলেছিলেন ডোনাল্ড।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) চতুর্থ দিনে ডোনাল্ডের সেই বাণীকেই বাস্তব রূপ দিয়েছেন সাকিব। ক্যারিয়ারের ১৯তম বার পাঁচ উইকেট লাভ করেছেন তিনি। এই রেকর্ডে নাম লেখাতে খেলেছেন মাত্র ৬১ ম্যাচ। এরই মধ্যে গড়েছেন অনন্য নজির। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার থেকে একটি করে ফাইফার বেশি নিয়ে উপরে আছেন সাবেক স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেটোরি ও বর্তমান পেস বিভাগের প্রোটিয়া কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। দুজনেই ২০টি করে ফাইফার নিয়ে সাকিব আল হাসানের উপরে অবস্থান করছেন। এই দুজনের মধ্যে ২০টি ফাইফার নিতে অ্যালান ডোনাল্ড খেলেছেন ৭২টি ম্যাচ ও ড্যানিয়েল ভেটোরি খেলেছেন ১১৩টি ম্যাচ। তাদের থেকে অনেক কম ম্যাচ খেলেই এই দুই কোচের রেকর্ডকে ছুঁইছুঁই করছে শিষ্যের পরিসংখ্যান। নিজের ক্যারিয়ারে আর তিনটি ফাইফার যোগ করতে পারলে স্পর্শ করবেন টাইগারদের আরেক কোচ কোর্টনি ওয়ালশকেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ বোলার ১৩২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২২টি ফাইফারের মালিক। শুধু ওয়ালশকেই নয়, পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুসের রেকর্ডকেও স্পর্শ করবেন সাকিব। আর চারটি ফাইফার নিতে পারলে নাম লেখাবেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ইমরান খানের পাশে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়মিত প্রতিযোগিতা করে যাওয়া এই স্পিনারই বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফাইফারপ্রাপ্ত বোলার। সাকিবের পরে ১০ বার ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন তাইজুল ইসলাম, আটটি ফাইফার নিয়ে তৃতীয় স্থানে মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাতটি ফাইফার নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছেন মোহাম্মদ রফিক। এ তালিকায় শীর্ষ চারে কোনো পেসার না থাকলেও ৪টি ফাইফার নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছেন সাবেক পেসার শাহাদাত হোসেন। টেস্টে সর্বোচ্চসংখ্যক বার ৫ উইকেট নেয়া বোলারদের তালিকায় সাকিব এখন ২৪তম। তার চেয়ে বেশিবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৩ জন বোলার। অবিশ্বাস্যভাবে ৬৭ বার ৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ৩৭ বার নিয়েছেন ৫ উইকেট। বর্তমানে পেসার ও স্পিনার মিলিয়েই ২৪তম স্থানে আছেন তিনি। তবে শুধু স্পিনারদের তালিকা করলে শীর্ষ দশে জায়গা করে নিবেন সাকিব। তার উপরে স্পিনারদের মধ্যে আছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন, শেন ওয়ার্ন, অনীল কুম্বলে, রবীচন্দ্র আশ্বিন, হারভজন সিং, ড্যানিয়েল ভেটোরিরা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ৫ উইকেট নেয়া হয়েছিল আগেই। শেষ উইকেটে জুটিও ভেঙেছে তার হাত ধরেই। মিড অফ থেকে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে আসিতা ফার্নান্দোকে রানআউট করে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস শেষ করে দিলেন সাকিব। প্রায় চার বছর আগে যে টেস্টে সাকিব ইনিংসে সর্বশেষ ৫ উইকেট পেয়েছিলেন, সেটিতেও শেষ উইকেটটি ছিল সাকিবের। ২০১৮ সালে কিংস্টন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। কিংস্টনে সেই টেস্টের আগে থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে একটু অনিয়মিত ছিলেন সাকিব। মাঝের সময়টায় বাংলাদেশ যে ২৪টি টেস্ট খেলেছে তার মাত্র সাতটি খেলেছেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজেও তার খেলা নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা ছিল। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রায় ছিটকে গিয়েছিলেন। তবে নিজের মনোবলে মাঠে ফিরেছেন তিনি।

টেস্ট ক্রিকেটে সাকিবের প্রথম ৫ উইকেট লাভ অভিষেকের বছরেই। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৩৬ রানে ৭ উইকেট এখনো তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং হয়ে আছে। সেই টেস্টের আগে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ দলের সে সময়কার হেড কোচ সাকিবকে স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে খেলানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

৭ নম্বরে ব্যাটিং করা সাকিব সেই ভূমিকার সার্থক রূপায়ণ করেছিলেন মাঠে। মাঝখানে এক টেস্ট বিরতি দিয়েই টানা তিন টেস্টে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। এরপর একই বছরের নভেম্বরে ব্লুমফন্টেইন ও সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরপর দুই ইনিংসে ৫ ও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের টেস্টেই আবার ইনিংসে ৫ উইকেট। এরপর টানা দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন আরো তিনবার।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ম্যাচে পাঁচ উইকেটে পেয়েছেন। এর পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের দুই ইনিংসে টানা দুবার পাঁচ উইকেট পেয়েছেন। ২০১৭ সালে মিরপুর টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংসে দুটি ফাইফার অর্জন করেছিলেন। সর্বশেষ ফাইফার মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃহস্পতিবার পেলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App